এটিকেম্বি – ৪, ইস্টবেঙ্গল – ০
হ্যাঁ, এটাই সত্যি। ২০২০ সালে মোহনবাগান ক্লাব উঠে গিয়ে এটিকে এমবি তৈরি হওয়ার পর থেকে কলকাতার নতুন ডার্বিতে এখনও পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেনি ইস্টবেঙ্গল। মাত্র দু’বছর আগে জন্ম নেওয়া এটিকেম্বির বিরুদ্ধে চারটে ম্যাচ খেলে চারটেতেই পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। তবে, কলকাতারই দুই ক্লাব হলেও, এখনও পর্যন্ত ১০২ বছরের ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এবং মাত্র দু’বছরের সদ্যোজাত ক্লাব এটিকে বাগান কলকাতা শহরে একে অপরের মুখোমুখি হয়নি।
ফলে, বাংলার ফুটবলের আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ১৮৮৯ সালে স্থাপিত হওয়া মোহনবাগান ক্লাবের সমর্থকরা আজ প্রথমবার যুবভারতীতে যাবেন বড় ম্যাচে অন্য কোনও দলকে সমর্থন করতে।
তবে, অরিজিনাল মোহনবাগান না থাকলেও বাংলার নতুন ক্লাব এটিকে বাগানেরও জার্সির রং সবুজ মেরুন। ফলে, লাল হলুদ সমর্থকরা, সবুজ মেরুন রঙ দিয়েই, বাঙালির চিরাচরিত বড় ম্যাচের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চাইছেন।
কলকাতারই দুটো দল – অথচ কি অদ্ভুত বৈপরীত্য। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যশালী ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের অতীত গরিমা থাকলেও মহারবিবারের মহারণের জন্য হাতে গোলাবারুদ বেশ সীমিত। বিদেশীরা এসেছেন সপ্তাহখানেক আগে। অনেকেই প্লেয়িং কন্ডিশনে নেই। মরশুমের দুটো ম্যাচ যেতে না যেতেই চোটের তালিকা বাড়ছে। নাওরেম মহেশ আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন। গত ম্যাচে চোট পেয়ে বড়ম্যাচে অনিশ্চিত বাঙালি ছেলে অঙ্কিত মুখার্জীও। চোটে কাবু হয়ে শনিবার অনুশীলনে আসেননি ভিপি সুহেরও।
সম্পূর্ণ নতুন দল হওয়ায় এই টীমের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট। প্র্যাকটিসও দেরিতে শুরু হওয়ায় ম্যাচের শেষ দিকে ক্লান্ত লাগছে লাল হলুদ ব্রিগেডকে। তারসাথে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে মুড়ি মুড়কির মত সুমিত পাসি, ভিপি সুহেরদের একের পর এক গোল মিস। বড় ম্যাচের আগে তাই হেড কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টটাইনের গলায় সাবধানতার সুর। সাংবাদিক সম্মেলনে স্টিফেন বলছেন, “আমি এই ম্যাচের গুরুত্ব বুঝি। তবে ডার্বি হারলেও আমাদের ভবিষ্যত শেষ হয়ে যাবে না।”
ইস্টবেঙ্গল শিবিরের খবর, অঙ্কিত আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে, বড় ম্যাচে সম্ভবত শুরু করতে পারেন মহম্মদ রাকিপ। গোলে কমলজিৎ। চারজনের ডিফেন্স লাইন সম্ভবত এই রকম – রাইট ব্যাকে রাকিপ, লেফট ব্যাকে জেরি, দুই স্টপার সম্ভবত ইভান গঞ্জালেস এবং লালচুংনুংগা। মাঝ মাঠের ব্লকারের দায়িত্বে অমরজিৎ সিং কিয়াম অথবা সৌভিক চক্রবর্তী। সম্ভবত প্রথম একাদশে শুরু করবেন অ্যালেক্স লিমাও। মাঝ মাঠের দুই প্রান্তে অনিকেত যাদব এবং তুহিন দাস। আপফ্রন্টে সম্ভবত সুমিত পাসির সঙ্গে শুরু করতে চলেছেন দৈত্যাকার ব্রাজিলীয় এলিয়ান্দ্র। তবে, বিপক্ষকে চমক দিতে শুরু থেকেই দুই ব্রাজিলীয় জোড়া ফলা এলিয়ান্দ্র ও ক্লেইটন সিলভাকে একসঙ্গে নামিয়ে দিতে পারেন কোচ। পরিবর্ত হিসেবে আসতে পারেন হিমাংশু জাংরা।
অপরদিকে, এটিকেম্বির কোচ হুয়ান ফেরান্দোর হাতে সেট টিম। ডিফেন্সে ৩-৫-২ ছকে ডিফেন্সে পোগবার সাথে দুই বঙ্গতনয় শুভাশীষ বোস ও প্রীতম কোটাল। মাঝ মাঠে দীপক টাংরি, কার্ল ম্যাকহিউ, আশিক কুরুনিয়ান, কিয়ান নাসিরি। সামনে দলটির মূল চালিকাশক্তি জনি কাউকো। আক্রমণভাগে হুগো ব্যুমোর সাথে লিস্টন কোলাসো।
করোনা আবহে আড়াই বছর ধরে ডার্বি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমী দর্শকরা। ফলে, উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। টিকিটের জন্য দুই ক্লাবেই মারাত্মক হাহাকার। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত টিকিট বন্টনে আয়োজক কমিটির ব্যর্থতায় ব্ল্যাকারদের রমরমা। সঙ্গে দোসর প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ। ফলে আজ গ্যালারিতে খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে পারেন অনেক প্রকৃত ফুটবপ্রেমী মানুষ। বদলে গ্যালারি ভরাতে পারে ফ্রী টিকিট পাওয়া এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
যাইহোক, টিকিট এবং চিরাচরিত মোহনবাগান না থাকলেও গোটা কলকাতারই ট্রাফিক আজ ওয়ান ওয়ে। গন্তব্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন।