কলকাতা ময়দানের সমর্থকদের কাছে এ যেন এক আজব উলটপুরাণ!
কখনও টিমের শোচনীয় পারফরম্যান্সের জেরে, কখনও স্পনসরের দাবীতে, কখনও কর্পোরেট ধাঁচে ম্যানেজমেন্টের দাবীতে, আবার কখনও দুই ফুটবল ক্লাবের মার্জারের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা গেছে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থকদের। কখনও পথে নেমে, কখনও ভার্চুয়ালি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হয় সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে জুটেছে পুলিশের লাঠি, অথবা তাঁদের দাবিদাওয়াগুলিকে স্রেফ উপেক্ষাই করা হয়েছে। এমনকি সমর্থকদের কপালে জুটেছে “ভিখারী” তকমাও।
এবার তারই এক বিপরীত অভিজ্ঞতা দেখা গেল ইংলিশ ফুটবলে (Premier League)। সমর্থকদের মতামত, আবেগ, ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ৪ঠা জুন, সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান কো-চেয়ারম্যান জোয়েল গ্লেজার (Joel Glazer)। জোয়েল বলেছেন: “আমি ফ্যানদের ফোরামের সাথে বসে তাঁদের মতামত শুনতে এবং গঠনমূলক আলোচনার অংশ হওয়ার জন্য হতে চলা সভার প্রত্যাশায় রয়েছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এটি ক্লাব এবং তার অনুরাগীদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা এবং সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।”
“আমি ফ্যানদের ফোরামের সাথে বসে তাঁদের মতামত শুনতে এবং গঠনমূলক আলোচনার অংশ হওয়ার জন্য হতে চলা সভার প্রত্যাশায় রয়েছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এটি ক্লাব এবং তার অনুরাগীদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা এবং সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।”
১৪৩ বছর পুরোনো, পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এবং ধনী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে (Manchester United F.C.) বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে সমর্থকদের বিক্ষোভ। নেপথ্যে ক্লাবের বর্তমান মালিক “গ্লেজার পরিবার” (Glazer Family)। ২০০৫ সালে রেড ফুটবল লিমিটেড (Red Football Ltd.) নামক বিনিয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ৯৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানাধীন হন ম্যালকম গ্লেজার (Malcolm Glazer)। ২০১৪ সালে তিনি প্রয়াত হওয়ার পর এই শেয়ার তাঁর ছয় সন্তানদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
তবে, বর্তমানে ক্ষোভে ফুঁসছেন ঐতিহ্যশালী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকরা। নেপথ্যে মূলত তিনটি কারণ:
- ২০০৫-এ মালিকানা নেওয়ার সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঘাড়ে ঋণের বোঝা না থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ক্লাবের দেনার পরিমাণ এখন ৪৫৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
- গত ১৬ বছরে এই দেনার দায়ে প্রায় এক বিলিয়ন পাউন্ড সুদ গুনতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে।
- এরসাথে যুক্ত হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে ঘোষিত হওয়া বিতর্কিত ইউরোপিয়ান সুপার লীগে যোগদান, যা একেবারেই ভালোভাবে নেননি সমর্থকরা।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের (Old Trafford) বাইরে প্রায়ই সমর্থকদের জমায়েত হচ্ছে। বিক্ষোভের আঁচ এতই তীব্র হয়েছে যে, গত ২রা মে লিভারপুলের (Liverpool F.C.) বিরুদ্ধে ম্যাচ অবদি বাতিল করতে হয়েছে।
কর্তা এবং সমর্থকদের আলোচনায় ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের সমস্যার কতটা সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়, সেইদিকেই এখন তাকিয়ে সারা বিশ্বের অগণিত ফুটবলপ্রেমী।