সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে দুবছর পর জয়ের সরণিতে ভারত

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

বাঘের বিরুদ্ধে বাঘ! নীল বনাম সবুজ! এই ছিল ভারত বনাম বাংলাদেশ লড়াইয়ের শিরোনাম। ফিফা ক্রমপর্যায়ে ১৮৪ বনাম ১০৫-এর লড়াইয়ে শুরু থেকেই পাল্লা ভারী ছিল ভারতের পক্ষে, কিন্তু গোলের সামনে বার বার “স্কুলবয় মিসটেক” করে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মানবীর – সুনীলরা। তবে খেলার শেষ লগ্নে সেই ক্যাপ্টেন সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) জোড়া গোলেই বাংলাদেশকে হারালো ভারত। ২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপের যোগ্যতানির্ণায়ক পর্বের (FIFA Word Cup Asian Qualifiers) খেলায় প্রথম জয় পেল ইগর স্টিম্যাচের (Igor Štimac) ছেলেরা।

শুরু থেকেই ম্যাচের রাশ ছিল ভারতের হাতে। প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য রেখে খেললেও বাংলাদেশ লড়াকু ডিফেন্সকে ভাঙ্গতে পারেনি ব্লু টাইগার্সরা (Blue Tigers)। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ব্র্যান্ডনের কর্নার থেকে চিংলেনসানার (Chinglensana Singh) হেড গোললাইন সেভ করেন রিয়াদুল হোসেন রফি। ফিরতি কর্নার থেকে সুনীলের হেড বাইরে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে উদান্তা সিংয়ের (Udanta Singh) বদলে মহম্মদ ইয়াসির (Mohammad Yasir) এবং মানবীর সিংয়ের বদলে লিস্টন কোলাসো নামার পর বাংলাদেশের ডিফেন্সের উপর চাপ বাড়াতে থাকে ভারত। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৭৯ মিনিটে গোলমুখ খুলতে সক্ষম হয় ভারতীয় দল। বামপ্রান্তের উইং থেকে ভেসে আসা আশিক কুরুনিয়ানের (Ashique Kuruniyan) ক্রসে হেড করে বাংলাদেশী গোলরক্ষক আনিসুর রহমানকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান ৩৬ বছর বয়সেও ভারতের মুশকিল আসান অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (১-০)।

ম্যাচের একেবারে শেষলগ্নে ৯২ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর (Liston Colaco) বাড়ানো বল বক্সের ভিতরে পেয়ে যান ডানপ্রান্তের উইং ধরে উঠে আসা সুরেশ সিং ওয়াংজাম (Suresh Singh Wangjam)। তাঁর মাইনাস থেকে বল পেয়ে লব করে বাংলাদেশের জালে জড়াতে ভুল করেননি ছয়গজ বক্সের ঠিক বাইরে ওঁৎ পেতে থাকা সুনীল (২-০)।

তবে ম্যাচের নায়ক হিসেবে একা সুনীলকে বাছা সমর্থকদের পক্ষে সহজ নয় কারণ দলের বিভিন্ন কমবয়সী খেলোয়াড়দের দৃঢ় মানসিকতা এবং বলের ওপর দক্ষতার জেরেই শেষ লগ্নে গোল দুটি আসে।

দেখে নেওয়া যাক আজকের ম্যাচে কে কিরকম খেললো:

গুরপ্রীত সিং সান্ধু: গোলের নিচে গুরপ্রীতের থাকাটা সব সময় বাড়তি ভরসা যোগায়, তবে আজ বাংলাদেশের নিষ্প্রভ আক্রমণের সামনে সেভাবে কিছুই করতে হয়নি গুরপ্রীতকে।
রেটিং- ৬.৫

শুভাশিস বোস: তিন সেন্টার ব্যাক সিস্টেমে বা প্রান্তে শুভাশিস কে নামান কোচ স্টিমাচ। তবে নিজের সেরাটা দিতে আজ ব্যর্থ শুভাশিস। শুরুর দিকে কয়েকটি মিসপাস করেন তিনি, এবং তাড়াহুড়োর বশে আরো কিছু ভুলভ্রান্তি দেখা যায় তার খেলায়। তবে হেডিং ক্লিয়ারেন্সের দিকে একশোতে একশো পাবেন তিনি।
রেটিং- ৫.৫

সন্দেশ ঝিঙ্গান: এক কথায় যাকে বলে “রক সলিড”। সন্দেশ ঝিঙ্গান (Sandesh Jhingan) আবারো দেখিয়ে দিলেন তাকে ছাড়া ভারতের ডিফেন্সকে ভাবা কার্যত অসম্ভব। যেই দক্ষতার সাথে ডিফেন্সকে কমান্ড করলেন, একই ভাবে ব্যাকলাইন থেকে আক্রমণ শুরু করলেন। আফগানিস্তান ম্যাচের আগে ঝিঙ্গানের এই ফর্ম স্বস্তি দেবে স্টিমাচ এবং গোটা ভারতীয় দলকে।
রেটিং – ৭

চিংলেনসানা সিং: এই উঠতি খেলোয়াড় ধীরে ধীরে তার সেরা মেলে ধরা শুরু করেছেন। হায়দ্রাবাদ এফসির (Hyderabad FC) তরুণ স্টপার আজ ডিফেন্সের ডান প্রান্তে খেলছিলেন, এবং বারবার ওপর নিচ করে খেললেন, এক ফোঁটাও ক্লান্তি নজর পড়েনি। তার জোরালো হেড গোললাইন সেভ করে বাঁচান বাংলাদেশের রিয়াদুল, নয়তো আজই দেশের জার্সিতে প্রথম গোল পেয়ে যেতেন তিনি।
রেটিং- ৭

গ্ল্যান মার্টিন্স: এফসি গোয়ার মাঝমাঠের স্তম্ভ এই গ্ল্যান মার্টিন্সের (Glan Martins) এটা দেশের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল, তবে এই দু ম্যাচেই যেই দক্ষতার সাথে খেলেছেন মোটামোটি জাতীয় দলে তার জায়গা পাকা। একজন বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারের যা থাকা দরকার সবটাই আছে মার্টেনসের, সাথে আজ বার বার ডায়াগোনাল পাস বাড়িয়ে খেলা সাজাচ্ছিলেন তিনি। তার খেলার ধরণ দেখে সমর্থকদের কাছে তিনি এখন “ভারতের এনগোলো কান্তে” হয়ে উঠছেন। বলের ওপর তার দক্ষতা এবং “ক্রিয়েটিভিটির” জন্যে স্টিমাচের এই পাসিং সিস্টেমে অন্যতম ভরসা হয়ে উঠছেন তিনি।
রেটিং- ৮

ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ: আজ কার্যত একার হাতে আক্রমণ বিভাগকে বল সাজিয়ে দিচ্ছিলেন ব্র্যান্ডন (Brandon Fernandes)। প্রথমার্ধে তার মাপা থ্রু পাসে সহজ গোল করতে পারতেন মানবীর। এ ছাড়াও উইংকে সচল রাখতে বার বার মাপা পাস বাড়াতে থাকেন ব্র্যান্ডন, আর তার মাপা কর্নার কমপক্ষে ৫ বার ভারতীয় খেলোয়াড়দের মাথায় লাগে (যদিও তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন সবাই)। ২৬ বছরের এই খেলোয়াড় যে জাতীয় দলের একটি অমূল্য সম্পদ, সেটা বোধহয় আর কারোর জানা বাকি না।
রেটিং- ৮.৫

নজর কাড়লেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজও

সুরেশ সিং: প্রথমার্ধে কার্যত নিষ্প্রভ, দ্বিতীয়ার্ধে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ডানপ্রান্তের রাজা। সুরেশ কাউন্টার এটাকে বার বার আক্রমন সামলিয়েছেন, এবং বাংলাদেশের আক্রমণ মাঝমাঠেই থামিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেভাবে তার খেলা নজর না কারলেও তার পাস থেকে ভারতের দ্বিতীয় গোলটি আসে।
রেটিং- ৭

বিপিন সিং: আশানুরূপ পারফর্ম করতে ব্যর্থ! দুয়েকবার তার পা থেকে জাদুর ঝলকানি দেখা গেলেও কাজের কাজ একেবারেই করতে পারেননি তিনি। ফলস্বরূপ তার বদলে মাঠে নামানো হয় আশিক কুরুনিয়ানকে।
রেটিং- ৫

উদান্তা সিং: ডান প্রান্তে শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন তিনি। প্রথমার্ধে গোলে শটও মারেন, তবে একবার যে নিষ্প্রভ হলেন তার পর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘনঘন মিসপাস করতে থাকেন এবং ডানপ্রান্ত খানিকটা অচল হয়ে পড়ে। তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে মহম্মদ ইয়াসির-কে নামান স্টিমাচ।
রেটিং- ৫.৫

মানবীর সিং: প্রথমার্ধের সবথেকে সহজ সুযোগটা নষ্ট না করলে হয়তো বলা যেতো আজ মানবীরের (Manvir Singh) খেলা মোটামোটি ভালোই ছিল। তবে বাংলাদেশের গোলকিপারকে একা পেয়েও যেভাবে আক্রমনটা ভেস্তে আসলেন, তার পরেই বোধহয় স্টিমাচ ভেবে ফেলেন যে আজ মানভিরকে দিয়ে হবেনা। কিছু কিছু মুহূর্তে তার কোয়ালিটির ঝলকানি দেখা গেলেও আজ নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। তার বদলে লিস্টন মাঠে নামেন।
রেটিং – ৫.৫

সুনীল ছেত্রী: আবারো সুনীল বুঝিয়ে দিলেন এই বয়সেও তিনিই শেষ ভরসা যখন গোলের দরকার পড়ে। প্রথম গোল পাওয়ার আগে তিনিও আশানুরূপ খেলতে পারেননি তবে গোল পাওয়ার পর পুরো বদলে যায় তাঁর খেলা। দ্বিতীয় গোল পাওয়ার আগে একটি সুন্দর থ্রু বল বাড়িয়ে আশিককে একটি গোল সাজিয়ে দেন তিনি, তবে টাইট অ্যাঙ্গেলের জন্য সেটা কনভার্ট করতে ব্যর্থ হন আশিক। সুনীলের দুটো গোলই দেখার মতো ছিল।
রেটিং- ৯

এই ম্যাচে জোড়া গোল করে বর্তমানে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে দেশের হয়ে মোট গোলসংখ্যার নিরিখে লিওনেল মেসিকে (৭২) টপকে গেলেন সুনীল (৭৪)। সামনে শুধু পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (১০৩)। ফিফার অফিশিয়াল ট্যুইটার থেকেও সুনীলের জন্য বরাদ্দ একরাশ প্রশংসা।

এছাড়াও পরিবর্ত হিসেবে নেমে নজর কাড়েন মহম্মদ ইয়াসির, আশিক কুরুনিয়ান এবং লিস্টন কোলাসো। ইয়াসির যেভাবে মাঝমাঠ কন্ট্রোল করেন, একই ভাবে লিস্টন ডান প্রান্ত অপারেট করতে থাকেন এবং প্রথম গোলের ক্ষেত্রে ক্রসটা বাড়ান পরিবর্ত হিসেবে নামা আশিক কুরুনিয়ান। এ ছাড়াও খেলার শেষ মুহূর্তে নামেন প্রণয় হালদার এবং আদিল খান।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.