সালটা ১৯৮৬ …..সদ্য পা রেখেছি স্কুল এর আঙিনায়। ফুটবল জিনিসটা আস্তে আস্তে নেশা ধরানো শুরু করেছে। ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান নামগুলো ঘিরে গড়ে উঠছে আমার ছোটবেলা। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা জার্মানি ইতালি ইংল্যান্ড তখন সুদূরের স্বপ্ন। সেই ছোটবেলার রূপকথার দিনগুলোতে ঘোড়ায় চড়ে ঝড়ের এসে সব ওলোটপালোট করে দিয়ে গেলে তুমি। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। ফুটবলের রাজপুত্র। মেক্সিকো বিশ্বকাপ আক্ষরিক অর্থেই ছিল চাঁদের হাট। জিকো, সক্রেটিস ,প্লাতিনি, রুমেনিগে, বারেসি ,ফ্রান্সিসকোলি , লাউড্রপ কে ছিলেন না সেই সময়? কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ছিলে তুমি। মারাদোনা। রেলগাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে যেভাবে গাছ গুলো দূরে ছিটকে যায় সেভাবে ছিটকে যাচ্ছিলো ইংল্যান্ড এর ডিফেন্ডাররা। তোমার দেহের দোলায় দুলে উঠছিলো একটা গোটা শহর। গোটা পৃথিবী।
পরের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে গেলে তুমি। এখনো বিশ্বাস করি অন্যায় হয়েছিল সেদিন। পেনাল্টি ছিল না ওটা. তার পর ঈশ্বরের গায়েও কাদার ছিটে লাগলো। ড্রাগ বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে তুমি। মনের গভীরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল তোমার অসহায় মুখটা টিভির পর্দায় দেখে। আশা ছিল তুমি ফিরবে।ফিরবেই। সেই তুমি ফিরলে পরের বিশ্বকাপ এ। মনে হলো এই সেই পুরানো ম্যারাডোনা যাকে দেখে একটা শহরের অর্ধেক নীলসাদা রং ভালোবেসে ফেলেছিলো। তার পরেই ইন্দ্রপতন। ডোপিং বিতর্কে জড়িয়ে ছিটকে গেলে তুমি বিশ্বকাপ থেকে। আমার কাছে সেই বিশ্বকাপ সেদিনই শেষ হয়ে গেছিলো। কিন্তু তুমি যে নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেলে সে নেশা আজো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে আমাকে। ফুটবল। আমাদের সেই প্রজন্মর কাছে অনেক কিছু ছিল না। আমাদের স্মার্টফোন, ল্যাপ্টপ, হাতের মুঠোয় বিশ্ব , বিলাস সামগ্রী , দেওয়াল জোড়া টিভি কিচ্ছু ছিল না. কিন্তু আমাদের একটা মারাদোনা ছিল। আজ ও গর্ব করে বলতে পারি আমি মারাদোনা কে দেখেছি।
Image Source: AFA Facebook Page