ইউরো ২০২০: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জার্মানদের জেদের কাছে হার গতবারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Christiano Ronaldo) আরেকটি রেকর্ড গড়ার দিনে দীর্ঘ সাত বছর বাদে বড়ো টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ জার্মানি দাপট দেখিয়ে জিতলো। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর। জার্মান কিংবদন্তী স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোজের (Miroslav Klose) বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপ মিলিয়ে করা সর্বোচ্চ ঊনিশটি গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন রোনাল্ডো, কিন্তু বদ্ধপরিকর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দেশের হার বাঁচাতে পারলেন না। দুই অর্ধে একটি গোল করলেন এবং একটি করালেন। কিন্তু তার মাঝে জার্মানরা প্রথমার্ধে দুটো পর্তুগীজ আত্মঘাতী গোল এবং দ্বিতীয়ার্ধে কাই হ্যাভার্ৎজ (Kai Havertz) আর রবিন গজেনসের (Robin Gosens) সৌজন্যে চার গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে।

জার্মান আগ্রাসনের কাছে নতিস্বীকার পর্তুগীজদের

ম্যাচের শুরু থেকেই জার্মানরা আক্রমণের ঝড় তুলেছিল। এই ম্যাচ জিততেই হতো পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত করতে। ম্যাচের পাঁচ মিনিটেই গজেনসের (Serge Gnabry) করা গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। সার্জ গন্যাব্রির (Serge Gnabry) উদ্দেশ্যে পাঠানো ম্যাথিয়াস গিন্টারের (Matthias Ginter) দুরন্ত বল শরীর ছুঁড়ে পোস্টের ডান দিক থেকে জালে পাঠান। কিন্তু ভার (VAR) জানায় যে বায়ার্ন মিউনিখের (FC Bayern Munich) ফরওয়ার্ড অফসাইডের কবলে পড়ে গেছেন। তার আগে এবং পরেও পর্তুগালের প্রথম গোলটি হবার আগে পর্যন্ত পর্তুগাল ডিফেন্স ছিল ঝড়ের মুখে পড়া কাগজের নৌকোর মতন। জশুয়া কিমিচ (Joshua Kimmich) ডান উইং ধরে ক্রমাগত বিরক্ত করে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।

পনেরো মিনিটের মাথায় একটা অনবদ্য ফিরতি আক্রমণে রীতিমতো ম্যাচের গতির বিপরীতে গোল করে পর্তুগাল। জার্মানির কর্নার থেকে বল পেয়ে ম্যানচেস্টার সিটির (Manchester City) বার্নার্ডো সিলভার (Bernardo Silva) মাপা ক্রস জার্মান বক্সের ডান কোনায় দিয়োগো জোটাকে (Diogo Jota) খুঁজে পায়। তখন লিভারপুলের (Liverpool) ফরোয়ার্ডের ডান দিকে নিঃস্বার্থ ছোট্ট একটি টোকা পৌঁছে যায় পাঁচবারের ব্যালন ডি’ওর (Ballon d’or) বিজেতা রোনাল্ডোর পায়ে। করে ফেলেন টুর্নামেন্টের তিন নম্বর গোলটি (০-১)।

কাজে আসলো না রোনাল্ডোর গোল।

৩৫ মিনিটে গজেনসের হ্যাভর্ৎজকে লক্ষ্য করে ছয় গজ বক্সের ভিতর জোরালো ক্রস রুবেন ডায়াজের (Ruben Dias) পায়ে লেগে ঢুকে যায় পর্তুগীজ গোলে (১-১)। প্রথম ঝড়টা কেটে যাবার পর এতক্ষন অবধি সিলভার ক্লাব সতীর্থ বেশ উপভোগ করছিলেন খেলা। আর ঠিক চার মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। এবার পোস্টের বাম দিক থেকে ছোটো বক্সে ফিরতি বল পাঠান কিমিচ। আর ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে (Borussia Dortmund) খেলা রাফায়েল গেরেইরো (Raphaël Guerreiro)। এর সাথে আরেকটি উল্লেখজনক পরিসংখ্যান দিয়ে দেওয়া যাক। পর্তুগাল প্রথম ইউরোপীয় দেশ যারা একই ম্যাচে দুটো আত্মঘাতী গোল হজম করে (২-১)। এরপর থেকে ম্যাচের অধিকাংশটাই ম্যানুয়েল ন্যয়ারের (Manuel Neuer) নিশ্চিন্ত থাকার পালা। উল্টোদিকে রুই প্যাট্রিসিওকে (Rui Patrício) থাকতে হয় বেশ তৎপর।

বিরতির পর ছয় মিনিটের মধ্যেই টমাস মুলারের (Thomas Müller) বল যায় গজেনসের কাছে। আর আটলান্টার খেলোয়াড়ের পাঠানো নিচু ক্রসে এবার পা ছুঁইয়ে দেশের জার্সিতে নিজের চার নম্বর গোল করে ফেলেন চেলসির (Chelsea FC) হয়ে এই বছরের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ (UEFA Chamions League) বিজয়ী সদ্য বাইশে পা দেওয়া কাই (৩-১)।

ভূলুন্ঠিত পর্তুগিজ ডিফেন্স

ম্যাচের ষাট মিনিটে কিমিচের ক্রস থেকে এবার গজেনস নিজেই হেডে গোল করে ফেলেন (৪-১)। অন্যতম সেরা একটা ম্যাচ হয়ে রইলো তাঁর জীবনে। যদিও মিনিট সাতেকের মধ্যেই রোনালদো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন জোটার উদ্দেশ্যে। দুর্ধর্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর অতিমানবিক একক প্রয়াসেই হয়তো হয়ে যেত গোলটি। ফ্রি কিক থেকে প্রায় গোললাইন অতিক্রম করে ফেলা একটি বল ফেরত পাঠান গোলের অভিমুখে। সেই বল ন্যয়ার এবং এন্টোনিও রুডিগারকে (Antonio Rüdiger) পরাস্ত করেও ফেলেছিলো। কিন্তু পা ঠেকিয়ে গোল নিশ্চিত করেন জোটা (৪-২)।

এরপর উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে দুটি। বায়ার্ন মিউনিখের প্রাক্তনী একসময়ের ক্লাবের মাঠে ফিরেই জার্মান অধিনায়ককে দাঁড় করিয়ে রেখে যে চোখ ধাঁধানো ২৫ গজের শটটি নেন সেটি ডান পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসে। আর তিরাশি মিনিটে বায়ার্নের লেওন গোরেৎজকা (Leon Goretzka), তাঁর ক্লাব সতীর্থদের (গন্যাব্রি এবং মুলার) পাশে পেয়েও, নিজেই গোল লক্ষ্য ক্রেজ সত্যি নেন তা বারের উপরভাগ আলতো ছুঁয়ে চলে যায় দর্শকাসনে।

৪-১ গোলে এগিয়ে থাকার সময় একসাথে দুটো পরিবর্তন করেন ডাই ম্যানশ্যাফ্ট (Die Mannschaft) কোচ জোয়াকিম লো (Joachim Löw)। তার একটি বেশ অর্থবহ। মূলত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এমরে চানকে যখন নামানো হয় প্রথমে দেখা যায় ইলকে গুন্দোয়ান (İlkay Gündoğan) উঠে আসছেন। কিন্তু পরে দেখা যায় উঠে আসেন ফুল ব্যাক ম্যাট হামেলস (Mats Hummels)। ডিফেন্সে পরিবর্তন চট করে কোনো কোচ-ই চান না। হামেলসের হাঁটুতে চোট ছিল। কোচ হয়তো ঝুঁকি নিতে চান নি। কিন্তু এরকম পরিবর্তনের ঠিক পরেই দ্বিতীয় গোলটি করে পর্তুগাল। আর তার পরেই গুন্দোয়ানকে তুলে ফুলব্যাক নিকলাস সুলেকে নামিয়ে জার্মান ম্যানেজার চানকে নিয়ে যান তার স্বাভাবিক পজিশনে। আবার মিডফিল্ডের দখল নেয় নিজেদের মাঠে খেলা ২০১৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বহুদিন বাদে জার্মানদের স্বমহিমায় দেখে তাদের সমর্থকরা খুশি হলেও আলায়েনজ এরিনাতে (Allianz Arena) জার্মান মন্থর রক্ষণ নিয়ে চিন্তা দূর হলোনা। অপরদিকে সেলেকাও পর্তুগালের (Selecao Portugal) কোচ বর্ষীয়ান ফার্নান্দো স্যান্টোসকেও (Fernando Santos) কষতে হবে কিলিয়ান এম্ব্যাপে (Kylian Mbappé), আন্তোয়ান গ্রিজম্যানকে (Antoine Griezmann) এবং পল পোগবাকে (Paul Pogba) থামানোর অঙ্ক।

ষ্টার অফ দ্য ম্যাচ রবিন গোসেন্স

আজকের দুটি খেলার ফলাফলে গ্রুপ অফ ডেথ প্রত্যাশা মতোই জমে উঠেছে। যে কোনো দেশ যেতে পারে নক-আউট রাউন্ডে। গোল পার্থক্য ফ্রান্স (France), জার্মানি আর পর্তুগালের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকায়, সামনের ম্যাচ দুটির ফলের পরে গোল পার্থক্য ছাড়া মুখোমুখি ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। যেহেতু সেরা চারটি তৃতীয় দলের পরবর্তী রাউন্ডে যাবার সুযোগ থাকছে তাই হাঙ্গেরি (Hungary) বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়বে না জার্মানির বিরুদ্ধে। যদিও গ্রুপের শেষ ম্যাচটি ফেরেঙ্ক পুসকাসের (Ferenc Puskás) দেশকে খেলতে হবে মিউনিখে (মিউনিখ)। ফ্রান্স আর পর্তুগাল খেলবে বুদাপেস্টের ফেরেঙ্ক পুসকাস স্টেডিয়ামে (Ferenc Puskás Stadium)।

ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে এই প্রথম শেষবারের বিজেতা দেশ কোনো একটি ম্যাচে চার গোল খেলো।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.