অনেক আশা নিয়ে খেলা দেখতে বসেছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। ডুরান্ড কাপে (Durand Cup) খুব খারাপ খেলেনি ভাঙ্গাচোরা ইস্টবেঙ্গল। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেও বেশ আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছিলো। ফর্ম ফিরে পাবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুমিত পাসি (Sumeet Passi), ইলিয়ান্দ্রোর (Eliandro) মতন খেলোয়াড়রা। কিন্তু গত মরসুমের রানার্স কেরালা ব্লাস্টার্স এফ সির (Kerala Blasters FC) বিপক্ষে আই এস এল (ISL) ২০২২-এর শুরুটা হলো ভয়াবহ।
মাঞ্জাপাড়া (Manjappada) তথা কেরালার সমর্থক গোটা স্টেডিয়াম হলুদ রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলো। মালায়ালিদের ফুটবল প্রেম প্রবল এবং এফ সি কোচিন (FC Kochin) পরবর্তী যুগে কেরালা ব্লাস্টার্সের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রবল। আ্যওয়ে দলের স্বভাবসিদ্ধ পরিকল্পনাতেই কাউন্টার এট্যাকের উপর ভরসা করে খেললো ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধের কিছুটা আক্রমণাত্মক খেললেও বিরতির পর লাল-হলুদ ব্রিগেড ছিল বেশ রক্ষণাত্মক।
ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন (Stephen Constantine) ডিফেন্স থেকে উঁচু করে ফরওয়ার্ডদের উদ্দেশ্যে বল পাঠাতে পছন্দ করেন। এক পয়েন্টের উদ্দেশ্যে খেলতে নামলে আই এস এলের প্রথম ম্যাচ হিসেবে এই অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু গোড়াতেই গলদ ছিল। তাঁর প্রথম একাদশ নির্বাচন বড়ো প্রশ্নচিহ্নের মুখে। আরও বড়ো আশ্চর্য্যের বিষয় হলো তার খেলোয়াড় পরিবর্তনের ধরণ।
অংকিত মুখার্জি (Ankit Mukherjee) হয়তো ওনার জীবনের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচগুলোর একটা খেললেন আজ। সুমিত পাসিকে নিয়ে একটিও বাক্য লেখা মানে সময়ের অপচয়। অথচ এদের দুজনকে পুরো ম্যাচ খেলানো হলো। কারণটা স্বয়ং ভগবান-ও জানেন না। কিরিয়াকু (Charalambos Kyriakou) বামদিকে স্বচ্ছন্দ না থাকা সত্বেও তাকে ওপাশ থেকেই খেলানো হলো। মোবাশিরকে (Mobashir Rahman) নামানো হলোনা। নাওরেম মহেশ (Naorem Mahesh Singh) এবং অনিকেত যাদবের (Aniket Jadhav) চোট ছিলো কিনা জানা নেই; তাদেরকে টিমেই রাখা হয়নি। অথচ দুজন গোলকিপার রিজার্ভ বেঞ্চে।
দুই বিদেশী ডিফেন্ডারকে নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন স্টিফেন সাহেব। গোলগুলোর ক্ষেত্রে ইভান গঞ্জালেজ (Iván González) বা কিরিয়াকুকে দোষ দেওয়া যায় না। লালচুনগুঙ্গা (Lalchungnunga) বয়েস অনুযায়ী বেশ পরিণত ফুটবল খেললেন।
কেরালার প্রথম গোলের ক্ষেত্রে হার্মানজোত্ সিং খাবরার দুর্দান্ত পাস থেকে আদ্রিয়ান লিমার দুর্ধর্ষ ফিনিশের নাগাল গোটা লাল-হলুদ বাহিনীকে হতভম্ব করে দেয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের নাগরিক ইভান কালিয়ুঝনী (Ivan Kalyuzhnyi) ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বারের জন্য বিপর্যস্ত করেন একক দক্ষতায়। ভারতের মাটিতে পরিবর্তিত হয়ে নামার পরে প্রথম টাচ থেকেই খেলার বিরাশি মিনিটে একটি ভয়ঙ্কর দৌড়ে কেরালার দ্বিতীয় গোলটি করেন। এর ঠিক ছয় মিনিট পরেই একটি কর্নার থেকে ইস্টবেঙ্গল ব্যবধান কমালেও পরের মিনিটেই কেরালার ইভান বক্সের মাথা থেকে একটি গোলার মতন শটে ইস্টবেঙ্গলের এক পয়েন্ট পাবার-ও সমস্ত আশায় জল ঢেলে দেন।
আক্রমণ ভাগে সুহের (V P Suhair) বেশ কয়েকবার ভালো জায়গায় বল পেলেও প্রথম টাচে আত্মবিশ্বাসের অভাব ফুটে উঠেছে বারংবার। ক্লেইটন সিলভা (Cleiton Silva) একা পরে যাচ্ছিলেন। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৮০ মিনিটে তিনটি পরিবর্তন করেন লাল-হলুদ কোচ। এলিয়ান্দ্র নামার পর তার শারীরিক উপস্থিতি একটি সাময়িক চাপ সৃষ্টি করে বিপক্ষ রক্ষণে। একটি গোল-ও পাওয়া যায় লিমার জোরালো ভলি থেকে।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠের উপর আর কোনো দখল ছিল না। আলেক্স লিমা (Alex Lima) যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও বাকিদের সাথে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। দুই ফরোয়ার্ডের পিছনের খালি জায়গাটা ভরাট করার কেউ ছিল না। তুহিন দাস (Tuhin Das) শরীর ব্যবহার করে খেলার চেষ্টা করলেও উইঙ্গারের কাজটি করে উঠতে ব্যর্থ। তবে সময় আরেকটু দেওয়া উচিত। শৌভিক চক্রবর্তী (Souvik Chakrabarti) বা মিনিট বারোর অমরজিৎকে (Amarjit Singh) দেখে খুব ভালো লাগেনি। কমলজিৎ সিং (Kamaljit Singh) এক-দুবার অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়লেও, অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন।
১৬ তারিখের পরের ম্যাচেই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী এটিকে মোহনবাগান। বহুবছর হয়ে গেলো জয়ের মুখ না দেখা এই ম্যাচে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে লাল-হলুদ?