অনেক টালবাহানার পর শেষমেশ হিরো আইএসএলে অভিষেক ঘটেছে ইস্টবেঙ্গলের। নতুন ইনভেস্টর হিসেবে এসেছেন শ্রী সিমেন্ট গোষ্ঠী, কোচ করে নিয়ে আসা হয়েছে বিশ্বখ্যাত ফুটবলার তথা লিভারপুল এফসি-র কিংবদন্তি রবি ফাউলারকে। কিন্তু তারপরেও লীগ টেবিলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। মধ্যমানের ভারতীয় ব্রিগেড তো ছিলই, কিন্তু গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো নামীদামী বিদেশী ফুটবলাররাও তাঁদের সুনাম অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছেন না। বিশেষত গোলখরায় ভুগছে লাল হলুদ শিবির।
গতকালের বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচেও একই অবস্থা। পুরো ম্যাচে গোল লক্ষ্য করে তিনকাঠির মধ্যে একটা শটও নিতে পারেননি ব্রাইট, হলোওয়ে মাঘোমা-রা। ফলে ০-২ গোলে হেরেই ফিরতে হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে।
এইসব কিছুই নজরে এড়ায়নি প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার মেক্সিকান এনরিকে এস্কুয়েদা-র। ম্যাচের পর অন্যদিনের মতো এদিনও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ফুলটাইম স্কোরের আপডেট দেওয়া হয় এসসি ইস্টবেঙ্গলের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের পক্ষ থেকে। যোগাযোগ করার জন্য ইন্সটাগ্রাম-কেই বেছে নেন এনরিকে। একই সঙ্গে প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ মারিও রিভেরার নামও তিনি নেন। ফুলটাইম স্কোর আপডেটের পাবলিক কমেন্ট সেকশনে তিনি জানান, এসসি ইস্টবেঙ্গল টিমকে সাহায্য করার জন্য তিনি এবং মারিও রিভেরা প্রস্তুত।
আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারার দুঃখে এমনিতেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ছিলেন দিশাহীন। এরই মধ্যে এনরিকের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সমর্থককেই দেখা যায় ইস্টবেঙ্গলে ফিরে আসার জন্য এনরিকেকে অনুরোধ উপরোধ করতে।
তবে এনরিকের হঠাৎ এই মন্তব্যের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রথমত, ২০১৮-১৯ মরশুমে এনরিকে কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে প্রথমবার ভারতে আসেন। সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের হেড কোচ ছিলেন আলেহান্দ্রো মেনেন্ডেজ গার্সিয়া এবং সহকারী হিসেবে ছিলেন মারিও রিভেরা। অভিষেক ম্যাচেই নেরোকা এফসি-র বিরুদ্ধে পেনাল্টি সহ দুটো গোলও করেন এনরিকে। সব মিলিয়ে ওই মরশুমে ১৪টি ম্যাচ খেলে মোট ৯টি গোল করেন তিনি। কিন্তু এরপরেই ছন্দপতন। এনরিকে শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়েই, ২০১৯-এর মার্চ মাসে গোকুলাম এফসি-র বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তিনি বেপাত্তা। না ভারতে, না অন্য কোথাও খেলার সুযোগ পেয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই মেক্সিকান স্ট্রাইকার। আইএসএল তো দূর অস্ত, এই মুহূর্তে সরকারিভাবে দ্বিতীয় ডিভিশন লীগ আইলিগের কোনও ক্লাবও তাঁকে ডাকেনি। অর্থাৎ গত দুটো মরশুম ধরে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে দূরে এনরিকে। কারণটা তিনিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, করোনা আবহে বিদেশ থেকে কেউ ভারতে আইএসএলে এলে তাঁকে ১৫ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে থাকতে হচ্ছে। এরসঙ্গে রয়েছে ভিসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া, যার জন্য আরও কিছুদিন প্রয়োজন। অর্থাৎ, আজকেও যদি আসলেও ফেব্রুয়ারীর চতুর্থ সপ্তাহের আগে এনরিকের পক্ষে মাঠে নামা সম্ভব নয়। এদিকে আইএসএলের গ্ৰুপলিগে এসসি ইস্টবেঙ্গলের শেষ খেলা ২৭শে ফেব্রুয়ারী, ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে। এই সবকিছুই নিশ্চয়ই এনরিকের অজানা নয়।
অর্থাৎ, বাস্তবচিত্র হলো, শুধু এসসি ইস্টবেঙ্গল নয়, কোনও আইএসএল টিমের পক্ষেই এই মুহূর্তে আর নতুন কোনও বিদেশী আনার মতো সময় হাতে নেই, যদি না তারা এএফসি বা অন্য কোনো টুর্নামেন্ট খেলে (এফসি গোয়া এবং এটিকে মোহনবাগান ছাড়া, কারণ তারা এই মরশুমে এএফসির প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করবে)। এআইএফএফের পক্ষ থেকেও এই মরশুমের জন্য এখনও পর্যন্ত সুপার কাপ বা অন্য কোনো টুর্নামেন্টের কথা ঘোষণা করা হয়নি। তাই আইএসএলই আপাতত শেষ টুর্নামেন্ট দলগুলোর জন্য।
ফলে এনরিকের এই হঠাৎ আপাত অবাস্তব মন্তব্যের যুক্তিগ্রাহ্য কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন।