টানা ৯টি ম্যাচে জয়। ১৫ই নভেম্বর ২০১৯-এ শেষবারের মতো হেরেছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার (Argentina national football team) কাছে। তারপর থেকে আর রোখা যায়নি ব্রাজিলকে (Brazil national football team)। ভারতীয় সময় শুক্রবার ভোরেও তার অন্যথা হলো না। পেরু (Peru national football team) লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্রাজিলের এই টিম গুণগত মান আর অভিজ্ঞতার নিরিখে কয়েক যোজন এগিয়ে।
অ্যালিসন বেকার (Alisson Becker), মারকুইনোস (Marquinhos), ক্যাসেমিরো (Casemiro), রিচার্লিসন, ফার্মিনহো (Roberto Firmino), প্যাকেতা (Lucas Paquetá), ভিনিসিয়াস জুনিয়র (Vinícius Jr.) – একঝাঁক তারকাকে প্রথম দলে না রেখেও হাসতে হাসতে ম্যাচ বের করে নিলেন ব্রাজিলের কোচ তিতে। এর আগে ব্রাজিলের কোচ ছিলেন অধিনায়ক হিসাবে ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপ জেতা দুঙ্গা। ২০১৬-তে তাঁকে সরিয়ে তিতে কোচ হয়ে আসার পর ৫৫ ম্যাচে ৪১ টি জয় পেয়েছে ব্রাজিল। যদিও ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিতে হয় তিতে-র ব্রাজিলকে।
ম্যাচ শেষে স্কোরলাইন ৪-০ দেখালেও খেলা কিন্তু মোটেও সেভাবে একপেশে হয়নি। বিশেষত প্রথমার্ধে। ১২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল পায় ব্রাজিল। বাঁদিক থেকে ভেসে আসা এভার্টনের (Everton Soares) ক্রস পেরুর ডিফেন্স পুরোপুরি ক্লিয়ার না করায় বল এসে পরে গ্যাব্রিয়েল জেসাসের (Gabriel Jesus) পায়ে। মাইনাস থেকে তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ান সাইডব্যাক অ্যালেক্স সান্দ্রো (১-০)।
পেরু সেইভাবে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্স ত্রাসের সঞ্চার না করতে পারলেও প্রথমার্ধে বল পজিশন তাদেরই বেশি ছিল। ফার্স্ট হাফে পেরুর বলার মতো আক্রমণ একটাই – ম্যাচের ৩৯ মিনিটে মাঝমাঠে সান্দ্রোর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ফিরতি আক্রমণ শুরু করে পেরু। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁদিকে বাড়ানো বলে পেরুর স্ট্রাইকার কুয়েভা শট নিয়েও বুক দিয়ে বাঁচিয়ে দেন ড্যানিলো (Danilo)।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে পেরু ডিফেন্স রীতিমতো বুলডোজার চালান নেইমার, রিচার্লিসনরা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট বলের দখল পুরোপুরি ব্রাজিলের পায়েই ছিল। ফলস্বরূপ, ৬০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে নেইমার (Neymar Jr.) পড়ে গেলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। যদিও ভার চেকের পর বোঝা যায়, ঘটনাটি ফাউল কম, প্লে অ্যাক্টিং বেশী। ফলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন রেফারী। আসলে ফুটবলে ভার টেকনোলজি (VAR technology) আসার পর প্লে অ্যাক্টিং (play-acting) করে খুব একটা সুবিধা বোধহয় আজকাল আর পাওয়া যাবে না, বিশেষত যেখানে রেফারিরা ৫০-৫০ পরিস্থিতেও ঝুঁকি না নিয়ে ভারের সাহায্য নিচ্ছেন। বরং সেক্ষেত্রে প্লে অ্যাক্টিংয়ের অপরাধে উল্টে হলুদ কার্ড দেখার সম্ভাবনা। নেইমার এই বিষয়টা মাথায় রাখলে ভালো হয়, কারণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অযথা কার্ড দেখলে তা সমস্যায় ফেলবে ব্রাজিলকেই।
যাই হোক, গোল পাওয়ার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি নেইমারকে। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে ডানপায়ের গড়ানো শটে গোল করে যান পিএসজি (Paris Saint-Germain F.C.) তারকা নেইমার (২-০)।
ম্যাচে ৭৯ মিনিটে নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল পেরু, যেখান থেকে গোল করা। ডানপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা ফ্রিকিক থেকে গোললাইন থেকে হ্যান্ডশেকের দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন পেরুর অ্যালেক্স ভালেরা (Alex Valera)।
এরমাঝেই চলে ব্রাজিলের সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী। প্লেস করতে গিয়ে রিচার্লিসন বল গোলকিপারের হাতে মারেন, নেইমারের ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, রিচার্লিসনের সাজানো বল গোলকিপারের গায়ে মারেন গ্যাব্রিয়েল জেসাসের পরিবর্ত হিসেবে ৭২ মিনিটে মাঠে নামা ফার্মিনো।
তবে ইনজুরি টাইমে দু-গোল করে স্কোরলাইনকে বড় করে ব্রাজিল। ৮৯ মিনিটে আবারও বক্সের মধ্যে বল সাজিয়ে দেন রিচার্লিসন। কিন্তু এবারে গোল করতে ভুল করেননি এভার্টন রিবেইরো (৩-০)। ৯৩ মিনিটে ম্যাচের শেষ গোলটি করেন রিচার্লিসন। পরপর দুবার দুটো শট পেরুর গোলকিপার সেভ করার ফিরতি বলে তৃতীয় বারের চেষ্টায় বল গোলে ঢোকান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এভারটনের (Everton FC) হয়ে খেলা এই ফরওয়ার্ড (৪-০)।
আসলে এইমুহূর্তে ব্রাজিলের এই দলটির যা শক্তি, তাতে অনায়াসে দুটো সেরা একাদশ নামিয়ে দেওয়া যায়। তিতে-র হাতে অনেক অপশন। পেরুর বিরুদ্ধে মাঠে নামা ১১ জনের মধ্যে ৯ জনই খেলেন ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলিতে। তাও তাঁরা সবাই ব্রাজিলের প্রথম একাদশের খেলোয়াড় নন। শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চের ফসল ভালোভাবেই তুলছেন তিতে (Tite)। যদিও কোপার (Copa América 2021) মান ইউরোর (UEFA EURO 2020) তুলনায় অনেকটাই কম, তবুও তিতে-র কৃতিত্বকে খাটো করলে চলবে না। এই মুহূর্তে ফেভারিট হলেও কোপায় কতদূর এগোবে ব্রাজিল বা চ্যাম্পিয়ন হবে কিনা, তা আগামী কয়েক সপ্তাহেই বোঝা যাবে। কিন্তু ইউরোপের টপ লিগগুলোর সেরা ক্লাবগুলোর প্রথম একাদশে নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেদের শৈল্পিক ঘরানার সংমিশ্রণে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক লাগছে ব্রাজিলের খেলা। কাতার বিশ্বকাপ (FIFA World Cup Qatar 2022) খুব দূরে নয়। মাঝের এই দেড় বছরে টিম কম্বিনেশন ঠিকমতো তৈরী করে নিতে পারলে ভালো কিছুর আশা করতেই পারেন ব্রাজিলের সমর্থকরা।