নতুন বছরের এর থেকে আর ভালো সূচনা হতে পারে? না, একদমই না। বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া ইস্টবেঙ্গল দলই এখন বড় বড় ক্লাব আর তাদের কোচেদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ, এটাই ইস্টবেঙ্গল, শেষ নিঃশ্বাস অব্দি লড়াই করে ইস্টবেঙ্গল, হারার আগে হার মানতে জানেনা ইস্টবেঙ্গল, মাঠে জান দিয়ে নিজেদের মান রক্ষা করে ইস্টবেঙ্গল! ২০২০ সালে ৭ ম্যাচ খেলে জয় অধরা ছিল লাল হলুদ বাহিনীর, আর ২০২১ এ ঠিক উল্টো! ৩ ম্যাচ খেলে ২ টো ক্ষেত্রে জয় ছিনিয়ে এনেছে ফাউলার ব্রিগেড, আর রেফারির কুনজর না পড়লে গোয়ার বিরুদ্ধেও ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত ছিল।
এই হঠাৎ করে ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে কিন্তু একটা বঙ্গসন্তানের অবদান অনস্বীকার্য। হ্যাঁ, এখানে দেবজিত মজুমদারের কথাই বলা হচ্ছে। ফুটবলে একটা কথা খুব প্রচলিত, “গোলকিপার হলো ডিফেন্সের লাস্ট লাইন, আর গোলকিপারের কাজটা যতটা সহজ লাগে, কাজটা তার থেকে অনেক কঠিন। শেষে গোলকিপারের হাতের ওপরেই নির্ভর করছে টিমের ভাগ্য।” সত্যি, একটা শট বাই চান্স বাঁচাতে না পারলে মুহূর্তের মধ্যে গোল হজম! বাকি খেলোয়াড় যাই ভুল করুক না করুক, কিন্তু গোলকিপারের একটা ভুল মানে…!!!
আর ঠিক এই জায়গাতেই ভরসার মিনার তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছেন দেবজিত মজুমদার। ওনার যেরকম রিফ্লেক্স, সেরকমই পুরো দলকে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। যেভাবে পুরো ৯০ মিনিট “কমান্ড” দিয়ে যায় হিন্দ মোটরের গর্ব দেবজিত, সেটা যেকোনো গোলকিপারের কাছে ঈর্ষার বস্তু হতে পারে। তবে যেটা সবথেকে বেশি নজর কাড়ে সেটা কিন্তু তার রিফ্লেক্স বা রিয়াকশান। আজ সুনীল ছেত্রীর শট অন্তত ২ বার নিজের সেরা দিয়ে সেভ করেছেন দেবজিত, আর দুটোরই “রিয়াকশান টাইম” হাফ সেকেন্ডের কাছাকাছি। মানে শট মারার পরেই দেবজিতের কাছে হাফ সেকেন্ডের মতো সময় ছিল শটটা বাঁচানোর আর দুবারই সমর্থকদের হতাশ করেননি আমাদের ২৪ নম্বর জার্সিধারী। শুধু এই দুটো শট? না, একার হাতে কম করে ৬ বার টিমের পতন হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।

পরিসংখ্যান মতো গোয়ার বিরুদ্ধেও ৯ টি সেভ দিয়েছিলেন দেবজিত, কিন্তু ডিফেন্সের মুহূর্তের ভুলের জন্য খেসারত দিতে হয় পুরো দলকে। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও ৬ টি সেভ করে কাগজের হেডলাইন তৈরি করে দিয়েছেন তিনি, আর সব মিলয়ে ৩৪ টি সেভ করে ইন্ডিয়ান সুপার লীগের এই মুহূর্তে সেরা গোলকিপার তিনি। তবে পরিসংখ্যান সব বলেনা, যেই মুহূর্তে সেভ গুলো হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটকে বিচার করলে বুঝবেন মাথা কতটা ঠান্ডা রাখতে হয়, আর কতটা স্নায়ুর চাপ সামলে নিজেকে মানসিক ভাবে শান্ত রাখতে হয়।
এই স্নায়ুর চাপ সামলে ২০২১ এ যেন দেবজিত আরো তুখোর হয়ে উঠছেন। স্বয়ং ক্যাপ্টেনও যদি পজিশন না ধরে রাখতে পারেন তাকেও বকতে ছাড়েননা দেবজিত। সুনীল, ডিমাস দের মতো তারকাদের বুলেট শটও তাকে নার্ভাস করতে পারেনা, আর সবচেয়ে বড় কথা হাইট কম হলেও গোলকিপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে একবারও পিছুপা হননি তিনি। এটাই তো লাল হলুদ বাহিনীর বিশেষতা, হারা না অব্দি হার মানা চলবেনা। গোয়া ম্যাচেও সেরা হয়ে উঠতেন তিনি যদিনা ব্রাইট চোখ ধাঁধানো সেই গোলটা করতো। তবে একটা ক্ষুধার্ত সিংহ কে কতদিন আটকে রাখবেন? ইস্টবেঙ্গলের এক গোলের লিড পাওয়ার পর কার্যত একার হাতেই তিনি নিশ্চিত করলেন যাতে মাচ শেষে ৩ পয়েন্ট লালহলুদ বাহিনীর ঝুলিতেই আসে, আর তার এই পারফর্মান্সকে কুর্নিশ জানিয়ে “হিরো অফ দা ম্যাচ” পুরস্কারটিও তাকেই দেওয়া হয়।
Why Save-jit, you ask?
— SC East Bengal (@sc_eastbengal) January 9, 2021
33 saves in 10 matches this season, we answer!
Debjit Majumder – tonight's Hero of the Match for making 5️⃣ great saves against BFC! ❤️💛#BFCSCEB #ChhilamAchiThakbo #JoyEastBengal #HeroISL pic.twitter.com/jovVp0KAzX
তবে দেবজিত মজুমদারের একটা সমস্যা যেটা সমর্থকদের চোখ কখনোই এড়াতে পারেনি সেটা হলো জাজমেন্টের অভাব। ঠিক এই কারণেই ডার্বিতে রয় কৃষ্ণা গোল করে ছিলেন, আরো কিছু গোলও এভাবে খেতে হয়। তবে কোনোটতেই দেবজিতকে একা দোষ দিলে চলেনা, শুরুর দিকে আমাদের ডিফেন্সও পাড়ার ডিফেন্সের মতোই ছিল। তবে যেভাবে ফক্সের নেতৃত্বে নেভিলরা উন্নতি করেছে, সেভাবেই দেবজিতও নিজের জাজমেন্ট আর আউটিং উন্নতি করেছেন। একটা লীগ যখন ৫-৬ মাস ধরে খেলা হয়, তখন উন্নতির অবকাশও অনেক থাকে। দেবজিত সময়ের সঠিক ব্যবহার করে নিজেকে আরও ধারালো করে তুলেছেন, আর ক্রমেই বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠছেন। বিপক্ষ যতই ভালো খেলুক, শেষে যে বলটা সেভজিতের হাতেই জমা পড়বে!