ষোলো মাস বাদে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে শক্তিশালী ওমানের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করলো ভারত

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

ফিফা ক্রমপর্যায়ে বিরাশি নম্বরে থাকা ওমানের বিরুদ্ধে ১০৪ নম্বরের ভারতের প্রথম হাফের লড়াইটা হলো এক তরফা। ‘গাল্ফ সাম্বা’ নাচ চলছিল ‘ব্লু টাইগার’ দের অর্ধে। ষোলো মাস পরে একই দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা ভারতীয় দলে পরিবর্তন হয়েছে প্রচুর। সেই ম্যাচে ১-০ ফলে পরাজিত হয়েছিল ভারত। আজকের সতেরো জন খেলোয়াড় আর ১৯ নভেম্বর, ২০১৯-এর চোদ্দ জনের মধ্যে শুধু আশিক কুরুনিয়ান আর মানবীর সিং ছাড়া কেউ ছিলেন না। আকাশ মিশ্র, চিংলেনসানা সিংহ, বিপিন সিংহ, সুরেশ সিংহ ওয়াংজাম এবং জীকসন সিংহের মতন তরুণ তুর্কিদের সাথে অভিষেক ঘটলো ত্রিশ বর্ষীয় আশুতোষ মেহতার।

খেলার কথায় আসা যাক। সিঙ্গল স্ট্রাইকার মানবীরকে রেখে ইগর স্টিম্যাচ আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় বলতে শুধু বিপিন সিংহকে রেখেছিলেন প্রথোম এগারোতে। এপাশ ওপাশ থেকে আশিক, সুরেশ, আকাশ বা রাওলিন বর্জেসরা বল ঠেলবার চেষ্টা করলেও সফল হননি। মূলত ডিফেন্স জমাট রাখার কৌশল ছিলো চার ডিফেন্ডারের সামনে তিন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার রেখে। সন্দেশ ঝিঙ্গানের নেতৃত্বে রক্ষণ ভালো খেললেও আশুতোষ বেশ নড়বড়ে ছিলেন বরাবর। তার পাস খেলার দুর্বলতার ফলে অনেক আক্রমণ দানা বাঁধেনি। তার সাথে জুটি বাঁধতে ব্যর্থ ভারতের হয়ে অনূর্ধ -১৭ বিশ্বকাপে একমাত্র গোল করে ইতিহাস সৃষ্টি করা জিকসন সিংহ। এই তরুণ মনিপুরী তারকা আজ সম্পূর্ণ দিকভ্রষ্ট ছিলেন। তিনজন সি.ডি.এম. একসাথে খেলায় তারা হয়তো নিজেদের জায়গা সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছিলেন। আর তাই ডান প্রান্ত বরাবর বিপিন সিংহ বারবার একলা হয়ে পড়ছিলেন। আশিক নিজের শরীর আর গতি ব্যবহার করে প্রচুর ভার নিয়েছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর উত্তর প্রদেশ থেকে উঠে আসা নবাগত আকাশ মিশ্র সাধ্যমতো সঙ্গত দিয়ে গেছেন তাকে।

প্রথমার্ধে মিডফিল্ডে সুরেশ তুলনায় ভালো খেলেন। রাওলিন একটু সময় আর জায়গা নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। বল পাবার পর, একটা টাচ, আর হালকা মাথা তুলে সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত পাস; এটাই ওনার সাফল্যের সরল ফর্মুলা। কিন্তু খুব দ্রুত জায়গা ছোট করে দেওয়া ওমানী খেলোয়াড়রা রাওলিংকে কখনোই সচ্ছন্দে থাকতে দেয়নি। রাওলিনের ভুলে ওমান পেনাল্টি আদায় করলেও তাদের অধিনায়ক আব্দুল আজিজ আল ঘেইলানির দুর্বল শট আমরিন্দর সিংহ সহজেই বাঁচান। আমরিন্দার আরও বার দুয়েক দুরন্তভাবে নিজের দুর্গ রক্ষা করেন। যদিও তার বল বিন্যাস ছিল হতাশাজনক। মুম্বাই সিটি এফ সির হয়ে আহমেদ জাহু বা মুর্তাদা ফলদের মাধ্যমে নিজেদের বক্স থেকে খেলা তৈরী করলেও, এই ম্যাচে উঁচু করে বল তুলছিলেন ফরওয়ার্ড লাইন লক্ষ্য করে। যদিও প্রায় সবই ছিল লক্ষহীন। যদিও ভারত গোলটি খায় একেবারে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে। ছয় গজ বক্সের ভিতর বিপজ্জনক আঁড়াআঁড়ি ভাবে পাঠানো নিচু একটা বল গোলকিপারের হাত ছুয়েঁ ডিফেন্স করতে শরীর ছুঁড়ে দেওয়া চিংলেনসানারগায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়।

মানবীরের প্রথম হাফটায় ‘অফ-দ্য -বল’ মুভমেন্ট ছিল দৃষ্টিকটু ভাবে স্থবির। এটিকে মোহনবাগানে রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে পাশে পেতেন। কিন্তু এখানে একাকী দ্বীপের মতন মাঝ সমুদ্রে দাঁড়িয়ে। এস সি ইস্টবেঙ্গলে হারমানপ্রীত সিংহ গোল না করতে পারেন কিন্তু ওনার বিপক্ষ রক্ষণে বল তাড়া করে যাওয়ায় তারা বল খুব সহজে মাঠের মাঝখান দিয়ে আক্রমণ ভাগের উদ্দেশ্যে চালান করতে পারতেন না। কিন্তু আজ প্রথমার্ধে মানভীরের উদ্যোগের অভাবে তিন রক্ষণাত্মক পর্দা থাকা সত্বেও লাল জার্সিধারীরা দখিনা হওয়ার মতন পর্দা ঠেলে রক্ষণের অন্দরে হানা দিছিলো।

সম্পূর্ণ অন্য খেলা দেখা গেলো দ্বিতীয়ার্ধে। জীকসন আর রাওলিনের জায়গায় আসেন লালেংমাওইয়া আপুইয়া আর রেনিয়ের ফার্নান্দেজ। নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিশ বর্ষীয় আপুইয়া, আই এস এলের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম অধিনায়ক। তার উপর জেরার্ড নুস বা খালিদ জামিলের ভরসা এতো প্রগাঢ় কেন তার একটা দুর্ধর্ষ প্রমান পাওয়া গেলো আজ। বলের উপর এতো সাবলীল সাচ্ছন্দ্য, খেলার উপর এতো নিয়ন্ত্রন বহু বছর কোনো মাঝ মাঠের খেলোয়াড় দেখান নি। মিজো এই রত্নকে এখন আগামী বেশ কিছু বছর ধারাবাহিকতা আর চারিত্রিক দৃঢ়তার পরীক্ষা দিতে হবে। তুলনায় অভিজ্ঞ রেনিয়ার আসায় বিপিন, আশিক, মানভীরের খেলায় জোয়ার আসে। ওমানের রক্ষণ তখন দৃশ্যতই অপ্রস্তুত। শেষের দিকে ঈশান পন্ডিতা, মহম্মদ ইয়াসির এবং লালিনজুয়ালা ছাংতেকে নামিয়ে আরো চাপ বাড়াবার চেষ্টা করেন ভারতীয় দলের ক্রোয়েশীয় প্রশিক্ষক। যদিও আশুতোষকে তুলে প্রীতম কোটালকে না নামানোয় একটা প্রশ্ন উঠে আসছে, প্রীতম কি ফিট?

এই ম্যাচে স্টিম্যাচ সর্বমোট ৬টি পরিবর্তন করেন। পরিবর্তদের মধ্যে থেকেও অভিষেক ঘটে ইয়াসির এবং মাশুর শেরীফের। এই ম্যাচ থেকে ফিফা রাঙ্কিংয়ে উন্নতির একটা সুযোগ থাকলেও, ম্যাচটি স্বীকৃত কিনা সেটা পরিষ্কার নয়। আগামী সোমবার, ২৯শে মার্চ, চুয়াত্তর নম্বরে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম এগারোর একটা হদিশ পাওয়া গেলেও, ভারতের ভবিষ্যতের তারকাদের সামনে কিন্তু আরও কঠিন প্রতিপক্ষ।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.