ময়মনসিংহ গীতিকা

ময়মনসিংহ

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

ময়মনসিংহের ইতিহাস অতিশয় সমৃদ্ধ। উত্তরে গারো পাহাড়, দক্ষিণে ভাওয়াল মধুপুরের বনাঞ্চল, পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎসারিত যমুনার জল বেষ্টনী এবং পূর্বে সোমেশ্বরী তিতাস, সুরমা নদীর অববাহিকা অঞ্চল, প্রাকৃতিক প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত এই অঞ্চলকে বরাবরই একটি দুর্জেয় অঞ্চল হিসেবে দেখতে পাওয়া যেত। প্রাচীন পুঁথি ও লোকগাথার সঙ্কলন হিসেবে এর বহুল জনপ্রিয়তা আছে। বৌদ্ধ যুগে আমরা ময়মনসিংহ সম্পর্কে জানতে পারি। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে তখন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই ময়মনসিংহ। ৩০২ খ্রিস্টপূর্বের দিকে মেগান্থিনিস নামের এক গ্রীক পর্যটক এই ভারতবর্ষে আসেন। ইন্ডিকা নামের তাঁর রচিত বই থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে এই তথ্য জানা যায়। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বংগরাজ্য। গোড়ার দিকে ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর গড়সহ লালমাটির অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বংগরাজ্য। আলেকজান্ডারে আমল থেকে মোঘল সাম্রাজ্য পেরিয়ে নবাবী আমল, কোম্পানী আমল এবং শেষে পাকিস্তানি শাসন-শোষণে ময়মনসিংহও প্রভাবান্বিত হয়। জেলার নাম ময়মনসিংহ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। মহুয়া-মলুয়ার দেশ ময়মনসিংহের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। ১৭৭৯-তে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি বর্তমান ’ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সরকার বাজুহার পরগনা হিসাবে লিখিত আছে; যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা যায়। প্রচলিত আছে মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। অনেকে আবার সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহের নাম থেকে এই নাম এসেছে বলে মনে করেন।

ময়মনসিংহ দেশের প্রাচীনতম শহরগুলোর অন্যতম। বৃটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এ অঞ্চলের সাহসী মানুষের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার স্বীকৃতি রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে জলছত্র-মধুপুর, ভালুকা, ফাতেমা নগর (কালির বাজার)-এর প্রতিরোধ যুদ্ধ যেমন গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ তেলিখালির যুদ্ধ এবং ধানুয়া কামালপুরের যুদ্ধও। দীর্ঘকালের হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসনের ঐতিহ্য ময়মনসিংহকে সাংস্কৃতিকভাবে ধনাঢ্য করে গেছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যে লালিত হয়ে আসছে এই ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক বন্ধন। যেসব ব্যক্তিত্ব ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তাঁরা হলেন এখানকার জমিদারবর্গ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোক সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হয়েছে ঐতিহ্যে। স্বপ্নের নকশী কাঁথায় বোনা হয়েছে এখানকার বাস্তবচিত্রের কাহিনী। মহুয়া-মলুয়া থেকে জয়নুল আবেদীনের চিত্র হয়ে উঠেছে বিশ্বময় ময়মনসিংহের গৌরব গাঁথা। ঈশাখাঁর যুদ্ধ বা সখিনা-সোনাভানের কাহিনী বাতাসে ছড়ায় বীরত্বের হৃদয় ছোঁয়া বিরলপ্রভা। ময়মনসিংহ নামের বিস্তীর্ণ এ জনপদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের লীলাভূমি। রত্নগর্ভা এ জেলার প্রাণবন্ত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় এর নামের মাঝেই- My-men-sing অর্থাৎ আমার লোকেরা গান গায়। ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বহু ছবি এঁকেছিলেন। জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহুকুমার(বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা) কেন্দুয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে এ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাথে। তার স্মরণে কবি নজরুলের স্মৃতি বিজরিত বটতলাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। কবি নজরুল ছোট বেলায় এই বটগাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাতেন। কবি ত্রিশালের দরিরামপুর হাইস্কুলে পড়াশুনা করতেন। তাই তার স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় কবি’র নিজের নামে। ভাষা আন্দোলনে শহীদ আব্দুল জববার পাঁচুয়া, গফরগাঁও তে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুত্যুবরণ করেন। ডক্টর জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ১৯২০ সালে জন্মগ্রহন করেন ময়মনসিংহ সদরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের আবাসিক ভবনে থাকাকালে গুলিবিদ্ধ হন এবং ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। সন্তোষ ট্রফি নামকরণের উৎস কিন্ত এই ময়মনসিংহ তথা বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষ পৌরসভা জায়গাটা। মহারাজা মন্মথ রায় চৌধুরীর জন্মস্থান ” সন্তোষ ” এর নামানুসারে ট্রফিটির নামকরণ করা হয়।

প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশ লোকসাহিত্যের এক সমৃদ্ধ আধার। আর এই লোক সাহিত্যের অনন্য এক দৃষ্টান্ত ময়মনসিংহ গীতিকা। যার মাধ্যমে জানা যায় বাংলার লৌকিক জীবনের এক একটি অনন্য উপখ্যান। ময়মনসিংহ গীতিকার জন্মস্থান বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা এবং নেত্রকোনা জেলার কিছু অংশ। ময়মনসিংহ গীতিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড.দীনেশ চন্দ্র সেনের সম্পাদনায়। আর বইটি প্রকাশে সার্বিক সহযোগীতা করেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। বইটিতে মোট ১০ টি গীতিকা আছে। গীতিকা গুলি হল ১. মহুয়া, ২. মলুয়া, ৩. চন্দ্রাবতী, ৪. কমলা, ৫. দেওয়ান ভাবনা, ৬. দস্যু কেনারামের পালা, ৭. রূপবতী, ৮. কঙ্ক ও লীলা, ৯. কাজল রেখা, ১০. দেওয়ানা মদিনা। ময়মনসিংহ গীতিকার সাহিত্য মূল্য অসীম। গীতিকাগুলি প্রধানত নায়িকা প্রধান। মহুয়া পালার নায়িকা যখন জল আনতে নদীর ঘাটে যায় তখন নায়ক নদ্যার চাঁদের সাথে ভীরু প্রণয়ীর সসঙ্কোচ আত্মনিবেদনে চিরন্তন প্রেমের পরিবেশ পাওয়া যায়। অসাধারন ব্যঙমীয় তার প্রণয়ের প্রকাশ। যেমন-

‘‘জল ভর সুন্দরী কন্যা জলে দিছ ঢেউ ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।।’’

ময়মনসিংহ গীতিকার অধিকাংশ গীতিকায়ই প্রণয়মুলক। এতে গ্রামীণ প্রেমের বর্ণনা অপূর্ব রূমান্টিকতায় বর্নিত। কাজল রেখা, মহুয়া, মলুয়া, লীলা, চন্দ্রাবতী প্রভৃতি গীতিকার নায়িকাদের প্রেম ও ত্যাগের গভীরতা আমাদের মর্মকে স্পর্শ করে নিবিরভাবে। ময়মনসিংহ গীতিকার পালা গুলোর মাঝে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির অপূর্ব সম্মিলন পাওয়া যায়, যা চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী চেতনার পরিচয় বহন করে। বাংলার গ্রামীন মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দু:খ, প্রেম-বিরহের আখর গ্রন্থ ময়মনসিংহ গীতিকা। গ্রামের সহজ সরল যে মানুষের হাতে এত অপূর্ব সুন্দর সাহিত্য সৃষ্টি হয় সেই সকল লৌকিক কবির প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম।

এখানকার বহু স্থাপনায় প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর ছোঁয়া রয়েছে। আছে কালের সাক্ষী স্বরূপ ভগ্ন জমিদার বাড়ী। জমিদার মদন বাবুর বাগান বাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ময়মনসিংহ বা মোমেনশাহী জাদুঘর। শিল্প, সংস্কৃতি, সংগীত, নাট্যকলা বিকাশে ময়মনসিংহ অঞ্চলে জমিদারদের যে ভূমিকা ছিল, জাদুঘরে সংগ্রহিত শিল্প সামগ্রী তারই নজির। মু‌ক্তাগাছা, গৌরপুর, আঠারবাড়ি জমিদারদের আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী ও নির্দশন এই জাদুঘরে গেলে দেখতে পাওয়া যায়। রাজবাড়ীর জন্য হক বা মন্ডার লোভে আসতে হবে আপনাকে মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছা ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি দূরে অবস্থিত। মুক্তাগাছার মন্ডার সাথে সাথে বিখ্যাত তার রাজবাড়ী। প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর স্থাপিত এই রাজবাড়ীটি গোড়াপত্তন করেন জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী। ১৭২৫ সালের আগে মুক্তাগাছা রাজবাড়ীর আগের নাম ছিল বিনোদবাড়ী। আলীবর্দী খাঁ নবাবী লাভের পরে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী নিজ ক্ষমতায় তার নামে দিল্লী দরবার থেকে শাহী ফরমান এনে দিলে পুরষ্কার স্বরূপ নবাব তাকে এই বিনোদ বাড়ী জমিদারি দান করেন। জমিদারের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বগুড়ার অধিবাসী। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য প্রথম বগুড়া থেকে নৌকাযোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে ময়মনসিংহে আসেন। এশিয়ার বৃহত্তম- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ সদরে স্থাপিত। এশিয়ার বৃহত্তম- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ সদরে স্থাপিত। স্থানীয়ভাবে ময়মনসিংহ রাজবাড়ি শশীলজ নামে পরিচিত। বাগান, পুকুর ও মার্বেল পাথরে নির্মিত ঘাট, শ্বেতপাথরের ফোয়ারার সাথে গ্রীক দেবী ভেনাসের মুর্তি সহ শশীলজ আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। ঢাকা থেকে বেশি দূরে নয়, অথচ জানেন না অনেকেই।যেখানে হাজার হাজার গাছের দৃষ্টিনন্দন সৃজনে রাবার বাগান আর বন্য বানরের লুকোচুরি। ভালোলাগা এই বনটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুরে। ময়মনসিংহ শহরের অতি নিকটেই জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে ব্রহ্মপুত্রের দু’টি ধারা দু’দিকে বেশ কিছু দূর গিয়ে আবার একই ধারায় মিলিত হয়েছে। এর মাঝে তৈরি হয়েছে একটি বৃহৎ ব-দ্বীপের।এই দ্বীপটিকে সবাই ময়নার চর বলে বলে ডাকে। ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তগত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি সমৃদ্ধ এলাকা আঠারো বাড়ী। জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায়ের পরিত্যক্ত দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল জমিদার বাড়ি এখনও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে নিরব দাড়িয়ে আছে। চমৎকার কারুকার্যময় এ রাজবাড়ীটির বয়স প্রায় আড়াই শত বছর। শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া এলাকায় সারি সারি পাহাড় দিয়ে ঘেরা পানিহাটা ও তারানি গ্রামের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত অঞ্চল পর্যটকদের কাছে পানিহাটা-তারানি পাহাড় হিসেবে সুপরিচিত। তারানি পাহাড়ের উত্তরে রয়েছে মেঘের আবছা আবরণে ঢাকা ভারতের তুরা পাহাড়। তুরা পাহাড়ের দূরের টিলাগুলো যেন মেঘের রাজ্যের সাথে মিতালি করে চারপাশে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বিরিশিরিতে চীনামাটির পাহাড়, নীল জলের হ্রদ এছাড়াও সোমেশ্বরী নদী, রানীখং গির্জা এবং কমলা রানীর দীঘি ভ্রমণের জন্য আদর্শ জায়গা। সোমেশ্বরী নদীর তীরে কাশবন আর দূরের গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য বিরিশিরিতে আসা সকল ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে রাজার পাহাড়ের কাছে রয়েছে বিডিয়ার ক্যাম্প, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, কারিতাস এবং রাবার বাগান। রাজার পাহাড়ের উপর হতে দূরের ভারতের কিছুটা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অপরূপ প্রকৃতি ও বাবেলাকোনায় আদিবাসী জনপদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও জীবনধারা এখানে আগত দর্শনার্থীদের সমানভাবে আকর্ষণ করে। কাজীর শিমলা দারোগা বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহের মূল্যবান সম্পদ। এখানে কবি কাজী নজরুলের ইসলাম এদেশে প্রথম পদার্পণ ঘটেছিল।

সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আর বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠির এক জনপদ এ ময়মনসিংহ জেলা। ময়মনসিংহ জেলার গ্রামাঞ্চলে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতিপ্রাচীনকাল হতে এখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষ বিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপের বাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। বর্ষাকালে নদী বা বড় বড় খালগুলি যখন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বিখ্যাত মন্ডার স্বাদই আলাদা। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোঁপাল পালের মন্ডার দোকান রাজবাড়ী এর সামনেই। এই মন্ডা সুনাম সারা দেশের মানুষের কাছেই অতি সুপরিচিত। খেজুর গুরের সন্দেশ ও ছানার পোলাও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অগ্রহায়ন পৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে তেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠা ইত্যাদি।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

One Comment

  1. Tanmoy Das

    ময়মনসিংহ শব্দটি ব্যবহার না করে ” বৃহত্তর ময়মনসিংহ ” শব্দটি ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত ।
    ** সন্তোষ ট্রফি নামকরণের উৎস কিন্ত এই ময়মনসিংহ তথা বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষ পৌরসভা জায়গাটা ।
    মহারাজা মন্মথ রায় চৌধুরীর জন্মস্থান ” সন্তোষ ” এর নামানুসারে ট্রফিটির নামকরণ করা হয় ।

    তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ এর অন্তর্গত এবং বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ জেলা টাঙ্গাইল ।

    যার তাঁত শাড়ি জগৎবিখ্যাত , তাঁত শাড়ির পীঠস্থান বলা যেতে পারে ।

    আরেকটা হলো টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম , এটাও খুব বিখ্যাত মিষ্টি ।
    একটা গান প্রচলিত আছে , ” টাঙ্গাইলের চমচম, বগুড়ার দই , নাটোরের কাঁচাগোল্লা ।

    জাদুকর পি.সি.সরকারের জন্ম কিন্ত তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ তথা বর্তমান টাঙ্গাইল জেলায় ।

    এখানেই মির্জাপুর নামে জায়গায় দুটি জিনিস বিখ্যাত ।
    ১) ক্যাডেট কলেজ ফর বয়েজ
    ২) ভারতেশ্বরী হোমস পর গার্লস ( সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম মহিলা বোর্ডিং স্কুলে এন্ড কলেজ )

    যেটাকে মেঘনা নদী বললেন ওটা মেঘনা হবে না, ওটাকে যমুনা নদী বলে ( এর উপরেই ৪.৮ কিলোমিটার সুবিস্তৃত তৎকালীন সময়ে বিশ্বের দ্বাদশ দীর্ঘতম ব্রিজ ( বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ষষ্ঠ দীর্ঘতম ব্রিজ ) , যা #যমুনা_সেতু নামে পরিচিত।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.