অপ্রতিরোধ্য মুম্বাই সিটি এফসি বনাম বদলে যাওয়া এসসি ইস্টবেঙ্গল : ফল কিছুটা প্রত্যাশিত, তবে যুদ্ধ হলো ব্যতিক্রমী

Ahmed Jahouh makes a dangerous high-boot challenge on Scott Neville

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত থেকে এই আইএসএলের টেবিল শীর্ষের দল মুম্বাই সিটি এফসি। তাদের কোচ সের্গিও লোবেরা এফসি গোয়া-তে থাকাকালীন অনবদ্য ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন এবং সেই ঐতিহ্য উনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারের সাথে সাথে বগলদাবা করে মুম্বাই সিটি এফসি-তে নিয়ে এসেছেন। সেই দলের বিপক্ষে দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে থাকা রবি ফাউলারের এসসি ইস্টবেঙ্গলের সাত ম্যাচের অপরাজিত থাকার দর্প কি অটুট থাকলো? না থাকেনি। তার কিছু কারণ বিশ্লেষণ করা যাক।

প্রথমেই যেটা উঠে আসছে সেটা হলো আক্রমণভাগের দুর্বলতা। প্রকৃত বক্স -স্ট্রাইকারের অভাব আজ আবার প্রকট হলো। ঊনিশ বছরের হারমানপ্রীত আস্তে আস্তে জায়গায় পৌঁছলেও কাজের কাজটি করে উঠতে পারছেনা। ওর বল তাড়া করার খেলা প্রশংসার যোগ্য হলেও সাথে আরেকজন ‘ফলস নাইন’ না থাকায় আর নিজেও গোল না করার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় সমস্ত দৌড়োদৌড়ি আরবসাগরে জলাঞ্জলি যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পিলকিংটনের থেকে কাঙ্খিত খেলাটা পাওয়া যাচ্ছেনা। এগারো ম্যাচের শেষে একটি গোল এবং একটি গোলের পাস বাড়ানো ছাড়া আক্রমণের ক্ষেত্রে ওনার অবদান শুধু ছোটাছুটি আর বেশ কিছু মাঝারিমাপের শট। উনি ইস্টবেঙ্গলে ওনার স্বাভাবিক পজিশনে খেলতে না পারলেও আরো কিছু বল জালে জড়াবেন এমন আশাই ছিল সমর্থকদের।

ম্যাচের পর অ্যান্টনি পিলকিংটনের ইন্টারভিউ

ব্রাইট এনোবাখারে সম্বন্ধে কোচ শুরুতেই বলেছিলেন যে ও প্রচুর গোল হয়তো করবেনা কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরী করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কার জন্য ! দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাইট এবং আরন আমাদি নামার পর গোলমুখী আক্রমণ অনেক তীব্র ছিল। আমাদির খেলা আজ অনেক উদ্দেশ্যপ্রবণ ছিল। অ্যারন আমাদি হলোওয়ে নামার পর পিলকিংটন ওর পছন্দের বামপ্রান্ত থেকে আক্রমণ তৈরী করতে থাকে। তাহলে কি এই দলটারই প্রথম থেকে খেলা উচিত ছিলো? মাত্তি স্টেইনমান আর ফক্স বা স্কট নেভিলের মধ্যে একজনকে যদি শুরু থেকেই বসিয়ে রাখা হতো? তাহলে কি নিশ্চিত তিন পয়েন্ট আসতো ? সেটা বলা মুশকিল, কারণ ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধে দু গোল খেয়ে গেলে তখন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেও দু গোল শোধ দেওয়া যেত না। বরঞ্চ প্রথমার্ধে ডিফেন্সের ভুলে গোল না খেলে এই ম্যাচ থেকে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়াই যেত।

এবার আসা যাক মাঝমাঠের কথায়। মিলন সিংহের কোনো পরিবর্ত নেই। আজ ওর খেলা ভালো বা খারাপ কোনোটাই নয়। মুম্বাই সিটি এফসি-র শক্তিশালী মাঝমাঠের জবাব তার কাছে থাকার কথাও নয়। অনেকে রফিককে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানোর কথা ভাবলেও, রফিকের চেহারা আর খেলার ধরণ উইংয়েই বেশি কার্যকর। শেহনাজের চোট সারার কোনো খবর এখনো নেই। মিলান আজ চোট পাবার পর আঙ্গুসানা ভালোই খেললো। যদিও অজয় ছেত্রীকে পরের ম্যাচে পাওয়া যাবে। ম্যাত্তি স্টেইনম্যান আর মাঘোমার অবদান নিয়ে নতুন করে কিছু লেখার নেই। যদিও আজ গোলটির ক্ষেত্রে দুজনের কেউই দোষ এড়িয়ে যেতে পারেনা। জার্মান মিডফিল্ডার আরো বার তিনেক রক্ষণে সংবেদনশীল ছিল। সুরচন্দ্র সিংহ যে নিয়মিত সুরে গান গাইবেন তেমন আশা করা অন্যায়। তাকে খেলানোর একটাই সুবিধা যে তার বাঁ পা আর ডান পা দুটোই চলে। তবে তাতে লাভ কতটা হচ্ছে সেটা তর্কসাপেক্ষ। তার জায়গায় জাইরুকে খেলানো গেলে হয়তো ভালো হতো, কিন্তু তার ফিটনেস কেমন তা নিয়ে তেমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছেনা। সত্যি বলতে চোটগ্রস্ত কোনো খেলোয়াড়েরই সুস্থতা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা। যেমন জেজে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকলেও তাকে নামতে দেখা যাচ্ছেনা। সমর্থকদের বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। বিশেষ করে যখন গোল হচ্ছে না। ম্যাচের শেষে ফাউলার যদিও বললেন যে জেজে এখনো সম্পূর্ণ ম্যাচ-ফিট নয়।

খেলার শেষে লাইভে আলোচনা

মুম্বাই সিটি এফসি ম্যাচে একবার একটি ভুল ছাড়া দেবজিৎকে খুব কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়নি। প্রথমার্ধে ডিফেন্সে প্রচুর ভুলভ্রান্তি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুম্বাই সিটি এফসি-র তারকাখচিত ফরওয়ার্ডরা সেইসব সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছে। ভালো রকম হোম-ওয়ার্ক করে আসা লোবেরার ছেলেরা যখন ছোট-বক্সের মাথায় বলগুলো ভাসিয়ে রাখছিলো তাদের দীর্ঘদেহী খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে, তখন বারবার ফক্স, নেভিলদের বিভ্রান্ত লাগছিলো। বিপিন সিংহের দৌড়গুলো অঙ্কিত মুখার্জীকে বহুবার অপদস্থ করেছে। গোলের সময়-ও অঙ্কিত জায়গায় ছিলোনা। একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। গোলটা যখন হয় তখন গোটা রক্ষনভাগটাই থমকে গিয়েছিলো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোচের দুটো পরিবর্তন ডিফেন্স মজবুত করে। রানা ঘরামী এবং মহম্মদ রফিক দ্বিতীয়ার্ধে নেমে নিজেদের কাজটা আজ বেশ ভালোই করেছে। প্রথম জন আসার পর নেভিল ডানদিকে সরে যাওয়ায় বিপিন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। রানা বেশ কিছু বল জিতেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে। নেভিল উপরের দিকে উঠতে আরম্ভ করায় রফিক ডান প্রান্ত বরাবর বলের আদানপ্রদান সক্রিয় রাখছিলো।

ম্যাচের শেষে রবি ফাউলারের প্রেস কনফারেন্স

লোবেরার দলে বল প্লেয়ার আর পাস খেলার লোকের অভাব নেই। দুর্ধর্ষ আক্রমণভাগ। তারা বলের দখল নিজেদের কাছে রেখে খেলার গতির উপর কর্তৃত্ব করতে পছন্দ করে। যেই দলে বিদেশীদের মধ্যে লা ফন্দ্রে খেললে ওগবেচের মতো স্ট্রাইকার বেঞ্চে বসে থাকে, যেই দলে বুমোর মতন খেলা তৈরীর শিল্পী, সাই গোডার্ড-এর মতন পরিশ্রমী উইঙ্গার, আহমেদ জহুর মতন দুর্ভেদ্য মিডফিল্ডার এবং আজকের সেরা খেলোয়াড় মুরতাদা ফলের মতন আইএসএলে এগারো গোল করে ফেলা ডিফেন্ডার থাকে তারা তো খেলার উপর প্রাধান্য রাখবেই। তার উপর যদি জাতীয় দলে খেলা অমরিন্দার সিংহের মতন গোলকিপার, রাওলিন বর্জেসের মতন মিডফিল্ডার, বিপিন, রেনিয়ের, মান্দার, বিক্রমপ্রতাপ, রানাওয়াড়ে বা ইস্টবেঙ্গল থেকে যাওয়া মেহতাব মতন তরুণ প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ থাকে তবে তো ষোলো কোলায় পূর্ণ। ভারতীয় ফুটবলারদের ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলের এই গুণগত অপ্রাপ্তিটা অনস্বীকার্য এবং এখানেই খেলার ফলাফল বিচার হয়ে যাচ্ছে মাঠে নামার আগেই। তবে প্রাপ্তির ভান্ডার কি এই ম্যাচ থেকে একেবারেই খালি? মোটেই না, এই অপ্রতিরোধ্য মুম্বাই দ্বিতীয়ার্ধে সাতজনকে নিজেদের বক্সে রেখে ডিফেন্স করেছে, ম্যাচের রাশ শেষের পঁয়তাল্লিশ মিনিট ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের হাতেই, আর ঠিক এতটাই যাতে খেলার শেষে তাদের বলের উপর দখল ছিল মাত্র চল্লিশ শতাংশ। লক্ষ্যে রাখা শটের সংখ্যা (তিনের বিরুদ্ধে পাঁচ) ছাড়া আর সব বিভাগেই লীগ টেবিলের দশ নম্বর দলটি টেক্কা দিয়েছে টেবিলের অবিসংবাদী নেতাকে।

আজ যদি সুস্থ জেজে, জাইরু, রাজু এবং শেহনাজকে ইস্টবেঙ্গল পেতো খেলার ফল অন্যরকম হতেই পারতো। লড়তে থাকা লাল-হলুদের খাতায় কলমে প্রথম চারে যাবার আশা শেষ হয়ে যায়নি এখনো।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.