বুদাপেস্টে (Budapest) গ্রুপ অফ ডেথের (Group of Death) শেষ খেলায় মুখোমুখি হয়েছিলো বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স আর ইউরো জয়ী পর্তুগাল। ২০১৬-তে এই ফ্রান্সকে হারিয়েই ইউরো জিতেছিল পর্তুগাল। ২-২ শেষ হলো খেলা। পরবর্তী রাউন্ডে গেলো দু দলই।
এই খেলার আগে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে আগেই চলেই গেছিলো ফ্রান্স (France national football team), তাদের কাছে এটা ছিলো গ্রুপ শীর্ষে যাওয়ার লড়াই। আর সেই লক্ষে কান্তে (N’Golo Kanté), পোগবা (Paul Pogba), বেনজিমা (Karim Benzema), গ্রিজম্যান (Antoine Griezmann), এমব্যাপেদের (Kylian Mbappé) রেখে যথেষ্ট শক্তিশালী দল নিয়েই খেলতে নেমেছিলো তারা।
অপরদিকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থেকে খেলতে নামা পর্তুগালের (Portugal national football team) অন্তত ড্র করলেই পরবর্তী রাউন্ডে নিশ্চিত ছিল। শুধু তাই নয় কম ব্যবধানে হারলেও সেরা তৃতীয় দল হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ ছিল। পর্তুগালের দল নির্বাচনের একমাত্র চমক ছিলো ব্রুনো ফার্নান্দেজের (Bruno Fernandes) শুরু থেকে না থাকা।
খেলা শুরুর আগে মূল প্রশ্নটা ছিল জার্মানির কাছে ৪ গোল খাবার পর পারবে কি পর্তুগাল এমব্যাপেদের শক্তিশালী আক্রমণভাগকে আটকাতে? যদিও এতো শক্তিশালী আক্রমণ ভাগ নিয়ে অনেক সুযোগ তৈরি করেও এখনো অবধি মাত্র দুটো গোল করতে পেরেছিলো ফ্রান্স। অন্যদিকে জার্মানির কাছে ৪ গোল খেলেও রোনাল্ডোর নেতৃত্বে দুটি খেলায় মোট ৫ গোল করে পর্তুগাল প্রমান করেছে গোল করতে তারা ভালোই পারদর্শী।
প্রথমার্ধের খেলাতে অবশ্য কোনো দলের আক্রমণ সেভাবে দানা বাধেনি। তুলনামূলক বিচার করলে খেলার গতির নিয়ন্ত্রণ খানিকটা হলেও পর্তুগালের কাছে বেশি ছিল। বেনজেমা, এমব্যাপেরা সেভাবে বল পাননি। একবারও এমব্যাপের বিপদজনক দৌড় বা গ্রিয়েজমানের ডিফেন্স চেরা পাস দেখা যায়নি। তুলনায় স্যাঞ্চেস (Renato Sanches), মুটিনহো (João Moutinho) জোটাদের (Diogo Jota) মাঝমাঠে অনেক বেশি সচল লেগেছে।
প্রথমার্ধের খেলায় উল্লেখজনক ঘটনা বলতে খালি দুটো বিতর্কিত পেনাল্টি আর তার থেকে দুটো গোল। ২৭ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গোলকিপার হুগো লোরিস (Hugo Lloris) বল বের করতে গিয়ে ডানিলোকে (Danilo Pereira) আঘাত করলে পেনাল্টি দেন রেফারী। সেটা থেকে রোনাল্ডো গোল করতে ভুল করেননি (১-০)।
৪৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল শোধ করেন বেনজিমা (১-১)। বক্সের মধ্যে এমব্যাপে কে আটকাতে গিয়ে ফাউল করলে পেনাল্টি দেন রেফারী। দুটো পেনাল্টিই বিতর্কিত হলেও দ্বিতীয়টি বেশি বিতর্কের দাবি রাখে।
বিরতির পরই অবশ্য বেনজিমা বিতর্কহীন গোল উপহার দিলেন। ৪৭ মিনিটে ডান দিক থেকে পোগবার দুরন্ত পাস থেকে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোল করে যান তিনি (১-২)। এক মিনিট পরেই অবশ্য রোনাল্ডো অসাধারণ হেডে প্রায় সমতা ফিরিয়ে ফেলেছিলেন।
সেই রোনাল্ডোই ৫৮ মিনিটে আবার পেনাল্টি থেকে গোল শোধ করেন। বক্সের মধ্যে কন্ডে (Jules Koundé) পরিষ্কার হ্যান্ডবল করলে সঙ্গত কারণেই পেনাল্টি দেন রেফারী (২-২)। এই গোলটির ফলে ১০৯ আন্তর্জাতিক গোল হলো তার। যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন রোনাল্ডো।
একইসাথে দুটো নতুন রেকর্ড গড়লেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দেশের হয়ে ১০৯ টি আন্তর্জাতিক গোল করে ইরানের আলি দাই-এর (Ali Daei) বিশ্বরেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। এছাড়াও প্রথম পর্তুগিজ ফুটবলার হিসেবে কোনও একটি ইউরোতে ৩টি গ্রুপ ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই গোল পেলেন তিনি। পর্তুগালের হয়ে শেষ ৪ টে ইউরোর গ্রুপ ম্যাচে ৭ গোল করে ফেললেন রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। পর্তুগালের জার্সি গায়ে গত ৪৫ টি আন্তর্জাতিক এটি তাঁর ৪৮-তম গোল।
এরপর ৬৭ মিনিটে পর্তুগালের গোলকীপার প্যাট্রিসিও (Rui Patrício) বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া পোগবার শট অনবদ্য দক্ষতায় না আটকালে আবার এগিয়ে যেত ফ্রান্স। শুধু তাই নয় ফিরতি বলে গ্রিজমানের নেওয়া শটটিও আটকে দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বলতেই হয় প্রতি খেলাতেই মাঝমাঠে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলে চলেছেন পোগবা। মাঝ থেকে তার ঠিকানা লেখা পাসগুলো বার বার বিপদ তৈরি করছে প্রতিপক্ষের রক্ষণে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই বেশ কিছু পরিবর্তন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৬৬ মিনিটে টোলিসওর (Corentin Tolisso) জায়গায় কোমান (Kingsle Coman) আর ৭২ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার (Bernardo Silva) জায়গায় ব্রুনো ফার্নান্দেজের নামা। এরমধ্যে বায়ার্ন মিউনিখে (FC Bayern Munich) খেলা কোমানকে বিশেষ নজর পড়লো। ডান দিক থেকে বার বার বিপদজনক দৌড় বিপদে ফেলছিলো পর্তুগালকে।
খেলার একদম শেষে ৮৭ মিনিটে গ্রিজমানকে বসিয়ে সিসকোকে (Moussa Sissoko) নামায় ফ্রান্স। ফার্নান্দেজের খেলা অবশ্য অতটা নজরে পড়েনি।উল্টে ৯০ মিনিটে বাঁ দিক থেকে বিপদজনক ভাবে কোমান ঢুকে পড়ার সময় ফার্নান্দেজের বাধায় বক্সের ঠিক মাথায় পড়ে গেলে পেনাল্টিও পেতে পারতো ফ্রান্স।
খেলার শেষ ১৫ মিনিট কোনো দলই আক্রমনের বিশেষ তাগিদ দেখায় নি। আর গোল না খেয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত করাই লক্ষ্য ছিলো। বিশেষত সমান্তরাল চলা জার্মানি (Germany national football team) ও হাঙ্গেরির (Hungary national football team) খেলায় অনিশ্চিত ফলাফলের জন্য হারার ঝুঁকি নিতে চায় নি পর্তুগাল। ফ্রান্সের জন্য খারাপ খবর বিরতিতে পরিবর্ত নামা লেফট ব্যাক লুকাস ডিগনে (Lucas Digne) ৫২ মিনিটেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এভারটনের (Everton FC) এই খেলোয়াড়কে সম্ভবত আর এই ইউরোতে (UEFA EURO 2020) দেখা যাবে না।
ড্র হলেও দুই দলই খুশি হবে আজকের খেলায়। ফ্রান্সের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর বেনজিমার গোলে ফেরা। রিয়েল মাদ্রিদে (Real Madrid CF) দারুন খেলে বহুদিন পর জাতীয় দলে ফেরত এসে গোল পাচ্ছিলেন না তিনি। অন্যদিকে জার্মানির কাছে ৪ গোল খেলেও আজ পর্তুগাল রক্ষণ এবং মাঝমাঠ অনেকটা জমাট খেললো। বিতর্কিত পেনাল্টি না ধরলে ফ্রান্স একবারই পর্তুগিজ ডিফেন্সকে পরাস্ত করে তা থেকে গোল করেছে। বাকি সময় মূলত দূরপাল্লার শটই নিয়েছে। বিশেষত প্রান্ত বরাবর কখনোই এমব্যাপে-কে বিপদজনক হয় নি।
সবশেষে যোগ্য দল হিসেবেই গ্রুপ অফ ডেথে ফ্রান্স প্রথম আর পর্তুগাল তৃতীয় হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে গেলো।