EBRP Exclusive: ইস্টবেঙ্গলে কোলাডোদের চুক্তি নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে বিতর্ক মেটার যেন কোনও লক্ষনই দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকবছরে ইস্টবেঙ্গল নিয়ে আলোচনায় ঠিক কতটা সময় ফুটবল নিয়ে আলোচনায় খরচ হয়েছে, এবং কতটা মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিতর্কে, সেটা সকলের সামনেই পরিষ্কার।

কখনও কোয়েসের সঙ্গে চাপানউতোর, কখনো সুখদেব সিং ইস্যুতে ট্রান্সফার ব্যান – ২০১৮ কেটেছিলো এভাবেই।

২০১৯-এ এসে শুরু হয়েছিলো পূর্ববর্তী ইনভেস্টর কোয়েসের সঙ্গে মনকষাকষি এবং সরাসরি একে অপরের প্রতি বিষেদাগার। বোঝাই যাচ্ছিলো যে কোয়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে উঠেছে অবশ্যম্ভাবী।

২০২০-এর শুরুর দিকেই সারা বিশ্বে শুরু হয়েছিলো কোভিড-১৯ অতিমারী। করোনার প্রকোপে বিশ্বজুড়ে বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা। একইভাবে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় ১৪ই মার্চ, ২০২০-র পর বন্ধ হয়ে যায় আইলীগও।

সেই সময় চলছিলো কোয়েস এবং ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদপর্ব। এই সময়েই কোয়েস ফুটবলার এবং সাপোর্ট স্টাফদের চুক্তির উপর প্রয়োগ করে ফোর্স মেজর ক্লজ (Force Majeure Clause), যেটি সাধারণত কোনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া কোনও ঘটনা, যেমন মহামারীর (Epidemic) পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহার করে দুপক্ষকেই চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ দেয়।

২০২০ সালে মে মাস নাগাদ যখন কোয়েসের ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদপর্ব একদম শেষের পর্যায়ে, তখন ৭০%, অর্থাৎ মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোয়েসের কাছে একাধিক রাস্তা খোলা ছিল:

  • নিজেদের ৭০% শেয়ার অন্য কোনো ইনভেস্টরকে চলতি বাজারদরে হস্তান্তর করে নিজেদের হাতে থাকা স্পোর্টিং রাইটস নতুন আসা ইনভেস্টরকে ফেরত দেওয়া। কিন্তু সেই সময়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কাছে নতুন কোনও ইনভেস্টর ছিল না।
  • নিজেদের ৭০% শেয়ার ক্লাবকেই চলতি বাজারদরে হস্তান্তর করে নিজেদের হাতে থাকা স্পোর্টিং রাইটস ক্লাবকে ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কাছে ইস্টবেঙ্গলের ৭০% শেয়ার কিনে নেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি হয়তো ছিল না, অথবা থাকলেও তাঁরা হয়তো আগ্রহী ছিলেন না।
  • সেই সময় স্পোর্টিং রাইটস ফেরত নেওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ থেকে নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে ৭০% শেয়ার না কেনা হলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে কোয়েস স্পোর্টিং রাইটস ফেরৎ দিচ্ছে না। সমর্থকদের একাংশও এই দাবির সমর্থনে গলা ফাটান।

এখন মিডিয়ার একাংশে দাবি করা হচ্ছে, যে সমস্ত খেলোয়াড় এবং সাপোর্ট স্টাফদের বকেয়া বাকি ছিল, তার দায়িত্ব ক্লাবকে দিয়ে দেয় কোয়েস এবং ক্লাব তা মেনেও নেয়। সূত্রের খবর, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা, যা কিনা সেই সময় কোয়েসের হাতে থাকা ৭০% শেয়ারের বাজারমূল্যের চেয়ে বহুগুণ কম। যদিও একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, কোয়েসের তরফ থেকে কোনওরকম বকেয়ার দায়ভার ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ক্লাবকে দেওয়া হয়নি।

এরপরে কয়েকমাস কেটে গেলেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায়নি আর্থিকভাবে শক্তিশালী কোনও স্পনসর বা ইনভেস্টরের, যাঁদের হাত ধরে আইএসএল খেলা যায় বা যাঁরা এই ৪-৫ কোটি টাকার দায়ভার নিতে রাজী হয়।

শেষ পর্যন্ত গত ২রা সেপ্টেম্বর, ২০২০-তে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উপস্থিতিতে নতুন ইনভেস্টর হিসেবে শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement) ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ২০২০-২১ মরশুমের আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের অন্তর্ভুক্তি ঘটে।

এরপর কেটে গেছে আটমাসেরও বেশী সময়। শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই যেমন বিশবাঁও জলে, তেমনই কোলাডোদের বেতন বিতর্কেরও দেখা যায়নি কোনও সমাধান।

এখন যখন হাইমে কোলাডোদের চুক্তি টার্মিনেশনের বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়েছে, তখন দাবী করা হচ্ছে, এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে সমাধান করতে কোয়েসকে (Quess Corp) চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার মিডিয়ারই একাংশের দাবী, শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তির সময় কোলাডো-সহ পাঁচ ফুটবলারের বকেয়া পেমেন্ট নতুন ইনভেস্টর দেবে, এমনই নাকি রফা হয়েছিল।

এর জেরেই এখন এই বিষয়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অসঙ্গতি। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্নঃ

  • কোয়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদের সময় যখন স্পোর্টিং রাইটস ফেরৎ নেওয়া হয়, তখন সত্যিই কোনও দায়ভার ক্লাবের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সেই মর্মে বিচ্ছেদ হওয়া ঐক্যমত্যের প্রামাণ্য কাগজপত্র প্রায় একবছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও কি এআইএফএফ, এএফসি এবং ফিফাকে পাঠানো হয়েছে, যাতে কোলাডোদের দায়ভার কোয়েসের উপরেই বর্তায়, এবং ক্লাবের উপর এই বিতর্কের কোনও প্রভাব না আসে?
  • যদি ক্লাব কোলাডোদের দায়ভার সেই সময় নিয়েই থাকে, তাহলে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তির সময় কি তাঁদের সঙ্গে বকেয়া অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে আদৌ কোনও লিখিত চুক্তি হয়েছিল? যদি হয়ে থাকে, তাহলেও সেই প্রামাণ্য নথিপত্র ফিফা বা এএফসির মতো গভর্নিং বডিগুলোকে পাঠানো হয়েছে?
  • ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কোয়েসের বিচ্ছেদের পর এখন যখন কোয়েস আর কোনোভাবেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত নেই, ক্লাব লাইসেন্সিং যখন কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি প্রাইভেট লিমিটেড (Quess East Bengal FC Private Limited) থেকে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের (Shree Cement East Bengal Foundation) নামে হয়েছে, তখন কোয়েস কি এর দায়ভার নিতে রাজি হবে? যদি না হয়, এবং শ্রী সিমেন্টের সঙ্গেও এখনও যখন চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি, তাহলে শ্রী সিমেন্টই বা কেন এই দায়ভার নিতে বাধ্য থাকবে?

বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ক্লাবের অন্দরমহলের এক সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ক্লাবের সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের যে টার্মশিটে সই হয়েছে, তাতে বলা আছে, ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২০-র আগের কোনও বকেয়ার দায়ভার নতুন কোম্পানি নেবে না। ফলে কোয়েসের সময়ের ফুটবলারদের মোট বকেয়ার প্রায় ৪ কোটি ৭ লক্ষ টাকার দেনার দায়ভার ক্লাবকেই বহন করতে হবে। এই মর্মে নাকি ক্লাবকে চিঠিও পাঠিয়ে ছিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা।

এমনকি, শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তির আগে যে সমস্ত খেলোয়াড়ের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের চুক্তি হয়েছিলো ২০২০-২১ মরশুমের জন্য, তাদের মধ্যে যে ২৯ জন ফুটবলারের তালিকা “ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব প্রাইভেট লিমিটেড” (East Bengal Club Private Limited) থেকে “শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন”-এর কাছে হস্তান্তর হয়, সেখানে হাইমে কোলাডোর (Jaime Santos Colado) নাম ছিল না বলেই ক্লাবের অন্দরমহলের খবর।

সবমিলিয়ে কোলাডোদের চুক্তি নিয়ে দেখা দিচ্ছে অস্বচ্ছতা। এরসাথে যোগ হয়েছে দু-একটি মিডিয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর পরিবেশন, যার ফলে সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি আরোই বাড়ছে। এইমুহূর্তে যা পরিস্থিতি, সেই সমস্যার আশু কোনও সমাধান বেরোবে কিনা, তা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব।

আশা করা যায়, যারই দায়ভার হোক, সেই ব্যক্তি বা সংস্থা দ্রুত এই বিতর্কের অবসান ঘটাবেন এবং সাধারণ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একরাশ উৎকণ্ঠার হাত থেকে মুক্তি দেবেন।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.