ছাব্বিশ দিনের যন্ত্রনা মিটলো শেষ মিনিটের গোলে

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে স্কট নেভিলের গোলে শুধু যে এক পয়েন্ট লাভ হলো তা-ই নয় , সাথে অসংখ্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের বিগত ছাব্বিশ দিন ধরে বয়ে বেড়ানো একটা ঘায়ে খানিকটা মলমের প্রলেপ পড়লো। আই এস এলে পদার্পণের পর ষষ্ঠ ম্যাচ অবধি প্রথম জয়ের জন্য হাপিত্যেশ করে থাকা লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের ধুকপুক করতে থাকা বুকের ভিতর খেলা শেষের আগের মুহূর্তে বুলেট পুরে দিয়ে গেছিলো জিকসন। যাই হোক , কেমন খেললো ইস্টবেঙ্গল? এক এক করে বলা যাক।

প্রথম ধাক্কা লাগে খেলা শুরুর আগের মুহূর্তে , যখন জানা যায় রাজু খেলতে পারবেনা। একটু ভরসা দিতে শুরু করা ডিফেন্সে হঠাৎ পরিবর্তন হোম-ওয়ার্কগুলো অবিন্যস্ত করে দিলো। রানা ঘরামীর বল বিন্যাস ছাড়া ডিফেন্স সামলানো নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। গোলের প্রসঙ্গে পরে আসছি। ডিপ ডিফেন্সে চট করে কোনো কোচ পরিবর্তন চান না। আর টিমলিস্ট প্রকাশের পর হলেই তো আরও সমস্যার। যে খেলোয়াড় টি নামবে তার মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি-ই থাকেনা। যেখানে নীচের থেকেই খেলা তৈরী করার চেষ্টা হচ্ছে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই বোঝাপড়ার তাৎক্ষণিক অভাব ধরা পড়েছে প্রথম মিনিট দশেক। তবে যারা আধুনিক ফুটবল দেখেই থাকেন তাদের কাছেই এমন ভুলচুক এবং তৎক্ষণাৎ সামলে ওঠার রণনীতি আশ্চর্যের মনে হবার কথা নয়। ডিফেন্স নড়বড় করলেও ভেঙে পড়ছে বলে মনে হয়নি। নিয়মিত বলের সঠিক উচ্চতায় পৌঁছতে না পারা বা গোল মুখী বক্সের ভিতর থেকে বিনা-প্রতিরোধের শট দুটো-তিনটে হাফচান্সে ছাড়া হয়েছে বলে খেয়াল পড়ছেনা।

বারবার নিজেদের অর্ধে কর্তৃত্ব হারাবার আরেক কারণ হলো মিলন সিংহের খেলা তৈরী করার বা বল ছড়িয়ে দেবার অক্ষমতা। যারা খেলা মন দিয়ে দেখেছেন তাদের কাছে কিন্তু মিলান সিংহের রক্ষণ সামলানোয় যোগদান নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন থাকার কথা নয়। বার-দুয়েক যে ফাউলগুলো করেছে সেটা যেকোনো সি ডি এম -এর দ্বারা হয়ে থাকে। সেগুলো হয় ট্যাকটিক্যাল নতুবা সিডিএম-সুলভ চিরাচরিত। তবে ইস্টবেঙ্গল যে খেলাটা খেলতে চাইছে তার জন্য মিলান সিংহ অনুপযোগী। শেহনাজ এলেও যে ডিস্ট্রিবিউশনের খুব উন্নতি হবে সেটা আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়না। লোকেন মিতেই-এর সেই ক্ষমতাটি ছিল বলেই মানি হয়েছিল। দুর্ভাগ্য। তবে অজয় ছেত্রী বেশ নজর কাড়লো। তার ডিফেন্স থেকে বল নেবার উৎসাহ এবং চ্যালেঞ্জের মুখেও খেলা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা আগামী ম্যাচগুলোতে ভরসা দেবে। ওর খেলার ধরণটা আর একটু শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে পারলে আরো তাৎপর্য্যপূর্ণ হবে। একটা একুশ বছরের ছেলের সামনের বছরগুলো বেশ সম্ভাবনাময়।

এবার আসি আরেক অল্পবয়েসী প্রতিভার কথায়। হারমানপ্রীতের ‘অফ দ্য বল’ গতিবিধি বেশ ভালো হলেও ও এখনো স্ট্রাইকার হয়ে উঠতে পারেনি। মাঘমার খেলার সাথে তার তালমিলের বড়ো অভাব। মাঘমা আর পিলকিংটন দুজনেই বস্তুতঃ উইং হাফ এবং তারা দুজনেই উইং বরাবর খেলে কেটে ভিতরে ঢুকে নিয়ার -পোস্ট টার্গেট করে। এইক্ষেত্রেই একজন ওয়ান -টু খেলতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু অনভিজ্ঞ হার্মান বেশ কয়েক বার সেই জায়গার বিপরীত অবস্থানে অথবা অনেক ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকছিল। একটা ঊনিশ বছরের ছেলের এই ধারণাগুলো তৈরী হতে সময় লাগে। সবাই এম্ব্যাপে নয়। তার যায়গায় জেজে কেন নয় এই প্রশ্নটা চূড়ান্ত অবান্তর বলেই আমার মনে হয়. কারণ জেজে কে আগেও দেখেছি। আর ও ফিট থাকলে হয়তো কোচ ওকেই খেলাবেন। তার ফিটনেস নিজের বাড়ির ড্রইংরুমে বসে আমার অনুধাবন ক্ষমতার বাইরে। সর্বোপরি সামনের বছরের চার বিদেশির (তার মধ্যে একজন এশিয়ান কোটা) নিয়মের হিসেব কষে কেউ আর অল্প-বয়েসী ভারতীয় স্ট্রাইকার ছাড়বেনা। অতয়েব এই বছর হার্মানকে তৈরী করে নেয়া গেলে আখেরে লাভ ইস্টবেঙ্গলেরই।

ব্রাইট এবং টিভি তে কিছুটা আনফিট মনে হওয়া স্টেইনমান মাঠের মাঝখান বরাবর খেলতে পছন্দ করে। কিবু খুব বুদ্ধি করে ওই চ্যানেলটিতে সর্বক্ষণ ডাবল কাভারিং রেখে গেছেন। কেউ সরাসরি ট্যাকেলে যাচ্ছিলোনা। স্টেইনমান বল ধরেই খুব ছোট ছোট ছোয়াঁয় আর শরীরের ভাজে এগোতে পছন্দ করে। খুব একটা গতি দেখা যায়না। পাশাপাশি ব্রাইট ড্রিবল করতে করতে চকিতে গতি বাড়িয়ে নেয়। আজ এই দুজনে আটকে পড়ে মাঘমা বারবার উইং-এ এক পরে যাচ্ছিল। সামনে টার্গেট-ম্যান নেই। বার দুয়েক হতাশ হয়ে খেলা থামিয়ে ব্যাক-পাস বা স্কোয়ারে পাস করতে বাধ্য হয়। পিলকিংটন, মাঘমা আর স্টেইনম্যানের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরী হয়েছিল। তার মধ্যে ব্রাইট এসে বিকল্প বাড়ালেও প্রথম এগারো কি হবে সেটা ফাউলের সাহেবকে নির্ঘাৎ ভাবাচ্ছে। কারণ ডিফেন্স নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুব একটা চলেনা। এতদিনে ডিফেন্স একটু ভরসা জোগালেও কপালের পরিহাসে আবার রাজুর চোট হলো। কতটা গুরুতর তা এখনো জানা নেই যদিও।

আরন অবশ্যই প্রথম একাদশের প্লেয়ার নয়। তবে আরন আসার পর বিপক্ষ ডিফেন্সে শারীরিক উপস্থিতির প্রভাব পরে। যেটা হার্মান পারছিলোনা। তবে কোচ হার্মানকে তুলে কাকে নামতেন সেই প্রশ্নে গেলে অনেকে হয়তো বলবেন, “কেন, রফিক ?” আমার উত্তর, সেটা যদি সম্ভব হতো সেটা কোচ প্র্যাক্টিসে ঠিকই উপলব্ধি করতেন আর রফিককে নামাতেনও। রফিকের আক্রমণ ভাগে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা সকলেরই চোখে পড়েছে , এবং ওর শটের বা ক্রসের মান গত কয়েক ম্যাচ ধরেই দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত নিম্ন। রফিক ইউনাইটেডের হয়ে বছর সাতেক আগে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেছে বলে আজো সে সেখানে খেলে দেবে এমন চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকুন। যারা স্ট্রাইকারে এক বছর আগে খেলেছে তারাই তো খাবি খাচ্ছে। ‘আরে কোচ সুযোগ তো দিক’ মনে হলে, মনে রাখবেন কোচ কিন্তু প্রাকটিস সেশনেই দেখে নেন কার কোথায় দক্ষতা। রফিক অনেক খেটে খেলে আর এই মরসুমে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ নিরন্তর পরিশ্রম করেছে। জেজেকে রোজ বেঞ্চে রেখেও নামাতে পারছেনা তার ফিটনেসের অভাবে।

জাইরুর ডিফেন্সিভ ক্ষমতা খুব খারাপ হওয়ার কারণে কোচ নড়বড়ে নারায়ণকে খেলতে বাধ্য হচ্ছে। অপর দিকে অঙ্কিত-ও অনভিজ্ঞ। তিন স্টপার সিস্টেমে উইং হাফদের বড়ো ভূমিকা থাকে উঠে-নেমে ডিফেন্সে সাহায্য করা। বাঁ দিকটাতে উইং কাজ না করে ডান প্রান্তে মাঘমার উপর চাপ পড়ছিলো খুব। আর বিপক্ষের কাছে ধরা পরে যাচ্ছিলো পরিকল্পনা। কোচের হাতে প্ল্যান-বি -এর অভাব। এবং সেটা শুধুমাত্র ভালো বিকল্প বেঞ্চ-এ না থাকার জন্য। খেয়াল করে দেখবেন দেবজিৎ ছাড়া যারা খেলছে তাদের অধিকাংশই পরে যোগ দেওয়া খেলোয়াড়। প্রথম দিকের কোচ আর ভরসা রাখেননি। দেবজিৎ আর নারায়ণ থাকলেও, দেবজিতের জায়গায় শঙ্কর এসেছিলো। চোটের কবলে না পড়লে হয়তো ও-ই প্রথম গোলকিপার থাকতো। আর নারায়ণের জায়গায় যারা এসেছিলো তারাও খুব একটা ভরসা দিতে পারেনি।

সবার শেষে আসি দেবজিতের কথায়। কোচের সিস্টেমে দরকার একজন সুইপার -কিপার। সেখানে দেবজিতের ডিস্ট্রিবিউশন খুব খারাপ। গোলকিক নেবার সময় বল হাফলাইন পার করেননা এবং কার কাছে যাবে কেউ জানেনা। আর আজ আরেকবার আউটিং-এর সময় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় অনুচিত ভাবেই ঝাঁপ দিলো আর বলের বাউন্স মিস করলো। কোনো রকমে বল গেলো গোলে। দুজন ডিফেন্ডার মারেকে ভারসাম্যহীন করে ফেলায় বলটার উপর সে নিয়ন্ত্রণ হারায়। গোলকীপার যদি আগে বেরিয়ে আসতো বা লাইনেই থাকতো তবে গোল তা হয়না। তা সত্বেও দেবজিৎ থাকায় ডিফেন্স অনেকটাই নিশ্চিন্ত।

যাই হোক, আজ আবার বেঞ্চের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠলো। দেখা যাক, পরের ম্যাচে প্রথম টীম কেমন হয়।

শেষ মিনিটের গোলে ছাব্বিশ দিনের যন্ত্রনা তো মিটলো, কিন্তু আশা বেড়ে যাওয়া সমর্থকদের মন ভরলো না।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.