আড়াই বছর পর ঘরের মাঠের জনসমর্থন নিয়ে নেমেও ১৩১তম ডুরান্ড কাপে (Durand Cup 2022) নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতীয় নৌ সেনার (Indian Navy) বিরুদ্ধে যুবভারতী থেকে এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের দলকে। ফলে টুর্নামেন্টে সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে গ্রুপ বি-তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে রাজস্থান ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে, পুরো তিন পয়েন্ট পেতে মরিয়া লাল হলুদ শিবির।
নৌ সেনার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে সাকুল্যে ১৮ দিন অনুশীলন করেছিল ইমামি ইস্টবেঙ্গল (Emami East Bengal)। তার উপর কোনও বিদেশি ছাড়াই নিজেদের প্রথম একাদশ সাজিয়েছিলেন লাল হলুদের হেড কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টটাইন (Stephen Constantine)। স্বাভাবিক ভাবেই ইমামী ইস্টবেঙ্গলের খেলায় জড়তার ছাপ ছিল স্পষ্ট। তবে, নেভির বিরুদ্ধে অনেকগুলো পজিটিভ পয়েন্টও চোখে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গলের খেলায়।
অনভ্যস্ত স্টপার পজিশনে অঙ্কিত মুখার্জী (Ankit Mukherjee) বেশ সপ্রতিভ। ২১ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক লালচুংনুঙ্গা ডিফেন্সে বেশ সক্রিয় ছিলেন। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরা সুমিত পাসি (Sumeet Passi) ম্যাচের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পজিশনে খেলে বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও তাঁর একটি দূরপাল্লার শট বারপোস্টে লাগে। এছাড়াও রিজার্ভ দল থেকে উঠে আসা তুহিন দাসের (Tuhin Das) পারফরম্যান্সও ছিল বেশ নজরকাড়া। আপফ্রন্টে বেশ ওয়ার্ক লোড নিয়ে খেলেছিলেন ভিপি সুহেইর (V. P. Suhair)। দ্বিতীয়ার্ধে নামা ব্রাজিলীয় অ্যালেক্স লিমার (Alex Monteiro de Lima) মাঝ মাঠ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বেশ চোখে পড়ার মতো।
গত ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন নাওরেম মহেশ। রাজস্থান ম্যাচে পাওয়া যাবে না তাঁকে। তবে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে স্বস্তির খবর, আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র এসে যাওয়ায় রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে সাইপ্রাসের ডিফেন্ডার কারালাবোস কিরিয়াকোর। ফলে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে অভিষেক ঘটতে চলেছে তার। ডার্বির আগে দলের অন্য বিদেশীদেরও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্টিফেনের। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের চোখ থাকবে রঞ্জিত বাজাজের দিল্লি এফসি থেকে লোনে আসা নবাগত হিমাংশু জাংড়ার (Himanshu Jangra) দিকেও।
প্রতিপক্ষ রাজস্থান ইউনাইটেড (Rajasthan United FC) প্রথম ম্যাচেই ৩-২ গোলে এটিকে মোহনবাগানকে (ATK Mohun Bagan FC) হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে। মাঝ মাঠে কিরগিজস্তানের মিডফিল্ডার আমানগেলদিয়েভ যথেষ্ট কার্যকরী। দলের আরেক কিরগিজ ফুটবলার আয়দার মাম্বাতালিয়েভ এটিকের আক্রমণভাগের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা ভালো ব্লক এবং ইন্টারসেপশান করেছিলেন। গোলে অনবদ্য ছিলেন নীরজ কুমার। এটিকে ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচও তিনিই। ফলে রাজস্থান ডিফেন্স টপকে গোল করতে হলে গত ম্যাচের মতো সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী করা চলবে না ইস্টবেঙ্গল ফরওয়ার্ড লাইনের।
বুধবার ম্যাচের আগে ক্লোজড ডোর অনুশীলন রেখেছিলেন কন্সট্যান্টাইন। প্র্যাকটিস শেষে ডার্বি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সতর্ক স্টিফেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলে গেলেন, গ্ৰুপের প্রতিটা দলকেই তিনি সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিদেশীদের ব্যাপারেও কিছুটা রাখঢাক করে বলে গেলেন যে, সবাই এখনও ম্যাচফিট নন। মাত্র আড়াই সপ্তাহের অনুশীলনে ডুরান্ড খেলতে নামা স্টিফেনের গলায় সতর্কতার সুর।
কন্সট্যান্টাইন যতই চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন, ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ডার্বির টিকিটের জন্য লাল-হলুদ জনতার লম্বা লাইনই কিন্তু বলে দিচ্ছে, ডার্বির দামামা বেজে গিয়েছে। আর কে না জানে, দু ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পাওয়া এটিকে মোহনবাগানের অবস্থাও বেশ নড়বড়ে। ফলে, আগামী রবিবার এটিকের বিরুদ্ধে মরশুমের প্রথম ডার্বি (Kolkata Derby) জেতার আশায় বুক বাঁধছেন লাল হলুদ সমর্থকেরা।
আজকের রাজস্থান ম্যাচই কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নামার আগে লাল হলুদ শিবিরের কাছে নিজেদের ঝালাই করে নেওয়ার শেষ সুযোগ।