গ্ৰুপ ডি-র দ্বিতীয় খেলাতেও বিশ্বকাপ রানার্স ক্রোয়েশিয়া জিততে পারলো না। আগের ম্যাচ হারার পর এবার আটকে গেলো চেক রিপাবলিকের কাছে। আগের খেলায় স্কটল্যান্ডকে ২-০ তে হারিয়ে গ্রূপ শীর্ষে থেকে খেলতে নেমেছিল চেক রিপাবলিক (Czech Republic national football team)। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে নেমেছিলো লুকা মদ্রিচের (Luca Modric) ক্রোয়েশিয়া।
আক্রমণ প্রতিআক্রমণে ভালো খেলা উপহার দিলো দুই দল। খেলার শেষে ফল ১-১। পরিসংখ্যানের বিচারে দুটো টিম প্রায় সমান ভাবে খেলা শেষ করলেও (বল পজেশন, সমান সংখক শট) দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া (Croatia national football team)।
অবশ্য খেলার শুরুটা দারুণ ভাবে করেছিল চেক রিপাবলিক। পর পর আক্রমণের ঝড় আছড়ে পড়ছিলো ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণে। ২ মিনিটেই কাউফলের (Vladimir Coufal) শট গোল লাইন থেকে আটকায় ক্রোয়েশিয়া। তার একটু পরেই কর্নার থেকে সাওচেকের (Tomáš Souček) হেড একটুর জন্য মিস হয়। ১৭ মিনিটে বাঁ দিক থেকে আরেকটা বিপজ্জনক বল রেখেছিলো জ্যাংটো (Jakub Jankto), কাউফলের থেকে ফিরতি বল পেয়ে প্যাট্রিক শিক (Patrik Schick) সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ১০ মিনিটে একটি বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক নেওয়া ছাড়া এইসময় ক্রোয়েশিয়ার খেলা বিশেষ নজরে আসে নি। মাঝমাঠে চেক খেলোয়াড়রা ক্রোয়েশিয়াকে একেবারেরেই খেলার জায়গা দিচ্ছিলো না। বেশিরভাগ দ্বিতীয় বলগুলোই চেকরা দখল করছিলো।
শেষ অবধি ৩৫ মিনিটে বক্সের মধ্যে হেড দিতে উঠে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার লোভার্ন (Dejan Lovren) কনুই দিয়ে আঘাত করেন প্যাট্রিক শিককে (Patrik Schick)। ভার (VAR) দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। সেই থেকে গোল করতে ভুল করেননি শিক (১-০)। আগের খেলার ২ গোলের পর এই খেলার আবার গোল করে মোট ৩ নিয়ে এই মুহূর্তে ইউরোর সর্বোচ গোলদাতা শিক (Patrik Schick)।
গোল খেয়েই অবশ্য জেগে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। ৩৮-৪৫ মিনিটের সময়ের ব্যবধানে অন্তত কিছু তৈরি করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ৩৮ মিনিটে দারুন একটা বল (through) পেয়ে গিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার রেবিক (Ante Rebic)। একটু কঠিন জায়গায় চলে যাওয়ায় বাঁ পায়ের শট গোলে রাখতে পারেননি।
বিরতির পরই অবশ্য গোল পরিশোধ করে ক্রোয়েশিয়া। বাঁ দিক থেকে বল পেয়ে আউটস্টেপে কাটিয়ে ডান দিক ভেতরে ঢুকে আসেন পেরিসিচ (Ivan Perišić)। তারপর অসাধারণ শটে টপ কর্নার ফিনিশে গোল করে যান পেরিসিচ (১-১)। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত গোল উপহার দেবার পর আবার বড়ো মঞ্চে ভালো গোল উপহার দিলেন তিনি। গোল করা ছাড়াও সারা ম্যাচে দারুন খেলেছেন পেরিসিচ। আরো বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন তিনি।
৭২ মিনিটে পেরিসিকের হেডে নামিয়ে দেওয়া বল বক্সের মধ্যে থেকে গোলে রাখতে পারেননি ভ্যালিসিচ (Nicola Valicic)। একদম শেষ মুহূর্তে আবার সেই পেরিসিকের বাড়ানো বল থেকে (৮৮ মিনিটে) পরিবর্ত খেলোয়াড় পেটকোভিকের (Bruno Petkovic) ৬ গজের বক্স থেকে নেওয়া শট ব্লক করে ড্র নিশ্চিত করেন চেক ডিফেন্ডার কালাস (T. Kalas)।
দ্বিতীয়ার্ধে ভালো খেললো দুই দলই। কিন্তু আর গোল হয়নি।
এখনও অবধি খেলার বিচারে চেকরাই এই গ্ৰুপের সেরা দল। গ্ৰুপের অপর ম্যাচে ইংল্যান্ডের খেলা ড্র হবার পর দুই খেলায় ৪ পয়েন্ট পেয়ে তারাই গ্রূপ শীর্ষে রইলো অপরদিকে দুই ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাবার রাস্তা কঠিন হলো ক্রোয়েশিয়ার।
দুটো খেলা দেখার পর এটা পরিষ্কার এই ক্রোয়েশিয়ার মান গত বিশ্বকাপের দলের থেকে অনেকটাই খারাপ। তার কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করলে নিম্নলিখিত কিছু কারণগুলো সবার আগে চোখে পড়ছে:
১) প্রচণ্ড মন্থর খেলা। যার জন্য অনেক পাস খেললেও গোলের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না।
২) সারা খেলায় কিছু সুযোগ তৈরি হলেও প্রকৃত স্ট্রাইকারের অভাবে গোল করতে বার্থ হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া। অন্তত মারিও মানজুভিচকের (Mario Mandzukic) মত স্ট্রাইকার মাঠে থাকলেও হয়তো ক্রোয়েশিয়া আজ জিতে ফিরতে পারতো।
৩) মাঝে মাঠের প্রধান ভরসা মদ্রিচ সেভাবে কার্যকরী হতে না পারা আর রাকিটিচের (Ivan Rakitić) মতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় পাশে না থাকায় মাঝমাঠে খেলা তৈরি হচ্ছে না সেভাবে।
৪) ক্রোয়েশিয়া টিমটা আসলে একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাকিটিচ ,মদ্রিচদের পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো মুখ উঠে আসেনি যারা জাতীয় দলে এদের জায়গা নিতে পারে। তাই হয়তো খেলার মানের এই পতন অস্বাভাবিক নয়।
গ্ৰুপ ডি-তে ক্রোয়েশিয়ার শেষ ম্যাচ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগামী ২৩শে জুন, বুধবার ভারতীয় সময় রাত ১২টায়। সেই দিনই নির্ধারিত হবে এই গ্ৰুপের ভাগ্য। এই মুহূর্তে গ্ৰুপের যা পরিস্থিতি, চার দেশের মধ্যে যে কেউ যেতে পারে শেষ ষোলোয়।