আট-গোলের রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারে ইউরোর শেষ আটে স্প্যানিশ আর্মাডা; বিদায় বিশ্বকাপ রানার্সদের

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মাঝমাঠের দুই স্তম্ভ লুকা মদ্রিচ (Luka Modrić) এবং বুসকেটের (Sergio Busquets) নেতৃত্বে কোয়াটার ফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্যে শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন (Spain national football team) আর ক্রোয়েশিয়া (Croatia national football team)। নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ এই খেলায় অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল করে (৫-৩) কোয়ার্টার ফাইনালে গেলো স্পেন।

পরিচত ৪-৩-৩ ছকে খেলতে নামে দুই দলই। করোনার জন্য আক্রমণভাগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আর ধারাবাহিক খেলোয়াড় পেরিসিচকে (Ivan Perišić) ছাড়াই এই ম্যাচে নামতে হয়েছিলো ক্রোয়েশিয়াকে। প্রত্যাশিতভাবেই পেরিসিচের অভাব সারা খেলাতেই দেখা গেছে। অপরদিকে আগের খেলাগুলোতে প্রবলভাবে সমালোচিত আর ফর্মে না থাকা মোরাতাকে আক্রমণভাগে রেখেই দল সাজিয়েছিল স্পেন।

রঙিন ইউরো: ম্যাচের আগে দুদলের সমর্থকরা। পরে অবশ্য বদলে গেলো দুদলের অভিব্যক্তি।

শুরু থেকেই খেলার দখল সম্পূর্ণ ভাবে স্পেনের কাছেই ছিল। সারাবিয়া (Pablo Sarabia) আর তোরেসের (Ferran Torres) সৌজন্যে দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের ঝড় উঠছিলো ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণে। এর সাথেই অবশ্য শুরু হয় স্পেনের গোল নষ্টের প্রদর্শনী। ১৮ মিনিটে একা গোলকিপারকে পেয়েও গোল করতে পারেননি কোকে (Koke)। একটু পরেই ডান দিক থেকে তোরেসের (Ferran Torres) দুর্দান্ত সেন্টার ফাঁকায় পেয়েও হেড গোলে রাখতেই পারেননি মোরাতা (Álvaro Morata)।

এরপর খেলার গতির বিরুদ্ধে ২০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকে অবিশ্বাস্য গোল উপহার দিলেন স্পেন গোলকিপার সাইমন (Unai Simón)। মাঝমাঠ থেকে করা একটা নির্বিষ ব্যাকপাসকে কোনো চাপ ছাড়াই মুহূর্তের মনোসংযোগের অভাবে পায়ের তলা থেকে গলিয়ে দেন তিনি (০-১)। প্রতিযোগিতার এটি নবম নিজেস্ব গোল। তবে নিঃসন্দেহে এটি সবথেকে হাস্যকর। এতক্ষন একবারও আক্রমণে না উঠতে পারা ক্রোয়েশিয়া এই গোলটি পেয়ে খানিকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে শুরু করে। খুব কম সময়ের ব্যাবধানে বেশ কয়েকবার গোলের কাছাকাছি চলে যান তারা।

তবে খানিক্ষণের মধ্যেই ধীরে ধীরে খেলায় ফিরে আসে স্পেন। ৩৭ মিনিটে সারাবিয়া সমতায় ফেরায় স্পেনকে। ডান প্রান্ত বরাবর তোরেসের শুরু করা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে অপরপ্রান্তে একাধিক প্রচেষ্টার পরে অবশেষে শট মারতে সক্ষম হন গায়া (José Gayà)। সেই শট গোলকীপার বাঁচালে ফিরতি বলে গোল করে যান সারাবিয়া (১-১)

স্পেনকে সমতায় ফেরালেন সারাবিয়া

প্রথমার্ধের শেষের ঠিক আগে একটা পুনরায় এগিয়ে যাবার দারুন সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। ঠিক সময়ে গোল ছেড়ে বেরিয়ে রেভিচের (Ante Rebić) উদ্দেশ্যে বাড়ানো বলকে ক্লিয়ার করে বড় বিপদ আটকান সাইমন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একই গতিতে খেলা শুরু করে স্পেন। মাঝমাঠের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে মদ্রিচদের খেলতেই দেয়নি স্পেন। ৫৭ মিনিটে তোরেস বাঁ দিক থেকে ৬ গজের বক্সে সুন্দর একটা সেন্টার রাখলে পেছন থেকে উঠে এসে হেডে গোল করে দিয়ে যান চেলসিতে (Chelsea F.C.) খেলা রাইট ব্যাক আজপিলিকুয়েটা (César Azpilicueta) (২-১)

৭৬ মিনিটে তোরেস নিজে গোল করে ৩-১ এ এগিয়ে দেন স্পেনকে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো একটা লম্বা বল ডান প্রান্তে রিসিভ করে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান তিনি। সারা খেলায় বার বার প্রান্ত বদল করে ক্রোয়েশিয়ানদের বিভ্রান্ত করতে দেখা গেলো সারাবিয়া আর তোরেসকে।

৩-১ এগিয়ে থাকা অবস্থায় স্পেন সম্ভবত একটু আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলো। সেই সুযোগে ৮৫ মিনিটে একটা গোল শোধ করে খেলা জমিয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়া। ডান দিক থেকে বক্সে ঢুকে মদ্রিচ গোলের দিকে বিপদজনক নিচু সেন্টার করলে জটলা থেকে গোল করে যান পরিবর্ত নামা ওরিসিচ’ (Mislav Oršić) (২-৩)। সারা খেলায় দেখতে না পাওয়া ক্রোয়েশিয়া হঠাৎ করেই জেগে ওঠে শেষ ১০ মিনিটে। এই সময়ে খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো স্পেন। ৯০ মিনিটে ওরিসিচের সেন্টারে আরেক পরিবর্ত পাসালিচ (Mario Pašalić) হেডে ৩-৩ করে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান খেলা।

শেষ মুহূর্তে ৩-৩ করেও হার বাঁচানো গেলো না

অতিরিক্ত সময়ের শুরুটা দারুন করেছিলো ক্রোয়েশিয়া। বিশেষ করে বাঁ দিক থেকে ওরিসিচ বার বার বিপদ তৈরি করছিলেন স্পেনের রক্ষণে। এইসময় একাধিক সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়া। ৯১ মিনিটে ওরিসিচ ভালো জায়গা পেয়েও শট রাখতে পারেননি গোলে । ৯৫ মিনিটে আবার সেই ওরিসিচের বা দিক থেকে রাখা বিপদজনক বল থেকে ক্রামরিচের (Andrej Kramarić) শট অনবদ্য সেভ করে স্পেনকে খেলায় রাখেন সাইমন। একটু পরেই এই সহজ সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হলো ক্রোয়েশিয়াকে।

১০০ – ১০৩ মিনিটে নাটকীয় ভাবে পর পর দুই গোল করে খেলায় দ্বিতীয় বার (৫-৩) দুই গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। ১০০ মিনিটে দ্বিতীয় পোস্টে ওলমোর (Dani Olmo) সেন্টারে বল পেয়ে বা পায়ের শটে দুর্দান্ত গোল করে মোরাতা স্পেনকে এগিয়ে দেন (৪-৩)। আগের খেলাগুলোতে পেনাল্টি সহ একাধিক মিস করায় অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিলো তাকে। এই গোলটি তাঁকে অনেকটা আত্মবিশ্বাস আর সমালোচকদের জবাব দিতে সাহায্য করবে।

১০৩ মিনিটে ওলমোর ডান দিক থেকে রাখা নিচু সেন্টারে বল পেয়ে স্পেনের ৫ নম্বর গোল করে যান ওয়ারজাবাল (Mikel Oyarzabal) (৫-৩)। নির্ধারিত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই একাধিক পরিবর্তন করেছিলো। এরমধ্যে ওরিসিচ আর ওলমো নিজের নিজের দলের জন্য পরিবর্ত হিসেবে নেমে অসাধারণ খেলা উপহার দিয়ে গেলেন।

অতিরিক্ত সময়ে স্পেনকে জেতালেন মোরাতা এবং ওয়ারজাবাল

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার ৰুদিমিরের (Ante Budimir) নেওয়ার শট আটকে দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে আর খেলায় ফিরতে দেননি সাইমন। বাকি সময়টা গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ক্রোয়েশিয়ার একাধিক খেলোয়াড় ওপরে উঠে আসায় অনেকগুলো সুযোগ পায় স্পেন। তবে মোরাতা, ওলমোরা আর গোল সংখ্যা বাড়াতে পারেননি । ১১৯ মিনিটে ওলমোর অবধারিত গোল বারে না লাগলে অবশ্য ৬ গোল করেই খেলা শেষ করতো স্পেন।

সবশেষে বলতে হয় খেলার শেষে সাইমন খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে উঠলেন। স্পেন ৫ টি গোল করলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবধারিত কিছু গোল না বাঁচালে খেলার ফল অন্য রকম হতো। আজকের ফলাফল যাই হোক দর্শকদের জন্য এরম নাটকীয় এবং উপভোগ্য খেলা উপহার দেওয়ার জন্য দুই দলের খেলোয়াড়দের অনেক প্রশংসা প্রাপ্য।

স্থায়ী হলো না ক্রোটদের উচ্ছ্বাস

এই খেলায় জিতে স্পেন কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের (Switzerland national football team) সাথে, যাঁরা ফ্রান্সকে (France national football team) হারিয়ে অঘটন ঘটালেন ইউরোতে। তার আগে পর পর দুটি খেলায় দাপটের সাথে খেলে মোট ১০ গোল দিয়ে অনেকটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখলো তাঁরা।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.