Recap
বিএফসির প্রাক্তন কোচ আলবার্তো রোকা আইএসেল খেলার মাঝে আফশোস করেছিলেন, ইষ্টবেঙ্গল ও তৎকালীন মোহনবাগানেরসাথে খেলার যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেটাকে খুব মিস করেন। রোকা এখন নেই, কার্লেস কুয়াদ্রাথ ও সম্প্রতি বিএফসির দায়িত্ব ছেড়েছেন। নৌশাদ মুসার প্রশিক্ষনাধীন বিএফসি বেশ কিছু ম্যাচ হেরে ইষ্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হলেও বিএফসি বনাম ইষ্টবেঙ্গল মানেই ভারতীয়ফুটবলে উন্মাদনার অন্য মাত্রা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ইষ্টবেঙ্গল ডাগ আউটে কার্ডজনিত কারনে অনুপস্থিত হেড কোচ রবার্টফাওলার। ইষ্টবেঙ্গল কি আইএসেলে স্বমহিমায় উঠে আসবে নাকি বিএফসি তাদের ব্যাডপ্যাচ কাটিয়ে ফিরবে জয়ের সরনীতে?
রোকা যদি তার পুরনো টিমের আজকের ম্যাচটা দেখে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবে খুশি হবেন। না দলের হার নয় বরং দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখে খুশি হবেন। গোটা ম্যাচ জুড়ে দুই পোস্টের নীচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন গুরপ্রীত সান্ধু আর দেবজিত মজুমদার। গত ম্যাচে সারা ম্যাচ অপ্রতিরোধ্য থেকেও একটা মাত্র ভুলের মাশুল দিতে দুই পয়েন্ট মাঠে ফেলে আসাটা দেবজিত কে যে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে সেটা আজকের খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। গোটা ম্যাচ জুড়ে একদম নির্ভুল দেবজিত। পুরষ্কারস্বরূপ গ্যালারীতে একাকী বসে থাকা কোচের জন্য তিন পয়েন্ট আর নিজের জন্য ম্যাচ সেরার খেতাব নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। উল্টোদিকে ইষ্টবেঙ্গল প্রাক্তনী গুরপ্রীত ও সময় মতো রুখে না দাঁড়ালে বিএফসিকে চরম লজ্জার মুখে পড়তে হতো।
প্রথম দুই ম্যাচে চমকের পর স্বভাবতই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ব্রাইট এনোবাখারে। নৌশাদ মুসা ডবল কভারিংয়ের বন্দোবস্ত ম্যাচের শুরু থেকেই করে রেখেছিলেন। সেই সাথে চোরাগোপ্তা মারের আয়োজন ও বরাদ্দ ছিলো। ডবল কভারিং, ম্যান মার্কিং, জোনালমার্কিং, চোরাগোপ্তা ফাউল এসব থেকে বেরোনোর টোটকাও যে উজ্জ্বলদার জানা আছে সেটাই দেখিয়ে গেলেন বিএফসি ম্যাচে। না গোল পাননি, তবে মার্কিং এড়াতে যেভাবে উঠে নেমে মাঝমাঠের খেলা নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখলেন তা প্রশংসনীয়। তিনটে গোলের সুযোগ ও পেয়েছিলেন। তিনবার ই গুরপ্রীতের তৎপরতায় কাঙ্খিত গোল হলো না। এরমধ্যে একবার গুরপ্রীত প্রায় সেন্টার সার্কল অব্দি উঠে এসেবল ক্লিয়ার করেন। একবার গুরপ্রীতের হাতে আটকে যায় ব্রাইটের শট।আরেকবার গুরপ্রীতের পায়ে মেরে বল বার করে এনেও শেষমূহুর্তে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বল জালে রাখতে পারেননি ব্রাইট। গোল না পেলেও আইএসেলের দলগুলির জন্য মাথাব্যথার কারন হয়ে থাকবেন ব্রাইট এনোবাখারে। নৌশাদ মুসার ডিফেন্ডারেরাও ব্রাইটকে আটকাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
উজ্জ্বলদা গোল না পেলেও কাজের কাজটি করে গেলেন মাত্তি স্টেইনম্যান। নারায়ন–স্টেইনম্যান যুগলবন্দী থেকে এলো গোলটা। বাঁদিকধরে বল নিয়ে উঠে এসে নারায়ন দাস বিএফসি বক্সে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ান, স্টেইনম্যান বল রিসিভ না করে পায়ের একটা ছোঁয়াতেই বলের অভিমুখ পাল্টে এমন একটা কোনে বলকে জালে ঠেললেন গুরপ্রীত নড়াচড়া করার সময়টুকুও পাননি। গোলের পাস বাড়ানো ছাড়াও নারায়ন দাস আজ প্রায় নির্ভুল খেলেছেন। ফাওলারের আরেক দুশ্চিন্তা স্কট নেভিল ও এই ম্যাচে অসাধারন রক্ষনভাগ সামলালেন। ফক্স বরাবর যেমন খেলেন তেমন ই খেললেন। রাজু সম্ভবতঃ এখনো পুরো ফিট নন, কয়েকটি ভুল থেকে ম্যাচের ফলাফল পাল্টাতেই পারতো। গোলপোস্টের নীচে দেবজিত থাকায় অবশ্য ভুলগুলির ফায়দা তুলতে পারেননি সুনীল ছেত্রীরা। অন্যদিকে দিনের সহজতম গোলের সুযোগটা মিস করলেন ইষ্টবেঙ্গলের হরমনপ্রীত। কয়েক ইঞ্চির জন্য আইএসেলে ইষ্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটা মাঠেরেখে এলেন। তবে হরমনপ্রীত কে প্রতি ম্যাচে কোচ মাঠে যা করতে নামাচ্ছেন নিষ্ঠার সাথে তা পালন করে চলেছেন। ইষ্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ যা খেলছে তাতে হরমনপ্রীতের সামনে গোল করার আরো প্রচুর সুযোগ আসতে চলেছে। দেখার বিষয় ফাওলারের মতো একজন লেজেন্ডারী গোল স্কোরারের কাছ থেকে গোল করার কি কি মন্ত্র শিখে নিয়ে মাঠে প্রয়োগ করতে পারেন।
মিলন সিং দের খেলা দিনের পর দিন উন্নত হচ্ছে। স্কট নেভিল ফিরেছেন স্বমহিমায়। অ্যারন আমাদি ও অল্প সময়ের জন্য নেমে মাঝমাঠথেকে অসাধারণ একটা পাস বাড়ালেন ব্রাইটকে। গুরপ্রীতের মতো অসাধারন কিপার না থাকলে এই পাস থেকে গোল পেয়ে যেত।সেকেন্ড লেগে সম্পূর্ন নতুন ইষ্টবেঙ্গল কে খেলতে হবে আইএসেলের বাকি টিমগুলোকে। ওপরের দিকের দলগুলি বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে। প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়া ওড়িশা, হায়দ্রাবাদ ও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। মোটকথা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় অংশেপ্রচুর উত্থান–পতন সহ উত্তেজনা র রসদ মজুদ হচ্ছে। টুর্নামেন্টের এই কঠিন অংশে ফাওলারকে সবচেয়ে বেশী স্বস্তি দেবে দলের অন্দরে সবার সাথে সবার পারস্পরিক পরিবারসুলভ সম্পর্ক, যা কিনা অনেক আন্ডারডগ টিম কেও রেসের ডার্কহর্সে বদলে দিতে পারে।তিনপয়েন্ট আসার সময় প্রশংসা যেমন হচ্ছে আবার আচমকা একটা ড্র বা হারে প্রভূত চাপ ও তৈরী হবে। এই চাপ কাটাতেই কাজে আসবে এইসব পরিবারসুলভ পারস্পরিক বোঝাপড়া। রিজার্ভ বেঞ্চ বা খেলার বাইরে ক্যামেরায় বন্দী হওয়া টুকরো টুকরো দৃশ্য থেকেইবোঝা যাচ্ছে ইষ্টবেঙ্গল টিম আছে নিরাপদ হাতেই। দুর্বল গেম রিডিং সহ আরো অনেক খামতিকে সঙ্গী করেই রবার্ট বার্নার্ড ফাওলারব হুদূর নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।