অক্লান্ত কান্তের সৌজন্যে চেলসী জিতে নিলো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নীল ফাইনাল

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

টমাস তুশেলের (Thomas Tuchel) উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল। উল্টোদিকে স্পেনীয় কিংবদন্তি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা (Pep Guardiola) ২০১০-১১ মরসুমে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন করার পর দশ বছর বাদে খেলতে নেমেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল (UEFA Champions League)। তুশেলের ছিল প্যারিস সাঁ-জাঁ-র প্রত্যাখানের পর জবাব দেবার পালা। আর পেপের ছিল মিউনিখ থেকে ম্যানচেস্টারের ট্রফির সমুদ্রের মাঝে নিখোঁজ সেই মহাদেশীয় মুকুট ফিরে পাবার তাগিদ। দুরো নদীর তীরের পোর্তো শহরে (Porto) ভীড় জমিয়েছিলেন হাজারো ব্রিটিশ ফুটবল প্রেমী। কোভিড পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবার আশা এবং ফুটবল দর্শক হিসেবে ব্রিটিশদের ‘খ্যাতির’ খাতিরে কোভিড সংক্রমণের ভয়ের পাশাপাশি পর্তুগীজদের উৎসাহ ছিল হালকা নীল জার্সি পরিহিত দুই ভূমিপুত্র বার্নার্ডো সিলভা (Bernardo Silva) এবং রুবেন ডায়াজের (Rúben Dias) হাতে ট্রফি উঠবে কিনা তা নিয়ে। এস্তাদিও দো দ্রাগাওতে (Estádio do Dragão) তাদের ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি।

দু দলে সব মিলিয়ে সাতজন ব্রিটিশ খেলোয়াড়, তিন জন চেলসিতে (Chelsea F.C.) আর চার জন ম্যানচেস্টার সিটিতে (Manchester City F.C.)। তারা ইউরো কাপের (UEFA EURO 2020) আগে নিজেদের প্রত্যয় বাড়িয়ে নেবার মহড়ায় নেমেছিল। এমনিতেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের দলগুলিতে বিদেশী খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি। তবে বেশ কয়েকজন অনূর্ধ্ব পঁচিশ খেলোয়াড় একসাথে উঠে আসায় ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

এনগেলো কান্তের (N’Golo Kanté) ক্লান্তিহীন কর্মক্ষমতা চেলসির জিয়নকাঠি। মাঝমাঠে তাঁর উপস্থিতি দুটো দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিলো। তবে কি শুধু মাঝমাঠ? সিটির কাউন্টার এট্যাকের সময় দ্রুত নেমে আসা বা আক্রমণের সময় বিপক্ষ বক্সে পৌঁছে হেড করা সব ক্ষেত্রেই কান্তের প্রত্যক্ষ অবদান। একে তো এত দ্রুত গতির হোল্ডিং মিডফিল্ডার, তার উপর টিমো ওয়ার্নার (Timo Werner), ম্যাসন মাউন্ট (Mason Mount) এবং কাই হ্যাভর্ৎজের (Kai Havertz) দৌড়গুলো পেপ গুয়ার্দিওলার রক্ষণকে ক্রমাগত বিব্রত করে গেছে।

কান্তের চওড়া কাঁধে ভর দিয়েই ট্রফি জিতলো চেলসি

প্রথমার্ধে জার্মান ফরওয়ার্ড একাধিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারায় প্রথম গোলের জন্য থাকায় ঘন নীল জার্সিধারীদের অপেক্ষা করতে হয় বিয়াল্লিশ মিনিট পর্যন্ত। মাউন্টের বুদ্ধিদীপ্ত বল হতভম্ব মাচেস্টার সিটির রক্ষণভাগ পেরিয়ে যখন হ্যাভর্ৎজের কাছে পৌঁছয় তখন এডার্সন (Ederson Moraes) গোল ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে। একটা টোকায় ব্রাজিলীয় গোলকিপারকে কাটিয়ে বাইশ ছুঁই-ছুঁই জার্মান ফাঁকা গোলে বল ঠেলে জীবনের প্রথম বড়ো ট্রফি জিতে নেয়। ইউরো কাপের বিভীষিকাময় গ্রুপ-এফ-এ খেলতে নামার আগে জোয়াকিম লো-কে (Joachim Löw) ওয়ার্নারের ফর্ম চিন্তায় রাখলেও, কাই হ্যাভর্ৎজ তার মনোবল বাড়িয়ে দিলো।

চেলসি (Chelsea F.C.) গোটা ম্যাচটাই পরিকল্পনা মাফিক শৃঙ্খলাবদ্ধ একটি ফুটবল খেলেছে। অত্যধিক আতিশয্য নেই, প্রত্যেকে শুধু নিজের কাজটা মন দিয়ে করে গেলো। ম্যাচের ৩৯ মিনিট অভিজ্ঞ ব্রাজিলীয় সেন্টার ব্যাক তিয়াগো সিলভা (Thiago Silva) বসে যাওয়া সত্বেও, ভীত নড়ে যায়নি কখনোই। ড্যানিশ পরিবর্ত খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানসেন (Andreas Christensen), স্পেনীয় দলনেতা আজপিলিকুয়েতা (César Azpilicueta) এবং জার্মান আন্তোনিও রুদিগারের তিন সদস্যের রক্ষণ দিব্যি সামলেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ জয়ীদের। রিসে জেমস (Reece James) রহীম স্টার্লিংকে (Raheem Sterling) কখনোই স্বচ্ছন্দে থাকতে দেয়নি। ম্যানচেস্টার সিটিতে প্রকৃত গোল করার লোক নেই। তবে সেটা তাদের কখনোই দুর্বলতা হয়ে ওঠেনি। তবে আজ কেভিন দে ব্রুইনে ফিকে থাকায় রিয়াদ মাহরেজ বারবার এক হয়ে পড়ছিলো। গুনদোহান (İlkay Gündoğan) শুরুর থেকেই অপরিচ্ছন্ন। গোড়ার দিকেই বেশ কয়েকটা খুচরো ফাউল করে শেষমেশ ৩৪ মিনিটেই হলুদ কার্ড দেখে আরো হারিয়ে যায় খেলা থেকে। তার উপর বার্নার্ডো সিলভাও ছিল চুপচাপ। সেনেগালীও দীর্ঘকায় গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেনডিকে খুব একটা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়নি কখনোই।

দ্বিতীয়ার্ধে চেলসি রক্ষণাত্মক হয়ে যায়। আন্তোনিও রুদিগারের (Antonio Rüdiger) সাথে সংঘর্ষে কেভিন দে ব্রুইনে (Kevin De Bruyne) দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চোখের নিচে চোট পাওয়ায় ষাট মিনিটের মাথায় মাঠ ছাড়েন। বেলজিয়ান প্লেমেকারের পরিবর্তে নাম গ্যাব্রিয়েল জেসুস (Gabriel Jesus) এবং তার খানিক পরেই সিলভার জায়গায় মাঠে আসে ফার্নান্ডিনহোও (Fernandinho)। সিটির খেলায় ধার বাড়ে।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো কেভিন ডে ব্রুইনকে

ওয়ার্নারের জায়গায় নেমে পুলিসিচ (Christian Pulisic) চেলসিকে এগিয়ে দেবার সুযোগ পেলেও এডার্সন তৎপরতার সাথে গোলমুখ ছোট করে দেওয়ায় ম্যানচেস্টার খেলায় ফেরার আশা বাঁচিয়ে রাখে। যদিও আশি মিনিটের মাথায় কোভাসিচের (Mateo Kovačić) অন্তর্ভুক্তি চেলসিকে মাঝ মাঠে খেলা ধরতে এবং সিটিকে হতাশ করতে সাহায্য করে। রিয়েল মাদ্রিদের প্রাক্তন খেলোয়াড়ের এই নিয়ে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যেটা হয়ে গেলো। ওয়াকারের মুহুর্মুহু লম্বা থ্রো, ফিল ফডেন (Phil Foden) আর মাহরেজের লড়াই পায়ের জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছিলো। খেলা যত শেষের দিকে ছিপছিপে চেহারার তুশেল তখন দুহাত নাড়িয়ে চেলসির সমর্থকদের মধ্যে স্টামফোর্ড ব্রিজের উত্তেজনার বারুদে আগুন দিচ্ছেন।

মাহরেজের (Riyad Mahrez) শেষ মিনিটের একটি ভলি বারপোস্টের কোণা ঘেষে যখন নেটের পিছনে ঝুলে পড়লো, ম্যানচেস্টার সিটির বাচ্চা-বুড়ো সমর্থকদের কান্নাভেজা চোখগুলো নিচু হলো এই বছরের মতো। শেষের মিনিট বিশেক সার্জিও আগুয়েরো (Sergio Agüero) খেললেও তাঁর ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতার স্বপ্ন পূরণ হলোনা।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.