ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন (Christian Eriksen)। ইউরো-২০২০ (Euro-2020)-এর সবচেয়ে আলোচিত নাম। সফল অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন কয়েক ঘন্টা আগেই। কোপেনহেগেনের (Copenhagen) মাঠে হার্ট অ্যাটাকের ঠিক ছয় দিন পরে। ওনার হৃদপিন্ডে ‘হার্ট ডিফ্রিবিলেটর’ (Heart Defibrillator) বসবে। এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটি হৃদযন্ত্রের হালচাল নিরীক্ষণ করবে। শুধু দুর্ভাগ্য, ২৯ বর্ষীয় ড্যানিশ মিডফিল্ডার হয়তো আর কোনও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে পারবেন না।
আয়াক্স আমস্টারডামের (Ajax Amsterdam) হয়ে সিনিয়র কেরিয়ার শুরুর পরে দীর্ঘ সাত মরশুম টটেনহ্যাম হটস্পারের (Tottenham Hotspur) হয়ে দাপিয়ে খেলেন এরিকসেন। ২০১৯-২০-এর মধ্যভাগে যোগ দেন সিরি -আ-র (Serie-A) দল ইন্টার মিলানে (Inter Milan)। দেশের হয়ে ১০৯ ম্যাচে ৩৬ গোল করা এরিকসেন বরাবর ছিলেন ‘ড্যানিশ ডায়নামাইট’ (Danish Dynamite)-দের নয়নের মণি। ২০১০ এবং ২০১১ সালে ডেনমার্কের (Denmark) ‘ট্যালেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ (Talent of the Year) নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে হল্যান্ডেও (Holland) ‘ট্যালেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পান। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে ‘ড্যানিশ ফুটবল প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৬-১৭ সিজনে টটেনহ্যামের সেরা খেলোয়াড় সন্মান লাভ করা এহেন ক্রিস্টিয়ান বড্ডো তাড়াতাড়ি ফুটবল থেকে বিদায় নিতে চলছেন।
জেন্স ক্লেইনফেল্ড (Jens Kleinfeld), জার্মান এমার্জেন্সি ডাক্তার, যিনি স্টেডিয়াম থেকে মাঠের ভিতরে পৌঁছে যান এরিকসনের চিকিৎসার স্বার্থে, বলেন যে বৈদ্যুতিক শকের পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তারপর ইংরাজীতে এরিকসন বলেন, ‘আমার মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়েস’।
তবে তাকে যে তার দেশ ভুলবেনা তার এক মর্মস্পর্শী ছবি ফুটে উঠেছিল বেলজিয়াম (Belgium) বনাম ডেনমার্কের খেলার দশ মিনিটে। ক্রিস্টিয়ানের উদ্দেশ্যে তখন শুভেচ্ছা বার্তায়, মাঠে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের এক মিনিট ব্যাপী হাততালিতে ভরে উঠেছিল লাল পারকেন (Parken) স্টেডিয়াম। প্ল্যাকার্ড হাতে বেলজিয়ান সমর্থকরা তাদের ভালোবাসা জানাতে ভোলেন নি। প্রতিটা করতালি যেন ছিল এরিকসেনের হৃদস্পন্দনের জোর বাড়িয়ে দেবার প্রয়াস। ইন্টার মিলানের চ্যাম্পিয়ন হবার পিছনে নায়ক রোমেলু লুকাকু (Romelu Lukaku) তাঁর গোল তৈরীর কারিগরের সুস্থতা প্রার্থনায় বারবার আবেগঘন হয়ে পড়েছিলেন। দুর্ঘটনার দিন পরবর্তী ম্যাচেই লুকাকু গোল করে ক্যামেরার দিকে ছুটে গিয়ে তাঁর সতীর্থকে বার্তা পাঠান “আই লাভ ইউ ক্রিস্টিয়ান”।
বৃহস্পতিবারের ম্যাচে দশ নম্বর লাল জার্সি পরে হাজারো মানুষ ভিড় করেছিলেন দেশের সমর্থনে। তবে তার থেকেও বেশি যেন হাসপাতালে চিকিৎসারত এরিকসনের মনোবল বাড়াতে। ম্যাচ শুরুর প্রাক্কালে এরিকসেনের সুবিশাল দশ নম্বর জার্সি উন্মোচিত মাঠের মাঝখানে। হাসপাতাল থেকে দলের সাথে দেখা করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এরিকসেন তার প্রতি ফুটবল বিশ্বের শুভেচ্ছাবার্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে ভোলেন নি।
চিকিৎসাশাস্ত্র যাই বলুক, ফুটবলবিশ্ব চায় তুমি তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরে এসো বল পায়ে আগের মতো গোল করতে এবং গোলের সুযোগ সাজিয়ে দিতে।