SC East BengalOdisha FC
January 3, 2021
3 - 1Full Time |
তোয়ালের সাথে সৌভাগ্যকে সঙ্গী করে নতুন বছরে উজ্জ্বল লাল-হলুদ
শতবর্ষে ইষ্টবেঙ্গলের পথচলাটা মোটেও মসৃন ছিলো না। ছেড়ে যাওয়া ইনভেস্টরের সাথে বিভিন্ন আইনি জটিলতা, আইলীগে শেষ মরশুমের বাজে খেলার রেশ, অতিমারীতে উদ্ভুত পরিস্থিতির জেরে আইএসেল খেলা নিয়ে দোলাচল সাথে শেষ মূহুর্তে তৈরী করা দল নিয়ে আইএসেল খেলতে নামা – কোন কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিলো না। আইএসেলে আধা প্রস্তুত দল নিয়ে খেলতে নেমেও দুর্ভাগ্য বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলো রবার্ট ফাওলারের কোচিংয়ে থাকা ইষ্টবেঙ্গলের দোসর হয়ে। প্রথম দুই ম্যাচেই চোট পেয়ে বেড়িয়ে যাওয়া দলের একমাত্র স্টপার অধিনায়ক ড্যানি ফক্সের। আরেক ব্যাক স্কট নেভিলের স্কুল ছাত্র সুলভ ভুল ফুটবল। মাট্টি স্টেইনম্যানের হঠাৎ হঠাৎ ভুল পাস। প্রচুর ওয়ার্কলোড নিয়েও মাঘোমা-পিলকিংটন জুটির দীর্ঘদিনের গোলখরা। পরবর্তীতে গোল পেলেও ডিফেন্সের সেই গোল ধরে রাখতে পারার ব্যর্থতা। জেজে, বলবন্ত দের মতো ভারতীয় তারকা ফুটবলারদের অতীতের ছায়া বনে যাওয়া। সব কিছু মিলিয়ে বহু পরিশ্রমের পরেও তিন পয়েন্টের দেখা পাওয়া হচ্ছিলো না রবার্ট ফাওলার ও তার ছেলেদের।
নতুন বছরের প্রথম ম্যাচ লীগটেবিলের নীচের দিকে থেকেই বাক্সটারের ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিলো ইষ্টবেঙ্গল। সাথে রাজু গায়কোয়াড় আর কিছু তোয়ালে। সাইডলাইনের বাইরে পড়ে থাকা তোয়ালে নিশ্চিত ভাবে ইষ্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে কিছু পুরনো সুখ স্মৃতির উদ্রেক করে। মাঠে লাল-হলুদের দাপটের স্মৃতি। এই মারাঠী রাজুই তোয়ালেতে বল মুছে লম্বা লম্বা থ্রো ছুঁড়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সে ত্রাসের সঞ্চার করতেন লাল-হলুদ জার্সী গায়ে। দিশেহারা হয়ে যেতেন উল্টোদিকের কোচেরা। সেই রাজু গায়কোয়াড় হাতে তোয়ালে নিয়ে বল মুছে থ্রো করলেন ওড়িশা এফসির বক্সে। বাক্সটার এবং তার ডিফেন্ডারেরা নিশ্চিতভাবে এই থ্রো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এই থ্রো তেই মাথা ছুঁইয়ে আইএসেলে গোলের খাতা খুললেন অসময়ে ইষ্টবেঙ্গল জনতার অন্যতম ভরসা অ্যন্থনি পিলকিংটন। সাইডলাইনে তোয়ালের সাথে ফিরলো ইষ্টবেঙ্গল জনতার মুখের হাসি।
এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাখির চোখ করেছিলেন ওড়িশা কোচ বাক্সটারও। রাজু গায়কোয়াড়ের থ্রো বক্সে ড্রপ পরে পিলকিংটনের হেড জালে জড়িয়ে যাবার পরপর ই বাক্সটারের ছেলেরা তীব্র আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। ইষ্টবেঙ্গল ডিফেন্সের বাঁদিকে বিকাশ জাইরু এই সময়টায় রুখে দাঁড়ালে ওড়িশার জেরি রা আক্রমনের এলাকা পাল্টে চলে আসে ডানদিকে রাজু গায়কোয়াড় এর দিকে। রাজু যে এখনো পুরো নব্বই মিনিট এক ই ছন্দে খেলার মতো পুরোপুরি ফিট নন, বাক্সটারের অভিজ্ঞ চোখে সেটা এড়ায়নি। তার ওপর ইষ্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে মিলন সিং এর ছন্নছাড়া আনফিট ফুটবল ডিফেন্সের ওপর তীব্র চাপ তৈরী করে। এই সময়টায় গোলের নীচে দেবজিত অপ্রতিরোধ্য না হয়ে উঠলে পুরো তিন পয়েন্ট হয়তো নতুন বছরেও অধরা থেকে যেত। সবচে সমালোচিত স্কট নেভিল ও এই সময়টাতে বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে জেরিদের বেশ কিছু আক্রমন আটকে দেন। এই তীব্র চাপের আবহেই ঠিক উনচল্লিশ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে মাত্তি স্টেইনম্যানের বাড়ানো বল অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে যান এ যাবৎ ইষ্টবেঙ্গল আক্রমনের প্রানভোমরা জ্যাক মাঘোমা। চকিতে বল পায়ে ঘুরে স্প্রিন্ট টেনে ওড়িশা বক্সে ঢুকে পড়ে শরীরের দোলায় দুজন ডিফেন্ডারকে ধরাশায়ী করে গোলার মতো যে শটটা নিলেন তাতে গোলরক্ষক আর্শদীপের মুগ্ধ হয়ে দেখা আর মনে মনে মার্কো ফান বাস্তেনের সাথে তুলনা করা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই করার ছিলো না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ওড়িশা আক্রমনের ঝাঁঝ আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়। বানের জলের মতো মিডল ও রাইট করিডরের দিক থেকে আনু, মৌরিসিও, আলেক্সান্ডার, জেরি রা আক্রমন তুলে আনতে থাকেন। মূহুর্মূহু আক্রমনে বারবার বেআব্রু হয়ে যেতে থাকে ইষ্টবেঙ্গল রক্ষন। রাজু, রফিক, নেভিল, ফক্স দের পরিশ্রম প্রাচীর তোলার বদলে খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে থাকে ওড়িশার আক্রমনের মুখে। মাত্তি স্টেইনম্যানকে কিছুটা দেখা গেলেও মিলন সিং মাঠে থেকেও পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যান। ভরসার হাত দেবজিত মজুমদার ও এসময়টায় বেশ কয়েকবার পরাস্ত হন। আনু, মৌরিসিও দের ভেদশক্তির খামতি আর কিছুটা ভাগ্যের জোরে বারবার রক্ষা পায় ইষ্টবেঙ্গলের দুর্গ। যদিও দমে না গিয়ে ওড়িশা আক্রমনের চাপ উত্তরোত্তর বাড়াতে থাকে।
ওড়িশার ভয়ঙ্কর চাপের মুখে রবার্ট ফাওলার গুটিয়ে না গিয়ে একের পর এক খেলোয়াড় পরিবর্তন করে পাল্টা চাপ বাড়ানোর চেষ্টা জারি রাখেন। যদিও হাওবাম তোম্বা সিং কে বিরতিতে তুলে নেওয়ার কারনটা স্পষ্ট নয়। একে একে রফিক, মিলন সিং, রাজু দের তুলে সুরচন্দ্র, হরমনপ্রীত, আঙ্গুসেনা, অঙ্কিতদের নামিয়ে দেন। উইং হাফ হিসাবে সুরচন্দ্র, ফরোয়ার্ড হিসাবে হরমনপ্রীত নিজের কাজটা করলেও সেটা ওড়িশার আক্রমনের গতি রুখতে তেমন কার্যকরী হচ্ছিলো না। একটা সময় ওড়িশার লাগাতার আক্রমনের সামনে বেআব্রু হয়ে যাওয়া ডিফেন্সের ওপর মাঝমাঠে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে স্টেইনম্যানের পাশে নেমে আসেন পিলকিংটন। এই সময়েই ফাওলার তার শেষ পরিবর্ত হিসাবে জ্যাক মাঘোমা কে তুলে মাঠে নামান সদ্য দলে যোগ দেওয়া ব্রাইট এনোবাখারে কে।
ম্যাচের নব্বই মিনিট শেষ হতে তখনো আঠারো মিনিট বাকি। আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ব্রাইট এনোবাখারে। মাঠে নেমেই খেলার নিয়ন্ত্রন নিজের কাছে নিয়ে নেন ব্রাইট। রিসিভিং-টার্নিং-টাচ্-পাসিং, জায়গা ধরা-জায়গা ছাড়া, একের পর এক বিপক্ষ খেলোয়াড়কে টপকে যাওয়া যাই করেছেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা মাঠে। ম্যাচের বাকি আঠারো মিনিট মাঠের ক্যানভাসে শিল্পীর তুলির টানের মতো একের পর এক মুন্সিয়ানার রেশ রেখে গেছেন। এই মুগ্ধতার রেশ ধরেই করে গেলেন নিজের প্রথম এবং দলের তৃতীয় গোলটা। সুরচন্দ্রের বক্সের ভেতর তোলা বল টা হরমনপ্রীত হেডে নামিয়ে দিলে অসামান্য দক্ষতায় গোলে শট নিলেও আর্শদীপের তৎপরতায় গোলে ঢোকার মুখ থেকে ফিরে আসা বলে সুরচন্দ্রের মাইনাস ঠান্ডা মাথায় ফাঁকা জায়গাতে ঠেলে দিয়ে গোল তুলে নেন ইষ্টবেঙ্গল সমর্থকদের আদরের “উজ্জ্বলদা”। খেলার শেষ লগ্নে ওড়িশা এক গোল শোধ দিলেও সেটা ইষ্টবেঙ্গল খেলোয়াড়দের গাছাড়া মনোভাব থেকেই হয়েছে।
বহুদিন পর ইষ্টবেঙ্গলে এরকম “এলাম-দেখলাম-জয় করলাম” কোন বিদেশীর আগমন ঘটলো। সদ্য বিশ্বকাপ খেলে আসা জনি একোস্তাকেও স্বমহিমায় বিরাজ করতে কিছু ম্যাচ সময় নিতে হয়েছিলো। ব্রাইট এনোবাখারে সেই সময় টুকুও নিলেন না। ফিটনেস ঠিক থাকলে ইষ্টবেঙ্গল সমর্থকদের অনেক উজ্জ্বল মূহুর্ত উপহার দেবেন ব্রাইট এই আশ্বাস মাঠে নেমেই জানান দিয়ে রাখলেন। এতোদিন পাঁচ জন খেলোয়াড় তুলে পাঁচজন খেলোয়াড় নামাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া ফাওলার পরের ম্যাচে পিলকিংটন, মাঘোমা, ব্রাইটের মধ্যে কাকে বাদ দিয়ে কাকে প্রথম একাদশে রাখবেন সেটাই সমর্থকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে। তবে রবার্ট ফাওলার ও তার দল, সমর্থকদের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছাটা জানালেন বেশ রাজকীয় ভাবেই।
Related
Results
Club | Goals | Outcome |
---|---|---|
SC East Bengal | 3 | Win |
Odisha FC | 1 | Loss |
Details
Date | Time | League | Season | Full Time |
---|---|---|---|---|
January 3, 2021 | 5:00 pm | Indian Super League | 2020 | 90' |
Ground
Tilak Maidan Stadium |
---|