২৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে ২২শে আগস্ট ২০২২ – দীর্ঘ ৯০৪ দিনের অপেক্ষার অবসান। বিশ্বব্যাপী করোনার অভিশাপ কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে ফুটবল। অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর শেষে আবারও গ্যালারিতে ফিরছে সেই চেনা পরিচিত লাল হলুদ মুখগুলো। স্বমহিমায় ফিরতে চলেছে ইস্টবেঙ্গলের টুয়েলভথ ম্যানের গর্জন।
মাঝের আড়াই বছরে ইস্টবেঙ্গল হেঁটেছে বহু চড়াই উৎরাই। কোয়েস বিদায়, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Chief Minister Mamata Banerjee) হাত ধরে শ্রী সিমেন্টের (Shree Cement) আগমন, চুক্তি জট, আইএসএলে (ISL) অভিষেক, বছর দুয়েকের হতশ্রী পারফরম্যান্স, শেষমেশ শ্রী বিদায়, অবশেষে ইমামী গ্রুপের (Emami Group) আগমন – গত দুবছরে বহু ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী থেকেছে ইস্টবেঙ্গলের জনতা। মাঝের এই দুর্বিষহ আড়াই বছরে একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি সমর্থকদের। তবুও নতুন মরশুমে, নতুন উদ্যমে ১১টা লাল হলুদ জার্সির জন্য আবারও চেনা ছন্দে গলা ফাটাতে প্রস্তুত লাল হলুদ গ্যালারি।
গত ২৫শে মে নবান্ন থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ইস্টবেঙ্গলের নতুন ইনভেস্টর রূপে ইমামী গ্রুপের নাম ঘোষণা করলেন, তখন থেকেই ফের সাফল্যের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন লাল হলুদ সমর্থকরা। কিন্তু তারপরেও চুক্তি সইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশি। শেষমেশ গত ২রা আগস্ট শহরের এক অভিজাত পাঁচতারা হোটেলে একসঙ্গে হাতে হাত রেখে পথ চলা শুরু ইস্টবেঙ্গল ও ইমামী গ্রুপের (Emami East Bengal)।
অবশেষে সোমবার, সপ্তাহের শুরুতেই ১৩১তম ডুরান্ড কাপে ইন্ডিয়ান নেভির (Indian Navy) বিরুদ্ধে গ্রুপ-বি তে (Group B) নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল।
গত ৪ঠা আগস্ট থেকে হেড কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন (Stephen Constantine) এবং ভারতীয় সহকারী কোচ বিনো জর্জের (Bino George) তত্ত্বাবধানে নিজেদের মাঠে অনুশীলনে নামে লাল হলুদ ব্রিগেড। গত দু’সপ্তাহের অনুশীলনে মাত্র একটিই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল, ডায়মন্ডহারবার এফসির (Diamond Harbour FC) বিরুদ্ধে, যেটি গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়। ডুরান্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে স্টিফেন নিজেও প্রায় স্বীকার করে নিলেন দলের অপর্যাপ্ত অনুশীলনের কথা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে লাল হলুদের হেড কোচ খোলাখুলি বললেন যে, এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি দল। ফলে ডুরান্ডের গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচে দলটাকে তৈরি করাই ওনার মূল উদ্দেশ্য।
তবে ভারতীয় নৌ সেনার বিরুদ্ধে মরশুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে লাল হলুদ শিবিরকে চিন্তায় রাখবে দলের বিদেশীদের কন্ডিশন। শনিবার ইভান গঞ্জালেস (Iván Garrido González) এবং রবিবার দুই ব্রাজিলীয় ক্লেইটন সিলভা (Cleiton Silva) এবং এলিয়ান্দ্র (Eliandro dos Santos Gonzaga) শহরে পা রাখলেও মাঠে নামার মত অবস্থায় নেই তারা। দলের অপর বিদেশি আরেক ব্রাজিলীয় অ্যালেক্স লিমাও (Alex Monteiro de Lima) কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন গত শুক্রবারই। ফলে নেভি ম্যাচে তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সাইপ্রাসের ৩২ বছর বয়েসি ডিফেন্ডার কারালাবস কিরিয়াকো (Charalambos Kyriakou) টিমের সঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে অনুশীলন করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে হেড কোচ নিজেও জানিয়ে দিলেন, “আমার দলে মাত্র দেড় জন বিদেশী ফুটবলার খেলার মত অবস্থায় রয়েছে।”
অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে, আইএসএলের (Indian Super League) আগে ডুরান্ড কাপকে ((Durand Cup 2022) ইস্টবেঙ্গল শিবির আপাতত প্রস্তুতি মঞ্চ হিসাবেই দেখছে। তবুও দলটার নাম যেহেতু ইস্টবেঙ্গল, তাই দীর্ঘ দিন ধরে ট্রফির স্বাদ না পাওয়া লাল হলুদ জনতা যে সাফল্যের আশাতেই মাঠে যাবেন সে কথা বলাই বাহুল্য।
ভারতীয় জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের হাত ধরে ব্যর্থতার আঁধার কাটিয়ে আবারও কি সাফল্যের সরণিতে ফিরবে ইস্টবেঙ্গল, এটাই এখন দেখার।