কি এই ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (European Super League) যা নিয়ে এত বিতর্ক?

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

ইউরোপের ফুটবল মানচিত্রে ঘোর বদল হওয়ার আশঙ্কা করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা, সৌজন্যে গতকালের একটি ঘোষণা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস সহ ইউরোপের ১২ টি জনপ্রিয় ক্লাব গতকাল ঘোষণা করে যে তারা একটি প্রতিযোগিতার সূচনার পক্ষে রায় দিয়েছেন, যার নাম “ইউরোপিয়ান সুপার লীগ” (European Super League)। তবে এই ঘোষণার সাথে সাথেই বিশ্বজুড়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়।

কি এই ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (European Super League)?

ঠিক যেভাবে ইউরোপের সেরা ৩২ ক্লাবগুলো নিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ (UEFA Champions League) খেলা হয়, সেভাবেই ইউরোপের সেরা ২০ টি দল নিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (ESL) চালু করার ভাবনা চলছে। তবে খেলার ধরণ বা “ফরম্যাটে” তফাৎ থাকবে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে (UCL) ৮ টি গ্রুপ বানিয়ে প্রতিটি গ্রুপে ৪ টে করে টিম রাখা হয়, যেখানে প্রতিটি টিম একে অপরের সাথে হোম-আওয়ে নিয়মে খেলে, আর প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেরা ২ টি দল রাউন্ড অফ সিক্সটিনে, অর্থাৎ শেষ ষোলোয় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। অতঃপর নক আউট পদ্ধতিতে বাকি ম্যাচ খেলা হয়, সেমি ফাইনাল অব্দি হোম-আওয়ে নিয়মে খেলা হয় আর ফাইনাল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলা হয়।

ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (European Super League) পুরোটাই “লীগ” ফরম্যাটে খেলা হবে। ২০ টি দল নিয়ে একটি লীগ তৈরি করা হবে যেখানে প্রতিটি দল বাকি ১৯ টি দলের সাথে হোম-আওয়ে পদ্ধতিতে খেলবে। প্রতিটি দলের মোট ম্যাচ সংখ্যা হবে ৩৮, আর সম্ভবতঃ শেষে যেই দল ১ নম্বরে শেষ করবে তাকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে (ফাইনাল নকআউট খেলা হবে কি না সেই নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে)। অনেকটা যেভাবে প্রিমিয়ার লীগ (Premier League), লালিগা (LaLiga) খেলা হয়, সেভাবেই খেলা হবে ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (ESL)।

এই প্রোজেক্টের জন্য এখনও অব্দি পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৭৪৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে আমেরিকান ব্যাঙ্ক জেপি মরগ্যানের (JP Morgan) তরফ থেকে।

কারা এই ইউরোপিয়ান সুপার লীগের পক্ষে রায় দিয়েছে?

ইংল্যান্ড: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United F.C.), ম্যানচেস্টার সিটি (Manchester City F.C.), চেলসি (Chelsea F.C.), লিভারপুল (Liverpool F.C.), আর্সেনাল (Arsenal F.C.), টটেনহ্যাম হটস্পার্স (Tottenham Hotspur F.C.)
স্পেন: রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid C.F.), আতলেতিকো মাদ্রিদ (Atlético Madrid), বার্সেলোনা (FC Barcelona)
ইতালি: জুভেন্টাস (Juventus F.C.), ইন্টার মিলান (Inter Milan), এসি মিলান (A.C. Milan)

লিভারপুলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
রিয়াল মাদ্রিদের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

কারা ইউরোপিয়ান সুপার লীগের বিপক্ষে রায় দিয়েছে?

বিতর্ক এড়ানোর জন্য সেভাবে কেউ এর বিপক্ষে রায় দেয়নি। প্রথমদিকে ফ্রান্স এবং জার্মানি চ্যাম্পিয়ন পিএসজি (Paris Saint-Germain F.C.) এবং বায়ার্ন মিউনিখ (FC Bayern Munich) সুপার লীগ খেলতে ইচ্ছুক ছিল না। তবে শোনা যাচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে বায়ার্ন মিউনিখ (FC Bayern Munich), আরবি লিপজিগ (RB Leipzig), পোর্তো (FC Porto) তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (ESL) এলে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের (UCL) কি হবে?

এক বছরে ৫২ সপ্তাহ হয়। জুন-জুলাই মাসে প্রি-সিজন থাকায় ৮ সপ্তাহ এমনই কোনো প্রতিযোগিতা মূলক খেলা হয়না, তার ওপরে সিজনের মাঝে “ইন্টারন্যাশনাল ব্রেক” (International Break in Football) থাকে যেই সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়। এর পর মোটামোটি ৩৫-৪০ সপ্তাহ হাতে পাওয়া যায় ক্লাবস্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা আয়োজন করতে। এরই মধ্যে যদি ৩৮ সপ্তাহ ধরে সুপার লীগ খেলা হয় তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ আয়োজন করার মতো সময় হাতে থাকবেনা। ফলে ফুটবল ভক্তদের একাংশের আশঙ্কা, এরফলে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অবলুপ্তির পথে যেতে পারে।

খেলোয়াড়দের ওপরে সুপার লীগের কি প্রভাব পড়বে?

চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে পৌঁছাতে গেলে ১২টি ম্যাচ খেলতে হয় যেকোনো টিমকে। সপ্তাহান্তে (উইকেন্ডে) ডোমেস্টিক লীগের (যেমন ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লীগ, স্পেনে লালিগা) খেলা থাকে বলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচ মাঝসপ্তাহে আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে মাত্র দুটি দল ১৩ টি ম্যাচ খেলে (যারা ফাইনাল অব্দি যেতে পারে), বাকি দল আরো কম খেলে। হুট করে এই সংখ্যাটা বেড়ে ৩৮ হয়ে গেলে খেলোয়াড়দের ওপর ম্যাচের প্রেশার বেড়ে যাবে, কম সময়ে বেশি ম্যাচ খেলতে গিয়ে যে ঘন-ঘন চোটের সম্মুখীন হতে হবে তাদের সেটা বোঝাই যায়। এছাড়াও মাথায় রাখতে হবে ডোমেস্টিক কাপেরও (উদাহরণস্বরূপ এফ এ কাপ, কোপা ডেল রে, কোপা ইতালিয়া) ম্যাচ থাকে মাঝসপ্তাহে!!!

ছোট ক্লাবগুলো কি আদৌ কোনো সুবিধা পাবে?

সুপার লীগের জন্যে ছোট ক্লাবরা তো একদমই সুবিধা পাবেনা, ওপর দিয়ে তাদের এবং বড় ক্লাবদের মধ্যে আরো পার্থক্য গড়ে দেবে এই প্রতিযোগিতাটি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যেই ৩২ টি দল খেলে তাদের মধ্যে ১০-১২ টি ক্লাব আদতে কাপ জেতার উপযুক্ত হয়। বাকি ২০-২২ টি দল তাদের দেশের সেরা হলেও ইউরোপের সেরা হওয়ার মতো হয়না, তাও যেহেতু তারা ইউরোপের সবথেকে বড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, তাই স্পন্সরশিপ থেকে ভাল অর্থ উপার্জন করে। তার ওপর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ভিউয়ারশীপ বা ব্রডকাস্টিং রাইটস থেকেও অর্থ উপার্জন হয়, যা থেকে তারা নিজেদের ফেসিলিটিস, দলের গভীরতা এবং আরো জিনিসে অর্থ লগ্নি করতে পারে।

কেন এত বিতর্ক:

ইউরোপিয়ান সুপার লীগ এলে এটাকেই ইউরোপের সেরা প্রতিযোগিতা বলা প্রচার করা হবে, কারণ ইউরোপের বড়ো দলগুলিই কেবলমাত্র এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু এখানে খেলবে মোটে ২০ টি দল। আগে যে অর্থ বড় এবং ছোট ক্লাবের মধ্যে ভাগ করা হতো, এখন সেই একই অর্থ (বা তার থেকেও বেশি অর্থ, কারণ ম্যাচ সংখ্যা বেশি) শুধু মাত্র ওই ক্লাব গুলোকেই দেওয়া হবে, যাদের কাছে এমনিতেই সেরকম অর্থের অভাব নেই। ফলস্বরূপ যারা আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলে খানিকটা অর্থ কমাতে পারতো তারা আর সেটা পারবেনা, আর এই সুপার লীগের কারণে দেশীয় লীগেও বড়ো এবং ছোট ক্লাবগুলোর মধ্যে পার্থক্য বাড়বে, যার ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাবে এবং মুষ্টিমেয় কয়েকটি ক্লাবের এক চেটিয়া অধিকার চলে আসবে কাপের ওপর।

বিভিন্ন সময়ে বেলাগাম অর্থের বিরুদ্ধে ফ্যানদের প্রতিবাদ দেখা গেছে ফুটবল মাঠে

ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাগুলোর কি বক্তব্য?

উয়েফা (UEFA), ফিফা (FIFA), প্রিমিয়ার লীগ (Premier League), লা লিগা (LaLiga), সিরি এ (Serie A) – প্রত্যেকে এই ব্যাপারে এখনও অব্দি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ (UCL) না খেললে ঘরোয়া কোনও লীগে খেলতে পারবে না দলগুলি, এই মর্মেই বিবৃতি দিয়েছে তাঁরা। এমনকি যে সমস্ত ক্লাব এবং তাদের খেলোয়াড়রা ইউরোপিয়ান সুপার লীগে (ESL) অংশগ্রহণ করবে, তাদের সমস্ত ধরণের উয়েফা এবং ফিফা পরিচালিত টুর্নামেন্ট থেকে ব্যান করা হতে পারে। যার অর্থ, এই হুমকি যদি কার্যকরী হয়, তাহলে শুধু লালিগা থেকে বার্সেলোনা বা সিরি এ থেকে জুভেন্তাসের মতো টিম ব্যান হবে তাই নয়, লাওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকেও হয়তো বিশ্বকাপের মঞ্চে নাও দেখা যেতে পারে।

সব মিলিয়ে, সমস্ত ফুটবল দুনিয়া এখন ইউরোপিয়ান সুপার লীগ (ESL) বনাম উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ (UCL) বিতর্কে সরগরম। শেষ পর্যন্ত কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়, এখন সেটাই দেখার।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.