ডেনমার্ক এবং বেলজিয়াম, দুই দলের হোম জার্সির রং-ই লাল। কিন্তু ম্যাচের প্রথমার্ধের খেলা দেখে বোঝা যায়নি বিশ্বের এক নম্বর দেশ লাল জার্সি পরে খেলছে নাকি সাদা? আগের ম্যাচেই ক্রিস্টিয়ান এরিকসনের (Christian Eriksen) বিভীষিকাময় হার্ট অ্যাটাকের পর যেন গোটা টিম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল কোপেনহেগেনের (Copenhagen) ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে, সতীর্থকে একটি দুর্দান্ত উপহার পাঠাতে। ম্যাচের দশ মিনিটে এরিকসনের উদ্দেশ্যে স্টেডিয়াম জুড়ে দর্শকরা তার পাশে থাকার বার্তা পাঠায়, মাঠ জুড়ে খেলোয়াড়রা তাতে সামিল হন।
গোটা ডেনমার্ক তাদের প্রচেষ্টার ফুল ফোটালো ৯২ সেকেন্ডেই। জেসন দেনায়েরের (Jason Denayer) ভুল পাসে বক্সের উপরেই বল পেয়ে যান পিয়ের-এমিল হজবার্গ (Pierre-Emile Højbjerg)। টটেনহ্যাম হটস্পারের (Tottenham Hotspur) মিডফিল্ডার বল বাড়িয়ে দেন আর বি লাইপজিগের (RB Leipzig) হয়ে খেলা ইউসুফ পৌলসেনকে (Yussuf Poulsen)। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোলটি করে ফেলেন পৌলসেন (০-১)
অনেকেই হয়তো ডেনমার্ককে ‘আন্ডারডগ’ ভেবেছিলেন। উয়েফা নেশনস লীগের (UEFA Nations League) দুই ম্যাচে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ। মাস কয়েক আগের দুই খেলাতেই দুই গোলের ব্যবধানে জিতেছিল টিনটিনের (Tintin) দেশ বেলজিয়াম। এই ম্যাচে বলের দখল, সফল পাসের হার প্রায় সমান সমান হলেও, গোলমুখী শটের তুল্য-মূল্য বিচারে অনেকটাই এগিয়ে ডেনমার্ক। তাদের একুশটি শটের বিপক্ষে বেলজিয়ামের মাত্র ছয়টি। এতে বেলজিয়াম বক্সের সামনে ডেনমার্ক ঠিক কতটা জায়গা পেয়েছে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়।
গোটা বেলজিয়াম রক্ষণ ভাগ কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলোনা, দেনায়ের তো একেবারেই নয়। লিয়েন্ডার ডেন্ডনকারের (Leander Dendoncker) পাশে অনেকটা জায়গা পেয়েছেন পৌলসেন, মার্টিন ব্রেথওয়েট (Martin Braithwaite) এবং মিকেল ডামসগার্ড (Mikkel Damsgaard)। ব্রেথওয়েট এই মরসুমে বার্সেলোনার (Barcelona) হয়ে সুযোগ পেয়েছেন গত মরসুমের তুলনায় বেশি। করেওছেন সাতটি গোল। শেষ দশ মিনিটে অন্তত বার তিনেক গোল শোধের খুব কাছে পৌঁছে গেছিলেন। যার মধ্যে ৮৭ মিনিটে থিবো কুর্তোয়াকে (Tibaut Courtois) দাঁড় করিয়ে রেখে তাঁর হেড বারপোস্টের কোনায় লেগে বেরিয়ে যায়। চোট না থাকলে খুব সম্ভবত দেডরিক বোয়াটা (Dedryck Boyata) ফিরবেন ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে। রক্ষণ মেরামত না করলে নক-আউট পর্বে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ‘দ্য রেড ডেভিলস’দের (The Red Devils)।
এডেন হ্যাজার্ড এবং ইউরো ২০২০-তে প্রথম ম্যাচে না খেলা কেভিন দে ব্রুইনে (Kevin De Bruyne) এবং এক্সেল উইটসেলকে (Axel Witsel) দ্বিতীয়ার্ধে পরপর নামান বেলজিয়ান কোচ রবের্তো মার্টিনেজ (Roberto Martinez)। খেলার গতিমুখ ঘুরে যায় ১৮০ ডিগ্রী। পনেরো মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে রোমেলো লুকাকু (Romelo Lukaku), দে ব্রুইনে এবং হ্যাজার্ড ভাইদের যুগলবন্দী।
প্রথম গোলের ক্ষেত্রে বক্সের ভিতর সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়েও নিজে শট না নিয়ে আলতো করে বাম দিকে ঠেলে দেন দৌড়ে আসা থরগান হ্যাজার্ডকে (Thorgan Hazard) লক্ষ্য করে। জীবনের সপ্তম আন্তর্জাতিক গোলটি করে ফেলেন এডেন হ্যাজার্ডের (Eden Hazard) ভাই (১-১)।
দ্বিতীয় গোলটির সূত্রপাত-ও হয় ইন্টার মিলানের (Inter Milan) হয়ে দুরন্ত ফর্মে থাকা লুকাকুর পা থেকে। চূড়ান্ত টিমগেমের ফসল এই গোলটি। ডানদিকের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছ থেকে লুকাকুর পাস, সেখান থেকে একটা ওয়াল তিয়েলেম্যান্সের (Youri Tielemans) সাথে, সেখান থেকে একটা স্কোয়ার পাস থরগান হ্যাজার্ডকে, থরগানের একটা ওয়াল এডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে, এডেনের সাজিয়ে দেওয়া বল আগুয়ান দে ব্রুইনের বাঁ পায়ে – জোরালো শটে গোল করে যান দে ব্রুইনে (২-১)।
লুকাকু অসাধারণ বক্স স্ট্রাইকার হলেও, ওনার প্রবণতা আছে বক্সের একটু ডান দিক ঘেঁষে থাকা। প্রথমার্ধে কড়া ডাবল মার্কিং-এর আওতায় থাকা লুকাকু যোগ্য সঙ্গতের অভাবে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারছিলেন না। দ্রায়েস মের্টেন্স (Dries Mertens) এবং ফেরেরা কারাসকো (Ferreira Carrasco) বেশ নিষ্প্রভ ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে প্রত্যাশিত পরিবর্তনের পর সেই লুকাকু-ই বেশ খানিকটা জায়গা পেতে থাকায় বেলজিয়ামের আক্রমণগুলো ধারালো হয়ে ওঠে।
দুরন্ত খেলেও খালি হাতে ফিরতে হলো ড্যানিশ ডায়নামাইটদের (Danish Dynamite)। তাঁদের বিস্ফোরণ শক্তিশালী হলেও প্রবল পরাক্রমশীল রেড ডেভিলদের হারানো গেল না। গ্রুপ-বি থেকে নক-আউটে যাওয়া বেলজিয়াম নিশ্চিত করলেও, বাকি তিনটি দলের মধ্যে যে কেউ পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারে। সৌভাগ্যবশত রুশদের বিরুদ্ধে আগামী সোমবারের সেই ম্যাচটিও লাল-সাদারা খেলবে নিজেদের মাঠেই।