শ্রী সিমেন্ট বনাম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকর্তাদের চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সইয়ের খেলা গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। গত দশমাস ধরে দড়ি টানাটানির পরেও যুযুধান দুইপক্ষের কেউই এখনও রণে ভঙ্গ দেয়নি। ফলে রোজই এই চুক্তি জটের নাটকে নতুন নতুন চরিত্রের আবির্ভাব হলেও তাঁরা সুপার-সাব হয়ে গোল্ডেন গোল করে ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ। এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীকেও দেখা গেছে রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। ফেয়ার প্লে মাথায় রেখে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন একটু “ছেড়ে খেলতে”। তবে মুখ্যমন্ত্রীর “পরামর্শ” কতটুকু কানে নিয়েছেন সাবেক কর্তারা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
তবে এখন যা পরিস্থিতি, খেলা এবার সত্যিই অন্তিম পর্যায়ে। আশা করা যায়, আগামী কয়েকদিনে হয়তো এই নাটকের যবনিকা পতন ঘটবে। কিন্তু তারপরেও কি স্বস্তিতে থাকবেন সমর্থকরা? অন্তত, শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement) শিবিরের যা খবর, তাতে এক্ষুনি অন্তত সমর্থকদের সামনে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলার সুযোগ নাও আসতে পারে।
আসলে, গত দশমাস ধরে দড়ি টানাটানির খেলায় দুপক্ষের সম্পর্ক তলানিতে। তবে তার চেয়েও সমস্যার, একবার টার্মশিটের ভিত্তিতে আইএসএলে ৫০ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করে ফেলার পরেও গত দশমাসে যেভাবে চুক্তিবিতর্ক জিইয়ে রাখা হয়েছে, তার ফলে এবারে আঁটঘাট বেঁধেই নতুন করে বিনিয়োগে নামতে চলেছে শ্রী সিমেন্ট। ফলে চুক্তি সই হয়ে গেলেও যে পরের দিন থেকে আদাজল খেয়ে দলগঠনে নেমে পড়বেন শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ, সে আশা প্রায় নেই বললেই চলে।
চুক্তিসইয়ের পরেও কেন তৎক্ষণাৎ দলগঠন শুরু হবে না? এই প্রশ্নের উত্তরে যে ব্যাখ্যাটা উঠে আসছে, তা হল, চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়াটা আইনি প্রক্রিয়ার একটি অংশমাত্র। কিন্তু সেটাই সব নয়। এরপরে আছে আদালতের বিভিন্ন ধাপ।
চুক্তি অনুযায়ী যে যে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা এখন এককভাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal) শেয়ারহোল্ডারদের কাছে আছে, তা হস্তান্তর হবে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনে (Shree Cement East Bengal Foundation), যার ৭৬ শতাংশ শেয়ার থাকবে শ্রী সিমেন্টের কাছে, বাকি ২৪ শতাংশ ইস্টবেঙ্গলের ক্লাবের তরফে প্রতিনিধিদের কাছে। ১০ জনের প্রস্তাবিত বোর্ডে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফ থেকে ২ জন প্রতিনিধির থাকার কথা। তাঁদের হাতেই থাকবে এই ২৪ শতাংশ শেয়ার।
আপাতত যে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির মালিকাধীন ইস্টবেঙ্গল, তারমধ্যে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ক্লাবের কসবা রাজডাঙায় ক্লাবের একটি বাড়ি, রয়েছে উত্তরবঙ্গে ফুটবল অ্যাকাডেমির আরেকটি আবাসিক বাড়িও। রয়েছে একটি টিমবাস ও অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন ক্লাবতাঁবুর লিজ, অর্থাৎ ক্লাবতাঁবু ব্যবহারের স্বত্ব।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (Intellectual Property), যেমন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পরিচয়, অর্থাৎ মশাল দেওয়া লোগো এবং জার্সির লাল-হলুদ রং ইত্যাদি। এই সবকিছুই হস্তান্তরিত হবে শ্রী সিমেন্ট এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে গঠিত শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বোর্ডের কাছে। এই সবকিছু ব্যবহারের অনুমতিও নিতে হবে দশ সদস্যের (শ্রী সিমেন্ট – ৮ জন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব – ২ জন) বোর্ডের কাছ থেকে। এই পুরো হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঘটবে আদালতে নোটারি এবং তারপর রেজিস্ট্রির মাধ্যমে। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে লেগে যেতে পারে বেশ কয়েকদিন।
ফলে চুক্তি সই হয়ে গেলেই যে দলগঠন শুরু করে দেবে শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ, সে সম্ভাবনা নিয়ে রয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। যার ফলে নষ্ট হতে পারে আরও ৭-১০ দিন। তারপরেই নতুন মরশুমের জন্য লগ্নি শুরু করবে শ্রী সিমেন্ট, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু শ্রী সিমেন্ট এবং ক্লাবকর্তাদের দড়ি টানাটানিতে যাঁরা প্রতিদিন বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন, সেই সাধারণ সমর্থকদের উৎকন্ঠা খুব দ্রুত শেষ নাও হতে পারে।