Recap
হেডকোচ রবার্ট ফাওলারের ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে করা মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া সহ বাংলার ফুটবলমহল বেশ আলোড়িত হলেও নারায়ন দাস, শেহনাজ সিং, আম্বেকর, মহঃ রফিক দের মধ্যে যে কোনরকম হেলদোল আসেনি তাদের হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অর্ধের খেলা থেকেই তা পরিষ্কার। দৌড়ানো আর বলে লাথি মারা, ব্লক করা ছাড়াও মস্তিষ্কের ব্যবহার ও যে ফুটবলে প্রয়োজন হয় সেটা এদের খেলা দেখলে বোঝাই যায় না। বিদেশীদের মধ্যে স্কট নেভিলের সাথে নিশ্চিতভাবে এদের খুব ভালো জমবে। মস্তিষ্কের ব্যবহার আপাততঃ তো স্কট নেভিল করেনইনি উল্টো পায়ের ফাঁকা দিয়ে বল গলে যাওয়া আটকানোর চেষ্টাও ওনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিদেশী সাইডব্যাক আমদানি হলে ডিফেন্সের সাথে সাথে আক্রমনে ঝড় ওঠার আশা করাই যায়, সেখানে স্কট নেভিল ডিফেন্সে বল আটকাতে এতোটাই ব্যর্থ যে আক্রমনের সময় ঐদিকটায় এটিকে র প্রথম আইএসেল জয়ের কান্ডারী মহঃ রফিক সেন্টার তুলছেন যেগুলো আবার নিঃসীম শূন্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, বক্সে অপেক্ষারত ফরোয়ার্ড রা আর তার নাগাল পাচ্ছেন না। আগের দিন বরং সাইডব্যাকের ভূমিকায় অনেক বেশী সাবলীল ছিলেন। এতো বছরের অভিজ্ঞ একজন ঠিকঠাক সেন্টার তুলতে না পারলে ভারতীয় ফুটবলের কত ভালো বিজ্ঞাপন বিদেশী কোচ দের কাছে গিয়ে পৌছায় রীতিমতো গবেষনার বিষয়বস্তু হতে পারে। এর আগে ইষ্টবেঙ্গলের আরেক ইউরোপিয়ান কোচকে প্র্যাকটিসে পায়ের কোন অংশ দিয়ে বল রিসিভ আর কোন অংশ দিয়ে বলে মারতে হয় তার ট্রেনিং দিতেও দেখা গেছিলো।
তবে ইমপোর্টেড সাইডব্যাকের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা ছিলো সেটা চোখে আঙুল দিয়ে করে দেখিয়ে দিয়ে গেল হায়দ্রাবাদের আশিষ রাই। প্রথম গোলটা ওর দিক থেকে হলেও গোটা ম্যাচ জুড়ে যেভাবে বারবার ইষ্টবেঙ্গল রক্ষনে হানা দিয়ে নিজেদের রক্ষন অটুট রেখে গেলো তাতে পরের বছর টিমগুলোর ম্যানেজমেন্টে ওকে নিয়ে আলোচনা হতে বাধ্য। কারন দেশী সাইডব্যাকদের মধ্যে নারায়ন দাস বা আম্বেকরের মতো সিনিয়রদের তো কোন পজিশনে কখন ফাউল করতে হয় সেই কমন সেন্সটুকুও নেই। প্রথম ম্যাচে যখন মনবীরকে তাড়া করার দরকার ছিলো তখন ফাইনাল ট্যাকলে চলে গেলেন, তাও ফলস। আর আজ দল এগিয়ে থাকা অবস্থায় বক্সের ঠিক মাথায় স্কোরিং জোনে ফাউল করে ম্যাচের রাশ প্রতিপক্ষ কে উপহার দিলেন। শেহনাজ সিং বক্সের ভেতর অতো কষ্ট করে এক্রোবেটিক কিক্ ছুঁড়ে প্রতিপক্ষ কে যে পেনাল্টি টা উপহার দিলেন সেটা সম্ভবতঃ ভারতীয় ফুটবলের আতিথেয়তার ঐতিহ্যের নিদর্শন।
যদিও উল্টোদিকে হায়দ্রাবাদের ভারতীয় তরুন ফুটবলারদের পারফরম্যান্স যথেষ্ঠ আশাব্যঞ্জক। দুই ব্যাক আশিষ রাই-আকাশ মিশ্র আর ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসো, অবিলম্বে ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার দাবীদার। বিশেষ করে লিস্টন কোলাসো যেভাবে প্রতি ম্যাচে একাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন তাতে ভারতীয় ফুটবলে আরেকটি তারকার জন্ম শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ইষ্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে মাত্তি–মাঘোমা-পিলকিংটন ই যতটুকু ভরসা যোগানোর যোগাচ্ছেন। চার ম্যাচ পর গোলের দেখাও পেলেন ফাওলারের আক্রমন ভাগের খেলোয়াড়েরা। জোড়া গোল করে গেলেন কঙ্গোর জ্যাকুয়েস মাঘোমা। তারমধ্যে হেড থেকে করা দ্বিতীয় গোলটা আইএসেলের সেরা গোলগুলির মধ্যে থাকবে। সিকে ভিনিথ একটা সহজ সুযোগ নষ্ট করলেও ছন্দে এসে গেলে এসব জায়গা থেকে ভিনিথের অনেক অনায়াস গোল আছে। ভিনিথ তার অনভ্যস্ত পজিশনেও স্কোর করার মতো জায়গায় যে পৌছাতে পারছে এটাই বর্তমান দলের পারফরম্যান্সের নিরিখে ফাওলারের জন্য স্বস্তিদায়ক। আরেকদিকে পোস্টের নীচে দেবজিত মজুমদার আজ যেভাবে পেনাল্টি বাঁচালেন সেটাও ফাওলারকে কিছুটা স্বস্তিতে রাখবে।
তবে এই স্কোয়াড থেকে সামনে এগোনো যাবে এমন কিছু ভালো ভারতীয় খেলোয়াড় এখন থেকেই বেছে নিয়ে অন্যান্য দল গুলি থেকে সামনের বছর কাদের দলে নেওয়া যায় সেটাও এখন থেকে তালিকা তৈরী করে ফেলা উচিত। কারন বিচ্ছিন্ন ভাবে একে তাকে দলে নিয়ে যে আইএসেলে বেশীদুর এগোনো যাবেনা এটা এবছরের খেলা থেকেই পরিষ্কার। একাডেমী থেকে সাপ্লাইলাইন নামক কোন বস্তু ও মজুত নেই। একাডেমী থেকে সাপ্লাইলাইন তৈরী করে টিম তৈরীর মতো সময় ও আমাদের সমর্থকদের হাতে নেই।
তবে পঞ্চম ম্যাচ হারার দিনেও ইনভেস্টরের ক্যালাম উডস কে সাইন করানো থেকে এটা পরিষ্কার শ্রী সিমেন্ট ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাব করেই টিমের পেছনে টাকা ঢালছে। বাকি প্রশ্নের উত্তর এখনো সময়ের গর্ভে লুকিয়ে। তবে সমর্থকদের দলের পাশে থাকা এই ইনভেস্টর কে আরো ভালো কিছু উদ্যোগ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।