নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে প্রথম পয়েন্ট পাওয়ার পর আগামী ১৫ তারিখ আমাদের ইস্টবেঙ্গল নিজেদের পঞ্চম ম্যাচ খেলতে চলেছে হায়দ্রাবাদ এফসির বিরুদ্ধে। গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ কে জমাট দেখালেও এখনো গোলের স্বাদ মেলেনি লালহলুদ বাহিনীর। এই প্রতিবেদনে EBRP-এর তরফ থেকে আগামী ম্যাচের একটি বিস্তারিত ম্যাচ প্রিভিউ আপনাদের সামনে আনা হলো।
স্পোর্টিং ক্লাব ইস্টবেঙ্গল :
যতটা খারাপ শুরু হয়েছিল আমাদের প্রথম আইএসএল অভিযান, ততটাই শক্ত ভাবে আমরা ফিরে এসেছি লড়াইয়ে। হ্যাঁ, আপনারা নিশ্চই বলবেন গোলের দেখা নেই, বিদেশিরা এখনো প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ, কিন্তু তাও এটা মানতে বাধ্য হবেন যে গত ম্যাচে যেরকম লড়াই উপহার দিলো লাল হলুদ ব্রিডাগ, তাতে এটুকু বোঝা যায় যে পর পর ৩ ম্যাচ হেরেও মানসিকতায় চির ধরেনি কারোর, উল্টে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার তাগিদ দেখা যাচ্ছে খেলোয়াড়দের মধ্যে। গোলের দেখা নেই ঠিকই, তবে বাকিদের দেখুন, সব টিম কম করে একজন বিদেশিকে আপফ্রন্ট খেলাচ্ছে। ফাউলার নিজের সীমিত অস্ত্র প্রয়োগ করে পজিটিভ রেসাল্ট আনার চেষ্টা করছেন, আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে আগমন হয়েছে কিছু Below Standard রেফারিদের, যারা চোখের সামনে ঘটা ঘটনা দেখেও বুঝতে পারেননা কোনটা ফাউল, কোনটা না, আবার কোনটা রেড কার্ড (প্রবীর) আর কোনটা না (লিংডো)।
আগের ম্যাচের ড্র আত্মবিশ্বাস দেবে এটা স্বয়ং পিলকিংটন ও মানেন। স্টেইনম্যানের মতে ১০ জন ৭০ মিনিট খেলে গোল না খাওয়া যথেষ্ট প্রশংসনীয়। সত্যি তো, ১২ জনের বিরুদ্ধে ১০ জন খেললো, তাও প্রায় ৭০ মিনিট, কিন্তু ভালস্কিজের মতো ফিনিশারও এর সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। রেফারী আপ্রাণ চেষ্টা করলেন জামশেদপুরকে ৩ পয়েন্ট দেওয়ার, কিন্তু আমাদের রক্ষণের অদম্য জেদএর সামনে কোনো প্ল্যান ই যেনো টিকলোনা। রফিক অবদি সাইড ব্যাক খেলে গেলো পুরো ম্যাচ, কখনো ভাবেইনি যে এটা ওর পছন্দ মতো পজিশন নয়, শুধু টিমের দরকার বলে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে গেলো সে। এই একতাই যেনো আমাদের বল।
নেভিল-ঈর্ষাদরা যতটা ভরসা যোগাচ্ছে, ততটা চিন্তা আমাদের আটাকিং থার্ড বাড়াচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ৪ জনের মিডফিল্ড সাজালেও স্টেইনম্যান আর লিংডো অথবা আঙ্গুসানা ডিফেন্সিভ স্ক্রিনিংয়ের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেই পিলকিংটন আর মাঘোমা এদের দুজনকে পেছনে আসতে হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ আক্রমণে একা হয়ে পড়ছেন আমাদের লোন স্ট্রাইকার (জেজে/বলবন্ত)। আর কাউন্টার এট্যাকেও দুর্বল ইস্টবেঙ্গল। পাসে পাসে আক্রমণ গড়তে সময় লাগছে, যার ফলে বিপক্ষের ফুটবলাররা পজিশনে চলে যাওয়ার সময় পেয়ে যাচ্ছে। আরো একটা দুর্বল জায়গা হলো দ্রুত গতির উইঙ্গার না থাকা। ডান প্রান্তে সুরচন্দ্র বা রফিক আর বা প্রান্তে নারায়ণ দাসের গতি সেরম না, তাই অপনেন্টের রক্ষনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ক্রস ও আসছেন বক্সে। সেট পিস থেকেও গোল করার কোনো সেরকম প্ল্যান এখনো চোখে পরেনি। আমাদের কোচের এখন উচিত আক্রমণ বিভাগে জোর দেওয়া, কারণ ডিফেন্স কিছুটা হলেও শক্ত হয়েছে, আর ফক্স আসলে আরও শক্তিশালী হবে।
হায়দরাবাদ এফসি :
কখনো ভেবেছেন আইএসলের জন্যে ভারতীয় ফুটবলাররা কতটা উপকৃত হচ্ছে? আদেও হচ্ছে কিনা? যদি ভেবে থাকেন, তাহলে অবশ্যই হায়দ্রাবাদ-এর খেলা দেখুন। ভারতীয় রক্ত আর তারুনত্বে ভরা মাঝমাঠ আর আক্রমণ বিভাগ দেখিয়ে দেয় তাবড় তাবড় বিদেশী স্ট্রাইকেরদের সাথে দাঁতে দাঁত চিপে ভারতীয়রাও লড়াই করতে পারে। হলিচারণ, নিখিল পূজারী সমৃদ্ধ হায়দ্রাবাদের মাঝমাঠ শক্তিতে ভরপুর, আর ৪ ম্যাচ খেলেও এখনো হারের স্বাদ পেতে হয়নি অন্ধ্রর এই দলটির। শেষ ম্যাচে এটিকের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পরেও ড্র করে আরো আত্মবিশ্বাসে ফুটবে ওরা।
এই মরসুম ৪ ম্যাচ খেলে পকেটে ৬ পয়েন্ট আছে হায়দরাবাদের, তাই চতুর্থ থাকা বেঙ্গালুরুর ঘাড়ে নিঃশাস ফেলছে ম্যানুয়েল মার্কেজ রোকার দল। বলের দখল রেখে আক্রমণে যাওয়া প্রধান লক্ষ থাকে হায়দ্রাবাদের, সাথে নিখিল পূজারী আর হলিচরণ নার্যারির দু প্রান্ত থেকে বাড়ানো ক্রসের জন্যে বক্সে ডিফেন্সিভ মিডিড ভিক্টর ও পর্যন্ত চলে আসেন! কাউন্টারের বিরুদ্ধে খানিকটা দুর্বল দেখালেও ডিফেন্স যথেষ্ট জমাট হয়দেরবাদের, তাই ৩ ম্যাচ ড্র করে আর এক ম্যাচ জিতে এখনো অপরাজিত তারা। ইস্টবেঙ্গল কে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে ৩ পয়েন্ট পেতে গেলে, ওপর দিকে এক পয়েন্ট পাওয়াও খানিকটা চাপের কারণ ৪ ম্যাচে ৩ ম্যাচেই গোল পেয়েছে হয়দেরবাদ, আর এদিকে আমরা এখনো গোলের খাতা অব্দি খুলতে পারিনি। দেখতে ইচ্ছুক রইলাম এরকম দলের বিরুদ্ধে কী ট্যাকটিক্স খাটায় রবি ফাউলার। জয় ইস্টবেঙ্গল।
সম্ভাব্য একাদশ:
ইস্টবেঙ্গল: শঙ্কর, নেভিল, ইরশাদ, সেহনাজ, নারায়ণ, রফিক, স্টেইনম্যান, আঙ্গুসানা, পিলকিংটন, মাঘমা, বিনিথ।
হায়দ্রাবাদ: সুব্রত, আকাশ মিশ্র, চিংলেসানা, ওবেই, আশিস রাই, ভিক্টর, সাস্ত্রে, নিখিল, জোয়েল, হলিচারণ, লিস্টন কোলাকো।