১০১ বনাম ১: ‘নতুন’ কলকাতা ডার্বিতে পুরোনো হিসেব শোধ করতে চাইছে এসসি ইস্টবেঙ্গল

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

১৯৭৫ সালের ‘দিওয়ার’ চলচ্চিত্রের একটি বিখ্যাত দৃশ্য – দুই ভাই বিজয় (অমিতাভ বচ্চন) এবং রবি (শশী কাপুর) একে অপরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করছেন। বিজয় অর্থাৎ অমিতাভ বচ্চন উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করছেন – “আজ মেরে পাস বিল্ডিং হ্যায়, প্রপার্টিস হ্যায়, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স হ্যায়, বাংলা হ্যায়, গাড়ি হ্যায়। কেয়া হ্যায় তুমহারে পাস?” প্রত্যুত্তরে শান্ত অথচ দৃপ্ত কণ্ঠে রবি অর্থাৎ শশী কাপুরের জবাব – “মেরে পাস মা হ্যায়”।

কলকাতা ডার্বির দিন হঠাৎ কালজয়ী ‘দিওয়ার’ সিনেমা নিয়ে আলোচনা কেন? কারণ ইদানিংকালে সবুজ-মেরুন বনাম লাল-হলুদ সমর্থকদের বাগবিতণ্ডা শুনলে হিন্দি সিনেমার এই আইকনিক সিন-টা মনে পড়াটাই স্বাভাবিক। গত বছর, অর্থাৎ ২০২০-তে এটিকে-র সঙ্গে মার্জ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই মোহনবাগান সমর্থকদের অবস্থা অনেকটা ‘দিওয়ার’-এর বিজয়ের মতোই। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। এটিকে-র সঙ্গে মার্জারের ফলে বলতে গেলে সুবিধেই হয়েছে মোহনবাগানের। আইএসএলের সবচেয়ে সফল দল তাঁরা রেডিমেড পেয়ে গেছেন। রয় কৃষ্ণা-কে পেয়েছেন, ডেভিড উইলিয়ামস-কে পেয়েছেন, দেশের অন্যতম সেরা স্বদেশী ব্রিগেড আছে, এই মরশুমে হুগো বৌমাস-কেও পেয়েছেন, তবু এতো কিছু থাকা সত্ত্বেও একটা জিনিস নেই – সেটা হলো নিজেদের ক্লাবের একক অস্তিত্ব। গত এক-দেড় বছরে এটিকে-মোহনবাগান ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কর্তারা বারংবার স্বীকার করেছেন, ২০২০ সালে স্থাপিত এটিকে-মোহনবাগান আর ১৮৮৯-এর মোহনবাগান এক নয়। এমনকি “পুরোনো-কে ভুলে যান” মতো অযাচিত পরামর্শও নিজেদের কর্তাদের কাছ থেকে হজম করতে হয়েছে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের।

আর এখানেই প্রতিনিয়ত লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে যেন হেরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। লাল-হলুদ শিবিরে অনেক সমস্যা, অনেক “নেই”-এর মাঝেও কলার তুলে মাথা উঁচু করে রাস্তায় ঘোরার মতো একটা জিনিস আছে – নিজেদের ১০১ বছরের ক্লাবের নিজস্ব স্বকীয়তা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস আছে। এসসি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যখন #আমাগোক্লাব হ্যাশট্যাগ দিয়ে গর্ব করছেন, আইএসএলের ম্যাচের আগের রাতে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের গ্যালারিতে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে #ATKMBisNotMyClub-এর বিক্ষোভের আগুন।

যেমন আজকের ম্যাচটার দিকেই তাকানো যাক। কাগজে-কলমে হট ফেভারিট এটিকে-মোহনবাগান। গতবারের রানার্স আপ-রা এই বছরটাও শুরু করেছে প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে। অন্যদিকে শুরুতেই জামশেদপুর এফসির কাছে হোঁচট খেতে হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে, খোয়াতে হয়েছে ২ পয়েন্ট। জামশেদপুর এবারে ভালো দল না কেরালা দুর্বল – এই তর্ক বৃথা, কারণ দিনের শেষে কোন টিম কত পয়েন্ট ঘরে তুলতে পারছে, সেটাই আসল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আন্ডারডগ হিসেবেই মাঠে নামতে হবে লাল-হলুদ জার্সিধারীদের।

তবে আইএসএলে ঢোকার পর থেকে এই নিয়ে যে তিনবার এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল, প্রতিবারই পিছিয়ে থেকে শুরু করতে হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। কারণটা সহজেই বোধগম্য – প্রতিবারই এটিকে-র প্রবল শক্তিধর এবং সাজানো সেট টিমের বিরুদ্ধে শেষমুহূর্তে বানানো অগোছালো দল নামাতে হয়েছে। এবারও তার অন্যথা নয়। একবার দুটো টিমের দিকে চোখ বোলালেই চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাবে:

গোলরক্ষক:

এই পজিশনে লড়াই একেবারে সেয়ানে-সেয়ানে। গতবারে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে আইএসএলে গোল্ডেন গ্লাভস জেতা অরিন্দম ভট্টাচার্য্য এবারে শিবির পাল্টে লাল-হলুদ দুর্গ সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। পরেছেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও। ডার্বির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে পিছন থেকে পুরো দলকে তাতানোর গুরুদায়িত্ব কিন্তু অরিন্দমকেই নিতে হবে।

অন্যদিকে অরিন্দম দল ছাড়লেও মুম্বাই সিটি এফসি-কে চ্যাম্পিয়ন করা অমরিন্দর-কে তুলে নিয়েছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, উৎসব পারেখ-রা। ফলে এই দুই অভিজ্ঞ গোলকিপারকে টপকে বল জালে জড়াতে দুইপক্ষের স্ট্রাইকারদেরই বেশ বেগ পেতে হতে পারে।

রেটিং:
এসসি ইস্টবেঙ্গল – ৮/১০
এটিকে মোহনবাগান – ৮/১০

রক্ষণ:

শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস – তিন বাঙালী সাইড ব্যাক এটিকে মোহনবাগানের ডিফেন্সে। সাথে রয়েছেন গত বছরে দুর্দান্ত খেলা কার্ল ম্যাকহিউ, যাঁকে প্রথম ম্যাচে স্টপারে খেলিয়েছেন কোচ আন্তোনিও হাবাস। দীপক টাংরি, আশুতোষ মেহতা-রাও থাকছেন। তবে চোটের জন্য নেই এটিকে ডিপ ডিফেন্সের ভরসা তিরি। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে সন্দেশ ঝিঙ্গান দল ছেড়ে যাওয়ায়। এটিকে মোহনবাগানের ডিফেন্স যে বেশ নড়বড়ে, তা গত ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়ে গেছে কেরালা ব্লাস্টার্স। ফলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকাররা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।

লাল-হলুদ ডিফেন্সকে একটু হলেও এগিয়েই রাখতে হবে। দুই বিদেশী স্টপার মার্সেলা এবং পর্চে প্রথম ম্যাচে যথেষ্ট ভরসা জুগিয়েছেন। উপরি পাওনা বিপক্ষ বক্সে সেটপিসের সময় উচ্চতা কাজে লাগানোর প্রবণতা। সাথে কোচ মানোলোর হাতে রয়েছে আদিল খান, রাজু গায়কোয়াড়-রাও। রাজু আগের চেয়ে অনেকটাই ফিট। রাজু খেললে লম্বা থ্রো-ইনের সুবিধাটাও পেতে পারে ইস্টবেঙ্গল।

কিন্তু মাঝমাঠে ড্যারেন সিওডেল খেললে হয়তো এক বিদেশী স্টপার নিয়েই নামতে হতে পারে ইস্টবেঙ্গলকে। সেক্ষেত্রে মার্সেলার সাথে জুটি বাঁধতে পারেন আদিল। যদিও কৃষ্ণা-হুগো-মানবীর-লিস্টন – এই চতুর্ভুজের বিপক্ষে এক বিদেশী স্টপারে খেলাটা বেশ বিপজ্জনক। মানোলো কি শুরুতেই সেই ঝুঁকি নেবেন? মনে হয় না।

তবে লাল-হলুদ কোচকে ভাবাবে সাইড ব্যাকের দুর্বলতা। রফিক আগের ম্যাচে রাইট ব্যাকে সেরকম সুবিধা করতে পারেননি। লেফট ব্যাকে হীরা মন্ডলের বদলি কে? হুগো বৌমাস, লিস্টন কোলাসো কিন্তু উইং দিয়েই আক্রমণগুলো শুরু করেন। দুপ্রান্ত থেকে রয় কৃষ্ণদের সাপ্লাই লাইন কাটার জন্য কাদের দায়িত্ব দেন মানোলো, সেদিকে নজর থাকবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের।

রেটিং:
এসসি ইস্টবেঙ্গল – ৭.৫/১০
এটিকে মোহনবাগান – ৬.৫/১০

মাঝমাঠ:

মরশুমের প্রথম ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে চার ভারতীয় নিয়ে গড়া বিদেশীহীন মাঝমাঠ নামিয়ে চমকে দিয়েছিলেন মানোলো দিয়াজ। সিওডেল, আমিরদের জায়গা হয়েছিল বেঞ্চে। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন ফুটবল না খেললেও কার্যকরী ফুটবল খেলেছিল ভারতীয় মাঝমাঠ। সৌরভ দাস, আঙ্গুসানা-রা ভালস্কিস, জর্ডন মারে-দের বিশেষ দাঁত ফোটাতে দেননি। তবে এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণভাগ প্রচন্ড শক্তিশালী। আশা করা যায়, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড সংগঠনে বিশেষ জোর দেবেন রিয়েল মাদ্রিদ-বি দলকে কোচিং করিয়ে আসা মানোলো। ফলে আজ শুরু থেকেই ড্যারেন সিওডেল-কে মাঠে দেখা গেলেও যেতে পারে। ডার্বির কথা মাথায় রেখে প্রথম একাদশে অমরজিত সিং কিয়াম, জ্যাকিচাঁদ-রাও ঢুকতে পারেন।

এটিকে মোহনবাগানের মাঝমাঠ আইএসএলের যে কোনও দলকে টেক্কা দেবে। হুগো বৌমাস তো রয়েছেনই, সঙ্গে আছেন ইউরো খেলা জনি কাউকো, লেনি রডরিগেজ, বিদ্যানন্দ সিং-রা। ফলে কাঁটে কা টক্কর এখানেও। তবে হুগোর জন্যই মাঝমাঠের লড়াইয়ে এগিয়ে থেকেই শুরু করবে এটিকে মোহনবাগান।

রেটিং –
এসসি ইস্টবেঙ্গল – ৭/১০
এটিকে মোহনবাগান – ৮/১০

আক্রমণ:

এই একটা জায়গাতে এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। আইএসএলে বিদেশীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং হুগো বৌমাস দলে আসায় ডেভিড উইলিয়ামসের মতো বিদেশীকে বেঞ্চে রেখে টিম নামাতে হচ্ছে হাবাসকে। হাবাসের আরও সুবিধা, তাঁর হাতে রয়েছে মানভির সিং, লিস্টন কোলাসো, যাঁরা ভারতীয় মানে এই মুহূর্তে অন্যদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে, এবং যাঁরা নিয়মিতভাবে আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে পারেন। এতে রয় কৃষ্ণদের কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

এসসি ইস্টবেঙ্গলে ড্যানিয়েল চিমার উপরে প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম ম্যাচে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। কার্যত ম্যাচ ফিটনেসের অভাব দেখা গেছে। পেরোসেভিচ প্রথম ম্যাচের নিরিখে বেশ ভালো। উইং দিয়ে কাট করে ভিতরে ঢোকার প্রবণতা আছে। এটিকে বক্সের বামপ্রান্তে খেলা শুভাশীষ বোসের প্রবণতা আছে কড়া ট্যাকেল করার। ফলে পেরোসেভিচের কাছে সুযোগ আসতে পারে বক্সের আশেপাশে ফ্রিকিক আদায়ের। তবুও, জামশেদপুরের বিরুদ্ধে মাঝমাঠে সেই অর্থে খেলা দানা না বাঁধায় এসসি ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগকে তেমন বিষাক্ত লাগেনি। সিওডেল প্রথম একাদশে ঢুকলে, বা দুই বিদেশী স্টপারে খেললে আমিরের প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু আমিরের উচ্চতা, বল ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষমতা, সেটপিস নেওয়ার দক্ষতা নিয়ে প্রশংসাই শোনা গেছে। এখন দেখার, প্রথম একাদশে চিমা, পেরোসেভিচ, আমির – এঁদের মধ্যে কোন একজন (অথবা দুজন) জায়গা করে নেন।

রেটিং:

এসসি ইস্টবেঙ্গল – ৬/১০
এটিকে মোহনবাগান – ৯/১০

স্প্যানিশ কোচেদের মগজাস্ত্র:

১৯ শে জানুয়ারী, ২০২০-র পর আবার দুই প্রধানের ডাগআউটে দেখা যাবে দুই স্প্যানিশ কোচকে। কলকাতা ডার্বিতে শেষ বার ইস্টবেঙ্গল জিতেছিল ২২ মাস আগে, ২৭শে জানুয়ারী, ২০১৯-এ। সেবারও ট্যাকটিক্সে কিবু ভিকুনাকে টেক্কা দিয়েছিলেন আলেহান্দ্রো মেনেন্দেজ গার্সিয়া। তারপরে এসেছে অনেক পরিবর্তন। মোহনবাগান বদলে গেছে এটিকে মোহনবাগানে, যেই টিমকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন হাবাস। এসসি ইস্টবেঙ্গলে প্রতিবছরের ইনভেস্টর-কর্মকর্তা দ্বন্দ্বে টিম তৈরী হচ্ছে একেবারে শেষমুহূর্তে। ফলে মানোলোর কাজটা অনেক কঠিন।

কিন্তু এই জন্যই এটা কলকাতা ডার্বি, এখানে এক লহমায় কেউ হিরো থেকে জিরো হয়, আবার কোনও অখ্যাত হয়ে ওঠে ষ্টার। আর কে না জানে, বড় খেলোয়াড়, বড় কোচেরা তো বড়ম্যাচকেই বেছে নেন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মঞ্চ হিসেবে।

হাবাসের হাতে প্রচুর মশলা, ফলে ওনার রান্না করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ভালো রাঁধুনীরা এক চামচ তেলেও সুস্বাদু ইলিশ ভাপা বানিয়ে ফেলতে পারেন। মানোলোর প্রধান সমস্যা দুটো – ১. প্রথম একাদশের চার বিদেশী চূড়ান্ত করা, ২. কৃষ্ণা-হুগো-মানবীর-লিস্টন এই চতুর্ভুজকে আটকানো।

এখন দেখার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হওয়ার সাহস কি দেখবেন মানোলো, নাকি শক্তিধর প্রতিপক্ষকে মেপে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে চাপ বাড়াতে চাইবেন।

২০১৬-তে বড় বড় হাতি ঘোড়াদের হারিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ জিতেছিল ক্লডিও রেনিয়ারি-র প্রশিক্ষণাধীন লিলিপুট লেস্টার সিটি। মানোলো দিয়াজ কি পারবেন ফকির থেকে রাজা হয়ে উঠতে? তিলক ময়দানে ৯০ মিনিটের যুদ্ধের শেষে নিজের কপালে জয়তিলক আঁকতে?

লাল-হলুদ জনতা কিন্তু ২২ মাস অপেক্ষা করে আছে। পুরোনো হিসেবটা মেটানোর সময় এসেছে। ইতিহাস সাক্ষী আছে, ইস্টবেঙ্গল কিন্তু কারোর ধারদেনা বাকী রাখে না। ফুটবল ঈশ্বর কি আজ সহায় হবেন? অপেক্ষা আর কয়েক ঘন্টার।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.