রোমের স্টাডিও অলিম্পিকোতে (Stadio Olimpico) ইউরোর (UEFA EURO 2020) দামামা বেজে গেলো, সাথে নিজেদের রাজধানীতে ৬০ বছর পুরোনো এই প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট ভালো শুরু করলো ইতালি। তুরস্ককে তারা হারালো ৩-০ ব্যবধানে।
প্রথমার্ধে শুরু থেকেই আক্রমণে চাপ বাড়াতে থাকে ইতালি। ইনসিগ্নে (Lorenzo Insigne), ইম্মোবিলে এবং বারারদি-দের (Domenico Berardi) দিয়ে আক্রমণ সাজান ইতালির হেডকোচ রবার্তো মানচিনি (Roberto Mancini)। খেলা শুরু হওয়ার প্রথম মিনিট থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে ইতালি নিজেদের ঘরের মাঠে ম্যাচটি যেকোনো ভাবে জিততে মরিয়া। অপর দিকে তুরস্ক নিজেদের রক্ষণকে গুছিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলা শুরু করে। তবে উল্লেখযোগ্য প্রথমার্ধে সেভাবে তাদের কোনো আক্রমণই দানা বাঁধতে পারেনি। কিন্তু ইতালি তাদের পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে অনায়াসে ২-৩ গোলের লিড নিয়ে নিতে পারতো।
ম্যাচের ২৩ মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে দুরন্ত হেড করেন ইতালির ডিফেন্সের স্তম্ভ জুভেন্তাসে (Juventus) খেলা জর্জিও চিয়েলিনি (Giorgio Chiellini)। শূন্যে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় নিশ্চিত গোল বাঁচান তুরস্কের গোলকিপার আগারকান ক্যাকার (Ugurcan Cakir)। ম্যাচের প্রথমার্ধে কার্যত বলই ধরতে হয়নি ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইগি ডোনারুমা-কে (Gianluigi Donnarumma)।
প্রথমার্ধের যদি সব থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয় ইতালির নেওয়া ১৪ টি শট, ঠিক একই ভাবে আরও একটি জিনিস লক্ষণীয়, তা হলো তিন-তিনটে পেনাল্টি কল! প্রথমে তুরস্কের ডিফেন্ডার সয়ুনকুর (Caglar Soyuncu) হাতে বল লাগে, তবে তার হাত তার শরীর-লাগোয়া অবস্থায় ছিল বলে রেফারি দানি মাকেলি (Danny Makkelie) তা নাকচ করে দেন। এরপর ইতালির বক্সে বনুচ্চির (Leonardo Bonucci) ধাক্কায় তুরস্কের বুরাক ইলমাজ পড়ে যান, তবে ধাক্কাটা ফুটবলের সংবিধানে বেআইনি নয় বলেই আবারও তা নাকচ করে দেন রেফারি। সর্বশেষে তুরস্কের বক্সে আবার হ্যান্ডবল অ্যাপিল হয়, কিন্তু ভার-এর সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি নাকচ করেন ডাচ রেফারী মাকেলি।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে কার্যত আগুন ঝড়াতে থাকে ইতালি (Italy national football team)। খেলা শুরু হওয়ার ৮ মিনিটের মধ্যে লিড নিয়ে নেয় ইতালি, সৌজন্যে তুরস্কের ডিফেন্ডার ডেমিরালের (Merih Demiral) আত্মঘাতী গোল। ডান প্রান্ত থেকে ভেসে আসা মাইনাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল তাঁর বুকে লেগে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।
তার ঠিক ১৩ মিনিট পর, অর্থাৎ ম্যাচের ৬৬ মিনিটের মাথায় সিরো ইম্মোবিলের (Ciro Immobile) সৌজন্যে দ্বিতীয় গোল পায় ইতালি। স্পিনাজ্জোলার (Leonardo Spinazzola) শক্তিশালী নিচু শট তুরস্কের গোলকিপার ক্যাকারের থেকে প্রতিহত হয়ে ইম্মোবিলের পায়ে এসে পড়ে। ফিরতি বল জালে জড়াতে ভুল করেননি ৩১ বছর বয়সী লাজিও-র (Lazio) এই স্ট্রাইকার (২-০)।
কাকতালীয় ভাবে আবারও ১৩ মিনিট পর গোল পায় ইতালি। খেলার ৭৯ মিনিটের মাথায় ডান পায়ের বাঁকানো শটে গোল করে ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলেন ইনসিগ্নে (৩-০)।
রোমের মাঠে শুরু থেকেই ফেভারিট ছিলো ইতালি, সাথে গ্রুপের অন্যতম শক্ত প্রতিপক্ষ তুরস্কের (Turkey national football team) বিরুদ্ধে ৩ গোলের ব্যবধানে জয় বাড়তি মনোবল যোগাবে রবার্তো মানচিনির দলকে। সাথে এক অনন্য রেকর্ডও করে ফেললো আজুরিরা। ইউরো কাপের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও ম্যাচে তিন গোল করলো টুর্নামেন্টে একবারের চ্যাম্পিয়ন তথা দুবারের রানার্সরা। এই নিয়ে গত ২৮ ম্যাচে অপরাজিত রইলো ইতালি।
ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হলেন ইতালির উইং ব্যাক লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলা।
গ্রুপ এ-তে এর পরের খেলা সুইজারল্যান্ড বনাম ওয়েলসের, আজ ভারতীয় সময় সন্ধ্যে ৬:৩০ টায়।