২০২০ এমনই এক বছর, যেটা বোধহয় সারা বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষ ভুলে যেতে চাইবেন। এই বছরটা পৃথিবীকে যা দিয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা কি এই ব্যাপারে একমত হবেন? না মনে হয়। এই বছরই কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে শ্রী সিমেন্টের আর্থিক বিনিয়োগে ভারতের এক নম্বর টুর্নামেন্ট আইএসএলে খেলার সুযোগ পেয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব।
আইএসএলে প্রবেশ তো হলো। কিন্তু কোটি কোটি সমর্থকপুষ্ট প্রতিষ্ঠান কি কখনও শুধু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণেই খুশী হতে পারে? ইস্টবেঙ্গল জনতা কিন্তু তাঁদের প্রিয় ক্লাবকে জয়ের সরণিতে ফিরতে দেখতে চায়।
ওড়িশা এফসি:
নতুন বছরের শুরুটা জয় দিয়ে শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভালো মঞ্চ পাওয়া সম্ভব ছিল না রবি ফাউলারের ছেলেদের। প্রতিপক্ষ ওড়িশা এফসি সাত ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে লীগ টেবিলের সবচেয়ে নিচে। স্টুয়ার্ট ব্যাক্সটারের কোচিংয়ে ওড়িশা এখনও পর্যন্ত গোল হজম করেছে ১১টি, যার মধ্যে ৬টাই সেটপিস থেকে। গত ম্যাচে হায়দ্রাবাদ এফসির বিপক্ষে ডিফেন্সের চারজনই হলুদ কার্ড দেখেছেন, যার অর্থ একটু প্রেসিং ফুটবল খেললেই বক্সের আশেপাশে ফাউল করে ফেলছেন ওড়িশা এফসির ডিফেন্ডাররা। ইস্টবেঙ্গলের সেটপিস কোচ টেরি ম্যাকফিলিপস নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটা নজরে রাখছেন।
গোলকিপার আর্শদীপ সিং চার ম্যাচে ১৭টা সেভ দিয়েছেন। তাঁকে টপকে গোল করা সহজ হবে না মাঘোমা, পিলকিংটন, স্টেইনমান-দের পক্ষে। তাই সেটপিস থেকে দ্রুত গোল তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপাতেই পারে ইস্টবেঙ্গল।
ওড়িশার তুরুপের তাস ৩৩ বছর বয়সী উইঙ্গার মার্সেলিনহো। আইএসএলে ৬৯টা ম্যাচ খেলে ফেলা এই ব্রাজিলিয়ানের ঝুলিতে এখনও অবদি ৩১টি গোল এবং ১৮টি এসিস্ট আছে। ২০২০-২১ এ এখনও অব্দি গোলের মুখ না দেখা মার্সেলিনহো যে খাতা খোলার জন্য নড়বড়ে অবস্থায় থাকা ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সকেই পাখির চোখ করবেন, তা বলাই বাহুল্য।
এছাড়াও ওড়িশা এফসির ফরওয়ার্ড লাইনে আছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান দিয়েগো মৌরিসিও। ইতিমধ্যেই গত ৭ ম্যাচে ৩ গোল করে ফেলছেন তিনি।
ভারতীয়দের মধ্যে আলাদা করে নজরে রাখতেই হবে জেরি মাওইমিংথাঙ্গা, নন্দকুমার শেখরদের দিকে। সব মিলিয়ে, লীগ টেবিলের একদম নিচে থাকলেও ওড়িশা এফসিকে হালকা ভাবে নিলে ভুল করবে ইস্টবেঙ্গল।
ইস্টবেঙ্গল:
এবারে আসা যাক লাল-হলুদ ব্রিগেডের দিকে। জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডো খোলার পর গত দুদিনে ২২ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ব্রাইট এনোবাখারে এবং জোড়া দেশীয় ডিফেন্ডার অভিজ্ঞ রাজু গায়কোয়াড় এবং ইস্টবেঙ্গল একাডেমী থেকে বেরোনো প্রাক্তন এটিকে মোহনবাগানের খেলোয়াড় অংকিত মুখার্জিকে সই করিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। শিবিরের খবর, ওড়িশা এফসি ম্যাচে প্রথম একাদশে শুরু করতে পারেন চার মরশুম ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া রাজু গায়কোয়াড়। সেক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন ড্যানি ফক্সের সঙ্গে সেন্ট্রাল ব্যাকে জুটি বাঁধতে পারেন তিনি। স্কট নেভিল হয়তো তাঁর পুরোনো পজিশন রাইট ব্যাকে এ মরশুমে প্রথমবারের জন্য ফিরে যেতে পারেন।
ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে স্বস্তির খবর, নতুন বছরের প্রথম ম্যাচে নামার আগে মাঝমাঠেও অপশন বেড়েছে লিভারপুল লেজেন্ড রবি ফাউলারের হাতে। ম্যাটি স্টেইনমানের পাশে সিডিএম হিসেবে খেলার জন্য শেহনাজের পাশাপাশি তিনি পাচ্ছেন মিলন সিং এবং সদ্য ফিট হয়ে ওঠা লোকেন মিতাইকে। তবে প্রথম একাদশে শেহনাজ সিংয়ের শুরু করার সম্ভাবনাই বেশী।
তরুণ স্ট্রাইকার ব্রাইট এনোবাখারে সইসাবুদ সেরে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছেন, তবে ওড়িশা এফসি ম্যাচে তাঁর প্রথম একাদশে জায়গা হবে না বলেই মনে হয়। এন্টোনি পিলকিংটনের সঙ্গে হয়তো শুরু করবেন হায়দ্রাবাদ এফসির বিপক্ষে দুগোল করা মাঘোমা। পরে ম্যাচের সিচুয়েশন বুঝে ব্রাইটকে ব্যবহার করতে পারেন রবি ফাউলার।
কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে, শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো খোলার পর ইংলিশ ফুলব্যাক ক্যালাম উডসও সই করে ফেলেছেন ইস্টবেঙ্গলে। সেরকম হলে হয়তো চোটে ভোগা এরোন আমাদি হলোওয়ের উপরেই কোপ পড়তে চলেছে। তবে এবিষয়ে এখনও অবদি ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্ট স্পিকটি নট।
সব মিলিয়ে আইএসলের দ্বিতীয় দফার লেগ শুরু হওয়ার আগে যথাসম্ভব পয়েন্ট সংগ্রহ করে রাখতে চায় লাল হলুদ শিবির। আর তার জন্য ওড়িশা ম্যাচে তিন পয়েন্ট ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না রবি ফাউলার। আশা করা যেতেই পারে, রবিবারের বিকেলেই খরা কাটিয়ে আইএসএল ২০২০-২১-এর প্রথম তিন পয়েন্ট ঘরে তুলে বছরটা শুরু করবে ইস্টবেঙ্গল।