Recap
লড়াইটা আইএসেলের সবচেয়ে সমর্থকপুষ্ট দুটো ক্লাবের মধ্যে ছিলো। কোভিড পূর্ববর্তী সময় হলে গ্যালারীতে উত্তেজনার পারদ চড়ার কথা ছিলো উল্লেখযোগ্য ভাবে। কিন্তু পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী দুই দলের সম্মিলিত পয়েন্ট তাদের আগে থাকা চেন্নাইয়ানের চেয়ে এখনো তিন পয়েন্ট কম। দুই দলের কাছেই সুবর্ণ সুযোগ ছিলো তিনটি পয়েন্ট তুলে নিয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে যাওয়ার। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ কাজ লাগাতে হলেও যেটুকু নৈপুণ্য দরকার সেটুকুও এই দুই দলের মধ্যে নেই। দুই কোচের অবস্থাও তথৈবচ।
কিবু ভিখুনা গত মরশুমে আইলীগে কোচ হিসাবে যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন আইএসেলে তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারছেন না। হাতে গ্যারি হুপার, কোন, পেরেইরার মতো বিদেশী সাথে সাহাল, জিকসন, নিশু, রাহুলদের মতো একঝাঁক সম্ভাবনাময় ভারতীয় তরুন থাকা স্বত্ত্বেও জয়ের নাগাল পাননি। অন্যদিকে লিভারপুল লেজেন্ড রবার্ট ফাওলার নিজের পছন্দের বিদেশীদের নিয়ে এসেও প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে আঙ্গুসেনার ওপর ওনার অপত্য স্নেহ। আজ অভিষেক ম্যাচেই অসাধারন আক্রমনাত্মক গেম দেওয়ার পরেও তোম্বা সিং কে পুরো সময় খেলালেন না। হঠাৎ আঙ্গুসেনাকে নামিয়ে দিলেন। যার উপস্থিতি মাঠে টেরই পাওয়া যায় না, খেলোয়াড় পরিবর্তনের সময় ছাড়া!!
দলের অধিনায়ক ড্যানি ফক্স চোট সারিয়ে ফিরে আসায় টিমের ডিফেন্স শেপ অন্ততঃ আজ ঠিকঠাক ছিলো। দেবজিত ও গোলের নীচে চাপমুক্ত হয়ে আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে অনেকটাই ভালো খেললেন। একবার নিশ্চিত পতনের হাত থেকে বাঁচালেন দলকে। যদিও শেষরক্ষা হলো না। প্রায় গোটা ম্যাচ জুড়ে ডিফেন্স ঠিকঠাক খেলায় মাঝমাঠ ও আক্রমনভাগেও দল বেশ ভালোই খেললো। বল পজেশনে পিছিয়ে থাকলেও মূহুর্মূহু আক্রমনে কেরল ডিফেন্সে চাপ সৃষ্টি করে ইষ্টবেঙ্গল। সেই চাপের ফসল ই মহঃ রফিকের বাড়ানো পাস কেরল ডিফেন্ডারদের পায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যাওয়া থেকে প্রথম গোল। এরপরেও প্রথমার্ধেই আরো বেশ কয়েকটি সহজ গোলের সুযোগ তৈরী করেও স্রেফ একজন সঠিক গোল করার লোকের অভাবে ব্যবধান বাড়িয়ে তিন পয়েন্ট পকেটে পুরতে পারলেন না ফাওলার।
অদ্ভুতভাবে কেরলের ওপর চাপ বাড়িয়ে ইন্সুরেন্স গোল তোলার বদলে আলট্রা ডিফেন্সিভ মোডে চলে গেলেন ফাওলার। মাঘোমা, পিলকিংটন রাও ডিফেন্সের ওপর নেমে এলেন এক গোলের লীড বাঁচাতে। সামনে খেলার জন্য বিস্তর জমি পেয়ে খেলার রাশ হাতে নিয়ে নিলেন কিবু। তাও ফক্সের ডিফেন্স আর দেবজিতের কিপিংয়ে নির্ধারিত সময়ে ফাটল ধরাতে পারলেন না। অতিরিক্ত সময়ে হঠাৎ ফাওলারের ছেলেদের দাঁড়িয়ে পড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক পয়েন্ট যোগাড় করলেন কিবু। তবে ফাওলারের টিম ছয় ম্যাচ খেলার পরেও এতোটাই আনফিট যে বেশ কয়েকবার কাউন্টার এটাকে উঠে যখন সব তছনছ করে ফেলার কথা, রফিকেরা কেরল বক্সের সামনে অব্দি পৌছানোর আগেই বারবার দাঁড়িয়ে গেলেন। যাও বা পৌছালেন ক্লান্তি এবং গোল করার মুন্সিয়ানার অভাবে ইন্সুরেন্স গোলের দেখা আর পেলেন না। অজ্ঞাত কারনবশতঃ তোম্বা সিং কে তুলে নেবার পর ইষ্টবেঙ্গলের আক্রমণের ঝাঁঝ অনেকটাই কমে গেল।
ফিটনেস, গোল করার লোকের অভাব, ডিফেন্সে বিকল্প, আমাদি কে খেলানোর মতো জায়গায় নিয়ে আসা, আঙ্গুসেনার প্রতি অকারন প্রেম বন্ধ করা, খেলার গতিবিধি বিশ্লেষন ছাড়াই খেলোয়াড় পাল্টানো, স্কট নেভিলের পরিবর্ত নিয়ে আসা – ফাওলারের প্রচুর উন্নতির জায়গা রয়ে গেছে। তবে আজ জাইরুর খেলা বেশ আশাপ্রদ সাথে শেহনাজ, রফিকের খেলাও মন্দ নয়। ডানদিকে সামাদ সুযোগ পেলে প্রতিপক্ষ বক্সের ভেতর আরো বেশী গোলের সুযোগ তৈরী হবে বলে আমার ধারনা। কাজ বড্ড কঠিন। তবে সবচে কঠিন হলো ফাওলারের কিছু জেদ বিসর্জন দিয়ে যোগ্য খেলোয়াড়দের জার্সী দেওয়া। প্রথম চারে না হলেও একটা ভদ্রস্থ জায়গায় শেষ করার দাবী ইনভেস্টর ও সমর্থকেরা করতেই পারে – ফাওলারের এই দিকটা মাথায় রাখা উচিত। সাফল্যের পরিবর্তে কারো ওপর দোষ চাপানো কখনোই দীর্ঘদিনের সমাধান হতে পারেনা।