প্রথম দুটি ম্যাচে হারার পর অনেকেই টুর্নামেন্ট থেকে হয়তো ছেঁটে ফেলেছিলেন ডেনমার্ককে (Denmark national football team)। তারা টিকে ছিল অংকের বিচারে আর ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের (Christian Eriksen) জন্য মরিয়া চেষ্টা আর প্রার্থনায়। ফিনল্যান্ডের (Finland national football team) বিরুদ্ধে গ্রুপের সেই বিভীষিকাময় খেলায় এরিকসনের দুর্ঘটনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিলো গোটা দলকে। গোলটিও হয় এরিকসন মাঠ ছাড়ার কিছু পরেই। পরের ম্যাচে প্রবল পরাক্রমশালী বেলজিয়ামের (Belgium national football team) বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই উপহার দেয় ডেনমার্ক। আর মরণ-বাঁচনের শেষ ম্যাচে ২০১৮ বিশ্বকাপে (2018 FIFA Worldcup) স্পেনকে (Spain) ছিটকে দেওয়া রাশিয়াকে (Russia) রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোয় উঠে আসে তারা।
ওয়েলস-ও সুইটজারল্যান্ডের (Switzerland national football team) সাথে ড্র করে, তুরস্ককে (Turkey national football team) হারিয়ে এবং ইতালির (Italy national football team) কাছে হেরে গ্রুপ-এ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবেই শেষ ষোলোয় উঠে এসেছে।
তবে নকআউটের প্রথম ম্যাচেই ‘ড্যানিশ ডায়নামাইটদের’ (Danish Dynamite) কাছে চার গোলে বিপর্যস্ত হয়ে ইউরো ২০২০ থেকে বিদায় নিলো ‘দি ড্রাগনরা’ (The Dragons)। ও জি সি নিসের (OGC Nice) হয়ে খেলা ক্যাসপার ডোলবার্গের (Kasper Dolberg) জোড়া গোল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিল আরোন রামসে (Aaron Ramsey), গ্যারেথ বেলদের (Gareth Bale) পা থেকে। খেলার শুরুর দিকে ছটফটে বেল বার দুয়েক বক্সের বাইরে থেকে শট নিলেও সেগুলো তেকাঠিতে থাকেনি। এরপর থেকে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ডেনমার্ক। সাতাশ মিনিটে ডোলবার্গের বাঁকানো শট লেস্টার সিটির (Leicester City F.C.) বেঞ্চের গোলকীপার ড্যানি ওয়ার্ডের (Danny Ward) নাগাল পেরিয়ে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।
এরপর থেকে ওয়েলসের পরিকল্পনায় ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠতে থাকে, বিশেষ করে মিকেল দামসগার্ড (Mikkel Damsgaard) এবং আয়াক্স আমস্টার্ডামের প্রাক্তনী ডোলবার্গের বোঝাপড়া ওয়েলস (Wales national football team) মিডফিল্ড এবং রক্ষণকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। নিজেদের রক্ষণ থেকে বল বিপদ মুক্ত করতে তারা হিমশিম খেয়েছে। ৩৮ মিনিটে কোনর রবার্টস (Connor Roberts) কুঁচকির চোটে বেরিয়ে যাওয়ায় বিপদ আরো বাড়ে।
৪৮ মিনিটে বার্সেলোনার মার্টিন ব্রেথওয়েটের (Martin Braithwaite) পাস্ থেকে রক্ষণের ভুলের সুযোগে ডোলবার্গ নিজের পরিচিত মাঠে দ্বিতীয় গোল করেনা ডোলবার্গ (২-০)। ইউসুফ পৌলসেনের (Yussuf Poulsen) চোটের জন্য সুযোগ পাওয়ার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন এই তরুণ খেলোয়াড়। যদিও এই গোলটি নিয়ে বিতর্ক থেকে যাচ্ছে কারণ ড্যানিশ অধিনায়ক সাইমন ক্যার (Simon Kjær) ফাউল করেছিলেন কিফার মুরকে (Kieffer Moore) এবং কোনো অজ্ঞাত কারণে বাঁশি বাজান নি জার্মান রেফারি ড্যানিয়েল সিবার্ট (Daniel Siebert)। সেই আক্রমণ ধরেই আসে ডেনমার্কের দ্বিতীয় গোল।
এরই মধ্যে ম্যাথিয়াস জেনসেনের (Mathias Jensen) শট পোস্টে না লেগে ফিরলে তিন গোলে এগিয়ে যেত ডেনমার্ক। তারা দ্বিতীয় গোলের পর একটু বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে গেলেও, খেলার উপর সংযম হারায়নি কখনোই। ৮৮ মিনিটে জোয়াকিম মাইলে (Joakim Mæhle) তৃতীয় গোলটি করে ফেলেন (৩-০)। তার ঠিক দু মিনিট পরেই হ্যারি উইলসনের (Harry Wilson) এক বেপরোয়া চ্যালেঞ্জের কারণে তাকে লাল কার্ড দেখতে হয়। তুলনামূলক গুরুদণ্ড। অতিরিক্ত সময়ে ওয়েলসের কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতেন ব্রেথওয়েট (৪-০)। প্রথমে গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হলেও, ভ্যার রেফারি গোলটি গ্রাহ্য করেন। টিভি দেখে অন্তত কারণ বোঝা যায়নি।
কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্কের সাথে দেখা হবে নেদারল্যান্ডস (Netherlands national football team) এবং চেক রিপাবলিক (Czech Republic national football team) ম্যাচের বিজয়ীর সাথে।