পাপু গোমেজের (Papu Gómez) ৯ মিনিটে করা একমাত্র গোলে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করলো আর্জেন্তিনা। কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিলির (Chile national football team) বিরুদ্ধে আটকে যাওয়ার পর পরবর্তী দুই ম্যাচে ১-০ ব্যবধানে জিতে ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত গ্ৰুপ এ-র শীর্ষে লিওনেল স্ক্যালোনি-র (Lionel Scaloni) ছেলেরা। সামনের এক সপ্তাহ বিশ্রাম পাওয়ার পর আগামী মঙ্গলবার বলিভিয়ার (Bolivia national football team) বিরুদ্ধে ১ পয়েন্ট পেলেই কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের (Brazil national football team) মুখোমুখি হওয়া এড়াতে পারবেন আগুয়েরা-মেসিরা।
ভারতীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম একাদশে ছয়টি পরিবর্তন আনেন স্ক্যালোনি। বিশেষত আপফ্রন্টে লাউতারো মার্টিনেজ (Lautaro Martínez) এবং নিকোলাস গঞ্জালেজ-কে (Nicolás González) বসিয়ে পাপু গোমেজের সঙ্গে স্ক্যালোনি নামান ৩৩ বছর অভিজ্ঞ সার্জিও আগুয়েরো-কে, যিনি ১০ বছরের ম্যানচেস্টার সিটি-র (Manchester City F.C.) কেরিয়ারে ইতি টেনে এই মরসুমেই যোগ দিয়েছেন বার্সেলোনায় (FC Barcelona), মেসির সতীর্থ হয়ে। সঙ্গে প্রথম থেকেই আর্জেন্তিনার কোচ নামান আরেক অভিজ্ঞ ফুটবলার এঞ্জেল ডি মারিয়া-কে (Ángel Di María)।
গত ১৬ ম্যাচে আর্জেন্তিনা অপরাজিত থাকলেও এই ম্যাচে সেইভাবে আধিপত্য রেখে খেলতে পারেনি আর্জেন্তিনা। বেশ ফ্যাকাসেই লাগলো তাঁদের। উল্টোদিকে গোটা ম্যাচে আর্জেন্তিনার চেয়ে বেশি বল পজিশন রাখলেও সেইভাবে গোলের মুখ খুলতে পারেনি প্যারাগুয়েও (Paraguay national football team)। প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে গত চার ম্যাচে জিততে না পারা আর্জেন্তিনা বেশ ইতিবাচকভাবেই শুরু করে আজকের ম্যাচ।
প্রথমার্ধে গোলটা বাদে বলার মতো আর্জেন্তিনার (Argentina national football team) প্রাপ্ত সুযোগ তিনটে। ম্যাচের শুরুতেই ৭ মিনিটের মাথায় প্যারাগুয়ের ডিফেন্সের ভুল বোঝাবুঝিতে বক্সের ভিতরে বল ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে না পারায় সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান নভেম্বর ২০১৯-এর পর প্রথমবার আর্জেন্তিনার প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া সার্জিও আগুয়েরো (Sergio Agüero)। কিন্তু গোলকিপারকে একা পেয়েও বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। এছাড়া ১৮ মিনিটের মাথায় লিওনেল মেসির একটি অনবদ্য ফ্রি-কিক খুব অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রসঙ্গত, আজই নীল-সাদা জার্সি গায়ে নিজের ১৪৭-তম ম্যাচ খেলে আর্জেন্তিনার হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার জাভিয়ার মাসচেরানো-র (Javier Mascherano) রেকর্ড স্পর্শ করলেন মেসি।
তবে ম্যাচের ৯ মিনিটে একমাত্র গোলটি করে আর্জেন্তিনাকে পুরো তিন পয়েন্ট এনে দেন পাপু গোমেজ (Alejandro Darío Gómez)। এঞ্জেল ডি মারিয়া বক্সের মধ্যে পাস বাড়ালে ফাঁকায় বল পেয়ে প্যারাগুয়ের গোলকিপারের পাশ দিয়ে হালকা চিপ করে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি আর্জেন্তিনার হয়ে নিজের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে নামা ৩৩ বছর বয়সী গোমেজ (১-০)। দেশের হয়ে এটি তাঁর দ্বিতীয় গোল।
প্রথমার্ধের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অফসাইডের জন্য আর্জেন্তিনার একটি গোল বাতিল হওয়া। ইনজুরি টাইমে ডানদিক থেকে ভেসে আসা পাপু গোমেজের ক্রস ঠিক করে ক্লিয়ার করতে না পেরে নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দেন প্যারাগুয়ের ডিফেন্ডার জুনিয়র আলোন্সো (Júnior Alonso)। কিন্তু ভার চেকে দেখা যায় ডি মারিয়া যখন প্রথম শটটি নিয়েছিলেন তখন মেসি অফসাইডে ছিলেন। ফলে দুর্ভাগ্যবশত গোলটি বাতিল হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে বেশ ভালোই শুরু করে প্যারাগুয়ে। আর্জেন্তিনার ডিফেন্সের উপর চাপ বাড়িয়ে প্রথম পনেরো মিনিটে চারটে কর্নারও আদায় করে নেয় তারা। কিন্তু সেখান থেকে কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি এডুয়ার্ডো বেরিজ্জোর (Eduardo Berizzo) ছেলেরা। প্রসঙ্গত, কোপায় গত ২৫ ম্যাচে ৯০ মিনিটে খেলায় আর্জেন্তিনাকে হারাতে পারেনি প্যারাগুয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে আর সেভাবে কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। ম্যাচটা বেশিরভাগ সময়ে মাঝমাঠেই সীমাবদ্ধ থাকায় সেইভাবে নিশ্চিত গোলের সুযোগও তৈরী করতে পারেনি দুপক্ষই।
ম্যাচের আগে শোনা গিয়েছিলো, নকআউটের কথা মাথায় রেখে এই ম্যাচে হয়তো বিশ্রাম নেবেন লিওনেল মেসি। কিন্তু বাস্তবে গোটা ৯০ মিনিটই খেললেন তিনি। তবে হয়তো ক্লান্তির জন্যই আজ সেরকম সপ্রতিভ লাগলো না তাঁকে। সবমিলিয়ে, নূন্যতম ব্যবধানে হলেও এই জয়ের ফলে নিজেদের ১৫-তম কোপা জয়ের দিকে আরও একধাপ এগোলো আর্জেন্তিনা।