ফুটবল অনুরাগীদের জন্য এ যেন সোনায় সোহাগা। করোনা আবহে একবছরের উপর পিছিয়ে যাওয়ার পর মাত্র দুদিন আগেই শুরু হয়েছে ইউরো কাপ ২০২০ (UEFA EURO 2020)। ঠিক ৫০ ঘন্টার ব্যবধানে এবার শুরু হতে চলেছে ফুটবলের আরেক মেগা ইভেন্ট কোপা আমেরিকা ২০২১ (Copa America 2021)। আর টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নামতে চলেছে এই বছর শেষমুহূর্তে কোপা আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়া ব্রাজিল। খেলা শুরু ভারতীয় সময় রবিবার রাত ২:৩০ টায়।
এবারের কোপা ঘিরে এমনিতেই বিতর্কের শেষ নেই। প্রথমত, গত ৬ বছরে এই নিয়ে ৪ বার কোপা আমেরিকা আয়োজিত হতে চলেছে। একটি মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট এত ঘনঘন হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীদেরই একাংশ কিছুটা বীতশ্রদ্ধ। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে এত বড় একটা প্রতিযোগিতার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে এবং একঘেয়েমি এসে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, করোনার কারণে গতবছর জুনমাসে কোপা আমেরিকা বাতিল হওয়ার পরে এই বছরের জুন-জুলাই মাসে প্রতিযোগিতা আয়োজনের যুগ্ম দায়িত্ব পেয়েছিলো আর্জেন্টিনা (Argentina) এবং কলম্বিয়া (Colombia)। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর জন্য মাত্র একমাস বাকি, তখন দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসাত্মক প্রতিবাদ চলার ফলে কলম্বিয়াকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। তারসাথে করোনার প্রকোপও বাড়তে শুরু করে কলম্বিয়ায়।
এরপর টুর্নামেন্ট আয়োজনের গুরুদায়িত্ব এককভাবে আর্জেন্টিনার কাঁধে এলেও সেখানেও ঘটে বিপত্তি। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের ধাক্কায় নাজেহাল অবস্থা সেদেশে। পুরো দেশ চলে গেছে লকডাউনে। ফলে এইমুহূর্তে সেখানেও কোপা আয়োজন সম্ভব নয়।
অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা কোপার শেষমুহূর্তের ত্রাতা হয়ে দেখা দেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো (Jair Bolsonaro)। মূলত তাঁর উদ্যোগেই শুরুর মাত্র দুসপ্তাহ আগে প্রতিযোগিতা স্থানান্তরিত হয় ব্রাজিলে। ঠিক হয় দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে প্রতিটি ম্যাচ। এদিকে করোনা পরিস্থিতি মোটেও অনুকূল নয় ব্রাজিলে। এখনও অবদি ৪,৬৩,০০০-এরও বেশী মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, সংখ্যার বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই যা দ্বিতীয়। স্বভাবতই অনেকের মতে এই মুহূর্তে ব্রাজিলে কোপা আয়োজন বিলাসিতা তো বটেই, এমনকি টিমগুলোর জন্য বিপজ্জনকও বটে। এমনকি গত সপ্তাহে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর ব্রাজিলের হেড কোচ তিতে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, কোপাতে তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন কিনা, সেই নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে।
তবে যাই হোক, সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শেষমেশ সাম্বার ঝলক দেখিয়ে সারা বিশ্বের অগণিত অনুরাগীদের মুখে হাসি ফোটাতে প্রস্তুত নেইমাররা। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা যে এবারেও ফেভারিট হিসাবেই টুর্নামেন্টে নামতে চলেছে, তা ব্রাজিলের দলের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে।
গোলে গত প্যারাগুয়ে ম্যাচে খেলা এডারসনের (Ederson) পরিবর্তে অ্যালিসন বেকারের (Alisson Becker) নামার সম্ভাবনা বেশী। ডিফেন্সকে নেতৃত্ব দেবেন চেলসিতে (Chelsea F.C.) খেলা থিয়াগো সিলভা (Thiago Silva)। তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন পিএসজিতে (Paris Saint-Germain F.C.) নেইমারের সতীর্থ মারকুইনোস (Marquinhos)। এছাড়াও স্কোয়াডে থাকা রিয়েল মাদ্রিদের (Real Madrid) তরুণ সেন্টার ব্যাক এডের মিলিতাও-কেও (Eder Militao) প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন তিতে।
কোভিড সংক্রান্ত সমস্যায় সাইড ব্যাক হিসেবে প্রথম ম্যাচে জুভেন্তাসের সতীর্থ অ্যালেক্স সান্দ্রো-কে পাবেন না ড্যানিলো। ফলে রেনান লোডির সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন তিনি। পরিবর্ত হিসেবে আসতে পারেন রিয়েল বেটিসে খেলা এমারসন।
মাঝমাঠে ক্যাসামিরো (Casemiro) থাকছেনই। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন ফাবিনহো (Fabinho) অথবা ফ্রেড। শনিবারই তিতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ফরোয়ার্ডে তিনি নামাতে চলেছেন গ্যাব্রিয়েল জেসাস (Gabriel Jesus), রিচার্লিসন (Richarlison) এবং নেইমারকে (Neymar Jr.)। এছাড়াও অফফর্মের দরুন প্রথম ম্যাচে বসতে হচ্ছে লিভারপুলে (Liverpool F.C.) খেলা রবার্তো ফার্মিনহো-কে (Roberto Firmino)। দলে আসবেন লুকাস প্যাকেতা (Lucas Paquetá)। মাঝমাঠে শুরু করবেন তিনি। শেষমুহূর্তে কোনও চমক না থাকলে মোটামুটি এরকমই হতে চলেছে ব্রাজিলের প্রথম একাদশ।
প্রথম ম্যাচে শক্তিধর ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলার (Venezuela) অবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে। গতকালই স্কোয়াডের ৮ জন খেলোয়াড়ের করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, যা টিমের প্ল্যানিংয়ের দিক থেকে তো বটেই, মানসিকভাবেও খুব বড়ো আঘাত। তড়িঘড়ি ১৫-জন নতুন ফুটবলারকে ডাকা হলেও কোচ হোসে পেসেইরো (José Peseiro) নিজেও জানেন না, ম্যাচ শুরুর আগে কাদেরকে তিনি হাতে পাবেন। এমনকি কোচিং স্টাফদের মধ্যেও তিনজন কোভিড পজিটিভ। যদিও ভেনেজুয়েলার ফেডারেশন কোনও নাম প্রকাশ্যে আনেনি। ফলে টিম নামানোই এখন ভেনেজুয়েলার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যাই হোক, দুর্বল টিম নিয়েও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে উপভোগ্য ম্যাচ উপহার দিতে মরিয়া। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও কোপা নিয়ে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।
টুর্নামেন্টের অপর ফেভারিট আর্জেন্টিনা (Argentina national football team) মাঠে নামছে ১৫ই জুন রাত আড়াইটায়, চিলির (Chile) বিরুদ্ধে।
ভারতীয় দর্শকরা কোপার প্রতিটি ম্যাচই দেখতে পাবেন ইংরেজিতে সোনি টেন-২ (Sony Ten 2)-তে, বাংলায় সোনি সিক্সে (Sony Six) এবং অনলাইনে সোনি লিভ (SonyLIV) আর জিও টিভি (Jio TV) অ্যাপের মাধ্যমে।