- ৪০ মিনিটে লুজ বল পেয়ে বক্সের মধ্যে ফাঁকায় দাঁড়ানো রডরিগোকে গোলের ঠিকানা লেখা পাস দেওয়া।
- ৮৪ মিনিটে ডি মারিয়ার থেকে বল পেয়ে লাউতারো-কে আবারও প্রায় প্লেটে বল সাজিয়ে দেওয়া।
- ৯৩ মিনিটে নিজে শৈল্পিক ফ্রিকিকে গোল করা।
চুম্বকে দুই অর্ধে তিনবার মেসি ম্যাজিকে বশীভূত ইকুয়েডর। আর অধিনায়ক মেসির চওড়া কাঁধে ভর করেই ২০২১-এর কোপা আমেরিকার (2021 Copa América) সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল লিওনেল স্ক্যালোনির প্রশিক্ষণাধীন আর্জেন্তিনা। এস্তাদিও অলিম্পিকো স্টেডিয়ামে (Estádio Olímpico Pedro Ludovico Stadium) তাঁরা ইকুয়েডরকে হারালো ৩-০ গোলে। একটা গোল আর দুটো এসিস্ট করে নায়ক সেই লিওনেল মেসি (Lionel Messi)।
এবারের কোপার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামার আগে টানা ১৭টা ম্যাচ অপরাজিত ছিল আর্জেন্তিনা (Argentina national football team)। সঙ্গে আছে ১৯৯৩ সালে শেষবারের মতো কোপা জেতার পর থেকে গত ২৮ বছরের ট্রফিখরার হতাশা। ফলে প্রত্যাশার চাপ নিয়েই কোপার নকআউট রাউন্ডে নেমেছিলেন মেসি-ওটামেন্ডিরা।
শুরুটা ভালো করলেনও নীল-সাদা জার্সিধারীরা। ১৪ মিনিটে মার্কোস আকুনার (Marcos Acuña) লব ধরে লাউতারো ইকুয়েডরের ডিফেন্সকে গতিতে পরাস্ত করে শট নিলেও হেড করে বল বিপন্মুক্ত করেন ইকুয়েডরের সেন্টার ব্যাক রবার্ট আরবলেডা (Robert Arboleda)। ১৬ মিনিটে মেসির শট বক্সের ভিতরে প্রেকিয়ার্ডোর (Ángelo Preciado) হাতে লাগে। যদিও ভার চেকের (VAR check) পরেও পেনাল্টি দেননি রেফারি, সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবলের দোহাই দিয়েই এযাত্রা বেঁচে যায় ইকুয়েডর (Ecuador national football team)।
২৩ মিনিটের মাথায় বরাতজোরে পিছিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায় গুস্তাভো আলফারোর প্রশিক্ষণাধীন (Gustavo Alfaro) ইকুয়েডর। প্রতিপক্ষ ডিফেন্সের ভুলে ক্লিয়ার করতে যাওয়া বল এসে পরে মেসির পায়ে। কিন্তু গোলকিপারকে ১:১ অবস্থায় পেয়েও মেসির গড়ানো প্লেসমেন্ট গিয়ে ধাক্কা লাগে পোস্টে। গোল অধরাই থেকে যায় আর্জেন্তিনার (Argentina national football team)।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৪০ মিনিটে গোলমুখ খুলতে সমর্থ হয় আর্জেন্তিনা। মেসির বাঁপায়ে বাড়ানো থ্রু ধরে বক্সে ঢোকার মুখে আগুয়ান গোলকিপারের কাছে আটকে যান নিকোলাস গঞ্জালেজ (Nicolás González)। ছিটকে আসা বল ফের মেসির পায়ে এসে পড়লে মেসি সেই বল প্রায় প্লেটে সাজানোর মতো করে বাড়িয়ে দেন সমান্তরালভাবে ডানদিক ধরে উঠে আসা রডরিগো ডে পল-কে (Rodrigo De Paul)। গোলে বল রাখতে ভুল করেননি ইতালির উদিনেসের (Udinese Calcio) হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলা এই এটাকিং মিডফিল্ডার (১-০)। এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে সাজঘরে ফেরেন মেসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৪০ মিনিট সেইভাবে আর ওপেন গোলের সুযোগ তৈরী করতে পারেননি লা আলবিসেলেস্তে-রা (La Albiceleste)। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট ছয়েক আগে, অর্থাৎ ৮৪ মিনিটের মাথায় ডি মারিয়া ইকুয়েডর ডিফেন্স থেকে বল কেড়ে নিলে বাঁপায়ের ছোট্ট টোকায় সেই বল মেসি আবারও সাজিয়ে দেন লাউতারো মার্টিনেজের জন্য। ঠান্ডা মাথায় বল গোলে রাখেন তিনি (২-০)।
ইনজুরি টাইমের ৩ মিনিটের মাথায় নিজের অগণিত ভক্তদের ম্যাচের সেরা মুহূর্তটা উপহার দিলেন লিওনেল মেসি। বাঁপায়ের সিগনেচার ফ্রিকিক থেকে গোল করে মেসি বুঝিয়ে দিলেন, ফুটবলবিশ্বকে এখনও অনেক কিছু দেওয়া বাকি আছে তাঁর (৩-০)। ডিরেক্ট ফ্রিকিক থেকে নিজের প্রফেশনাল কেরিয়ারে এটি মেসির ৫৮-তম গোল, যার ফলে তিনি টপকে গেলেন প্রতিদ্বন্দ্বী, আধুনিক ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে (Cristiano Ronaldo)।
৩৪ বছর বয়সী লিওনেল মেসি বনাম ৩৬ বছরের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো – কেরিয়ারের শেষভাগে পৌঁছতে শুরু করেছেন দুজনেই। এক সপ্তাহ আগেই ইউরো থেকে ছিটকে গিয়েছে রোনাল্ডোর পর্তুগাল, যদিও এখনও সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যুগ্মভাবে শীর্ষে আছেন তিনি। অপরদিকে, মেসি টেনে নিয়ে চলেছেন আর্জেন্টিনাকে। কোপা আমেরিকা ট্রফি থেকে আর দু ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনা।
রোনাল্ডো হয়তো তাঁর শেষ ইউরো খেলে ফেলেছেন, মেসিও বোধহয় তাঁর শেষ কোপা খেলছেন। সারা বিশ্বের একটা গোটা প্রজন্মের দুজন আইডল নিঃশব্দে পা বাড়াচ্ছেন বানপ্রস্থের দিকে। এবার মনে হয় সময় এসেছে, রোনাল্ডো না মেসি – এই তর্ককে দূরে সরিয়ে এই দুজন কিংবদন্তির শেষ কয়েকটা বছর চেটেপুটে উপভোগ করার।