নর্থ ম্যাসাডোনিয়া ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া (Yugoslavia) ভেঙে তৈরী হওয়া একটি দেশ। একুশ লক্ষ জনসংখ্যা, যা কিনা দার্জিলিংয়ের চেয়ে সামান্য বেশী। তবে তাঁদের প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের আবির্ভাবে তেমন দাগ কাটতে পারলো না। এই বছরের ৩১ মার্চ-এ জার্মানিকে (Germany) তাদের দেশের মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া দেশ, আজ ডাচদের কাছে হারলো তিন গোলে। তাদের কিংবদন্তী ফুটবলার গোরান পান্ডেভ (Goran Pandev) কুড়ি বছর দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে ১২২ টি ম্যাচ খেলার পরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেন। সতীর্থদের থেকে পেলেন গার্ড অফ অনার। তবে তাঁদের শেষ ম্যাচের স্কোরলাইন যতই একতরফা দেখাক, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশটিও সুযোগ তৈরী করেছিল প্রচুর।
ম্যাচের দখল ছিল নেদারল্যান্ডসের (Netherlands national football team) পায়েই। বার্সেলোনায় (FC Barcelona) সদ্য যোগ দেওয়া মেমফিস ডিপায় (Memphis Depay) পেলেন প্রথম গোল ম্যাচের ২৪ মিনিটে (১-০)।
তবে তার আগে পান্ডেভের পাস থেকে ইভান ত্ৰিকোভস্কির (Ivan Trichkovski) করা একটি গোল বাতিল হয়ে যায় চুলচেরা অফসাইডের জন্য। তার পরেই একুশ মিনিটে আলেক্সান্ডার ত্রাইকোভস্কির (Aleksandar Trajkovski) শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ডেঞ্জেল ডামফ্রিসকে (Denzel Dumfries) সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খেয়েছে ম্যাসিডোনিয়ান রক্ষণভাগ। পি এস ভি আইন্দহোভেনের (PSV Eindhoven) এই রাইট ব্যাক অনেক দলের ঘুম কাড়বেন এই ইউরোতে (UEFA EURO 2020)। তাঁর ক্লাব সতীর্থ ডনিয়েল মালেন (Donyell Malen) দুরন্ত যুগলবন্দীর প্রদর্শন করেন ডিপায়ের সাথে। প্রথম গোলটির অ্যাসিস্ট সরাসরি তাঁর পা থেকেই আসে, এবং তৃতীয় গোলের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। যদিও প্রথম গোলের ক্ষেত্রে বিতর্ক থেকে যাচ্ছে। ডাচ অধিনায়ক জর্জিনিও ওয়াইনালডাম (Georginio Wijnaldum) পান্ডেভের উপর ফাউল করেছেন মনে হলো। আর সেই থেকেই তৈরী হয় গোলের মুভ।
প্রথমার্ধ ১-০ গোলে শেষ করার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল পেয়ে গেছিলেন ম্যাথিস দি লিগত (Matthijs de Ligt)। তাঁর হেড গোললাইন থেকে ফেরান ত্রাইকোভস্কি। ঠিক তার পরেই দুই স্টপারের মাঝখান দিয়ে ডিপায়ের পাস থেকে ফাঁকায় গোল করে যান ওয়াইনালডাম (২-০)। কিছুই করার ছিল না স্টোল দিমিত্রিয়েভস্কির (Stole Dimitrievski)।
৫৮ মিনিটে ডিপায়ের সাইডপুশ যখন ধরাশায়ী হয়ে বাঁচান ম্যাসিডোনিয়ান গোলরক্ষক, বল চলে যায় আবার ছয়গজ বক্সের ঠিক মাথার মাঝখানে দাঁড়ানো লিভারপুলের (Liverpool F.C.) অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের কাছে। ওয়াইনালডাম তাঁর দ্বিতীয় এবং হল্যান্ডের তৃতীয় গোলটি করেন (৩-০)।
এরপরেও দুই দলই সুযোগ পায়। ওয়াইনালডাম যেমন হ্যাটট্রিক করতে পারতেন, যেমন ওয়েঘর্স্টের (Wout Weghorst) দুরন্ত শট ক্রস-বার ছুঁয়ে বাইরে না গেলে তাঁর প্রথম টাচেই গোল পেতে পারতেন, তেমনি ম্যাসিডোনিয়ার (North Macedonia national football team) দ্বিতীয়বার গোল বাতিল হয় অফসাইডের জন্য।
তিন ম্যাচে নয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে শেষ করলো দীর্ঘ সতেরো বছর সেমিফাইনাল না খেলা এবং গত ইউরোতে পৌঁছতেই না পারা শক্তিশালী ‘অরেঞ্জ’ (Oranje)। ২০০৪-এর সেই ইউরোতেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তখনকার অধিনায়ক এবং বর্তমান ডাচ কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোয়ের (Frank de Boer)। খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর ইউরো জেতা হয়নি, কোচ হিসেবে নক-আউট পর্যন্ত পৌঁছতে তিনে তিন।