ইষ্টবেঙ্গলের সেরা কর্মকর্তা কে? এই প্রশ্নটি যদি করা হয় শতকরা ৯৯ ভাগ লোকের উত্তর হবে জ্যোতিষ চন্দ্র গুহ৷ নিঃসন্দেহে তিনি অন্যতম সেরা কিন্তু আজ আমি যার নাম বলব তিনি জ্যোতিষচন্দ্র গুহ র চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে থাকবেন না। তাঁর নাম নলিনীরঞ্জন সরকার। ১৮৮২ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়ায় ওনার জন্ম। ছোটোবেলা থেকেই মেধাবী নলিনী ১৯০২ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করার পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। একইসাথে তিনি কলকাতার সিটি কলেজেও ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক কারণে পড়াশুনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া ওনার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বদেশী আন্দোলনের তাগিদে কলকাতায় চলে আসেন কিন্তু তখন তিনি কপর্দকহীন। ১৯০৫ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগদান করেন। তখন তিনি কলকাতার একটি মেসবাড়িতে ওনার স্বদেশী বন্ধুদের সাথে থাকতেন। তিনি তখন রাত জেগে লিফলেট বানাতেন ও বন্ধুদের সাথে বিলি করতেন। এমনও বহুদিন হয়েছে যখন তাঁর দুবেলা খাবার জোটেনি। এহেন সময়ে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সুনজরে আসেন। দেশবন্ধু তখন তাঁকে হিন্দুস্থান কো অপারেটিভ ইনশিওরেন্সে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। বেঙ্গল কোঅপারেটিভ ইনশিওরেন্স সে সময়ের ভারতীয় ইনশিওরেন্স কোম্পানি গুলির মধ্যে বেশ নামকরা ছিলো, যার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
নলিনীরঞ্জন সরকার মহাশয় সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও স্নেহের পাত্র ছিলেন । ১৯২০ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর পদানুসরণ করে অসহযোগ আন্দোলনে সামীল হন। পরবর্তীকালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও মোতিলাল নেহেরু যখন স্বরাজ্য পার্টি তৈরি করেন তখন তিনি সেখানে যোগদান করেন, পরবর্তীকালে তিনি সেই দলের অগ্রণী ভূমিকা নেন। ১৯৩২ সালে তিনি কলিকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ও পরবর্তীকালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়রের পদ অলঙ্কৃত করেন।
১৯৩৫ সনে নলিনীরঞ্জন সরকার মশায় শ্রদ্ধেয় ফজলুল হকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কৃষক প্রজা পার্টি তৈরি করেন ও ১৯৩৭ সালে যখন ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন নলিনীরঞ্জন সরকার মহাশয় সেই মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তী কালে মন্ত্রীসভার নীতি ও দূরদর্শিতার অভাবে তিনি পদত্যাগ করেন। তারপর আসে সেই সময় যে প্রসঙ্গে আজকের এই প্রবন্ধে নলিনীবাবুর নামের উল্লেখ । ১৯৩৭ সালে ঘটে সেই ঘটনা যার জন্য নলিনীবাবুর প্রসঙ্গ এই প্রবন্ধে উল্লেখ। ইষ্টবেঙ্গলের চতুর্থ সভাপতি হিসেবে তার নির্বাচন । বলতে বাধা নেই মূলতঃ তাঁর সময় থেকেই ইষ্টবেঙ্গল আর্থিক দিক দিয়ে প্রথম স্বচ্ছল হওয়া শুরু করে ও পড়শী ক্লাব মোহনবাগানের সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই শুরু করে।
১৯৪৮ সালে নলিনীবাবু ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন৷ এবং ১৯৪৯ সালে অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ও পালন করেন কয়েক মাসের জন্য।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিলো । বর্তমান প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলি যে সংস্থার অনুমোদন পাবার জন্য হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে তিনি সেই অল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশনের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন ১৯৪৬ সালে ও ১৯৫২ সাল অবধি সেই পদ অলংকৃত করেন। এবং এ আই সি টি ই র কর্মকান্ডের আধুনিকীকরণ করেন। এ যাবৎ সময়সীমায় পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর উৎসাহে ও ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির অনুসরণে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কারিগরি শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য তিনি ভারতের চারটি শহরে চারটি কারিগরি শুরু করেন, তার নাম ছিলো ” ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি “। এর পাশাপাশি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির কমিটিতেও তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই হয়তো জানেন না, জানলে গর্ববোধ করবেন যে আমাদের ইষ্টবেঙ্গলের চতুর্থ সভাপতি একাধারে প্রসিদ্ধ অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী, কলিকাতার মেয়র, আমাদের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও প্রাক্তন (অস্থায়ী)মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নলিনীরঞ্জন সরকার , অনেকের মতে যিনি আমাদের ক্লাবে প্রথম আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে আসেন ও প্রতিবেশী ধনী ক্লাব মোহনবাগানের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করতে শেখান৷
2 Comments
Naliniranjan Sarkar-er Details information janlam, Khub valo laglo.
Darun information