ইস্টবেঙ্গলে চুক্তিবিতর্ক অব্যাহত। ২০২০ সালের ২রা সেপ্টেম্বর নবান্ন থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দুপক্ষের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর যে নতুন দিনের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা, গত নয় মাসে তা ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে। সৌজন্যে ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট এবং ক্লাবের সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে চুক্তি নিয়ে চলা দীর্ঘ অচলাবস্থা। এতদিন নতুন মরশুমের দলগঠনের কাজ থমকে তো ছিলই, এখন ২০২১-২২ মরশুমের আইএসএল খেলা নিয়েও সমর্থকদের মধ্যে আশঙ্কা দানা বাঁধছে।
নবান্নে স্বাক্ষরিত টার্মশিটের সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের পাঠানো বর্তমান চুক্তিপত্রের বিস্তর ফারাক বলে দাবি সাবেক কর্মকর্তাদের। পাল্টা শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement) কর্তৃপক্ষ একাধিক চিঠিতে ক্লাবের কাছে জানতে চেয়েছেন, চুক্তিপত্রের ঠিক কোন কোন জায়গায় রয়েছে অমিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চিঠিপত্র চালাচালি হলেও এখনও মেলেনি কোনও সমাধানসূত্র। ফলে ধীরে ধীরে ধৈর্য হারাচ্ছেন সবাই।
এবার এই বিতর্ক পৌঁছে গেল আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছেও। যা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়া হাউজ স্কাই স্পোর্টসের (Sky Sports) জনপ্রিয় নিউজ এডিটর অ্যালান মায়ার্স (Alan Myers) ট্যুইট করে জানতে চাইলেন – “কি চলছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে? সমর্থকরাই বা কি অনুভব করছেন?”
অ্যালানের ট্যুইট দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি সপ্তম আইএসএলে (Indian Super League) এসসি ইস্টবেঙ্গলকে (SC East Bengal) কোচিং করানো রবি ফাউলার (Robbie Fowler)। জবাবে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন লিভারপুলের (Liverpool F.C.) এই লেজেন্ড। একটি বিখ্যাত ইংরেজি প্রবাদকে উদ্ধৃত করে তাঁর মতামত জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগের তীর সাবেক কর্মকর্তাদের দিকে। ফাউলার ট্যুইটে লিখছেন “You heard of a saying ‘you can’t have your cake and eat it ‘ Al…. old owners haven’t”, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, “আপনি এই প্রবাদটা শুনেছেন যে, গাছেরও খাবো, আবার তলারও কুড়োবো – দুটো একসাথে হয় না। সাবেক কর্তারা শোনেননি”।
“আপনি এই প্রবাদটা শুনেছেন যে, গাছেরও খাবো, আবার তলারও কুড়োবো – দুটো একসাথে হয় না। সাবেক কর্তারা শোনেননি” – রবি ফাউলার
যা শুনে মর্মাহতই হয়েছেন অ্যালান মায়ার্স। প্রত্যুত্তরে লিখেছেন “এত বড় এবং বিখ্যাত ক্লাব, ডিরেক্টরদের দ্রুত সমাধান করা উচিত। জয় ইস্টবেঙ্গল”
স্কাই স্পোর্টসের মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিউজ এডিটর যখন তাঁর ট্যুইটে “জয় ইস্টবেঙ্গল” (#JoyEastBengal) লেখেন, তখন গর্বে বুক ফুলে ওঠা উচিত আপামর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। কিন্তু একইসাথে যখন দেখা যায় যে, ফুটবল নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ইস্টবেঙ্গলের চর্চা হচ্ছে বিতর্ক নিয়ে, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় সাধারণ সমর্থকদের, যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে ক্লাবকে সমর্থন করেন।
সাবেক কর্মকর্তারা যত তাড়াতাড়ি চুক্তিপত্রের জটিলতা কাটিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবেন, ততই ভালো সবার জন্য। নইলে দেশে-বিদেশে আরও লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে আপামর লাল-হলুদ জনতাকে।