রায় পরিবার

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

অনেক বিতর্ক ও দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও ভারতের স্বাধীনতার এক নম্বর পরিবার যদি গান্ধী পরিবারকে ধরা হয় তবে  ইষ্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা ও এগিয়ে চলার পথে যে পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবদান সেটি হলো ভাগ্যকূলের রায়বাড়ি,  তাই নিয়ে কোনো গবেষক ও ঐতিহাসিকের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই ।  “ওপার বাংলার গরিব লোক ” এই সাবেক ও বস্তাপচা ধ্যানধারণাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলো এই পরিবারটি। 

আঠারোশো শতাব্দীতে ভাগ্যকুলের রায়পরিবার নুনের ব্যবসা শুরু করেন ও খুব দ্রুত তা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।  সাধারণত নুনের ব্যাবসায় ব্রিটিশ ও ফরাসীদের নামডাক ছিলো।  রায় পরিবার তাদের আধিপত্যে থাবা বসায় এবং ভারতীয় নুন ( বিশেষত সৈন্ধব লবণ) ব্যাবসায়ীদের একচ্ছত্র রাজত্ব বা মনোপলি স্থাপনা করেন। শোনা যায় ব্যবসায়ী পরিবার হলেও বিদেশি দের তুলনায় ভারতীয় দের নুনের দামে বিশেষ ছাড় দিতেন। 

“রায় পরিবার” শব্দটি কি চেনা চেনা লাগছে?  যদি লাগে ঠিকই লাগছে কারণ ” রায়” বলতে এককথায় আমরা যাঁকে বুঝি সেই সত্যজিৎ রায় ও এই পরিবারের ই বংশধর ছিলেন।  তাঁর জ্যাঠদাদু অর্থাৎ সারদারঞ্জন রায় ছিলেন ইষ্টবেঙ্গলের প্রথম সভাপতি।  সারদারঞ্জন রায়ের ছোটো ভাই কামদারঞ্জন রায় আমাদের কাছে অন্য এক নামে বিশেষ পরিচিত। তাঁর অন্য নাম ছিলো   উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 

রায় পরিবার নুনের ব্যাবসায়ে চূড়ান্ত সফল হবার পর অন্যান্য ব্যাবসায়ে প্রসার বিস্তার করেন। অতঃপর তাঁরা জল পরিশোধন ও “কারগো” জাহাজের ব্যবসায় নামেন আর অত্যন্ত পরিশ্রম ও দূরদর্শিতাকে কে সম্বল করে তাতেও সাফল্য অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তাঁরা অবিভক্ত বাংলার প্রথম বৃহত্তম জুট মিল ” প্রেমচাঁদ জুট মিল” ও প্রথম বাঙালি কো অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ” ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাঙ্ক ” এর প্রতিষ্ঠা করেন৷  তৎকালীন বাংলার অর্থনীতির উন্নয়নের পিছনে এই “রায়বাড়ি”র  বিশাল অবদান৷ 

এদেশি বা তথাকথিত “ঘটি” ব্যাবসায়ী পরিবারের সদস্য রা পড়াশোনা অপেক্ষা ব্যবসায়েই বেশি মনোনিবেশ করতো,  কিন্তু “ভাগ্যকূলের বাঙাল রায়বাড়ি” সেই ধ্যানধারণাকে জলাঞ্জলি দেন।  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মশায় যখন তৎকালীন লুপ্তপ্রায় মেট্রোপলিটন কলেজ আবার চালু করার কথা ভাবেন,  ভাগ্যকূলের রায় পরিবার ভাগ্যের চাকা নিয়ে বিদ্যাসাগর মশায়কে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান দেন এবং কলেজ টি চালু করেন।  পরবর্তীকালে সারদারঞ্জন সে কলেজের প্রিন্সিপাল পদ অলংকৃত করেন বহুদিন। 

কিন্তু যখনই ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের নাম প্রসঙ্গে আসবে ভাই তড়িৎ এর কথা না বললেই নয়।   তড়িৎ ভূষণ রায় ছিলেন বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার,  বড়দা সারদার সাথে ইষ্টবেঙ্গলের পরিকাঠামো তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা নেন।  ইস্পাতকঠিন ব্যক্তিত্ব ও চুড়ান্ত দূরদর্শী এই মানুষ টি একের পর এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবকে তদানিন্তন ব্রিটিশ ক্লাব গুলি ও মোহনবাগান,  এরিয়ান্সের মতো ইংরেজ দের সুরে সুর মিলানো ক্লাবগুলির সাথে তালে তালে মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে ।  ব্রিটিশদের চালু করা “এক লিগে মাত্র দুটি ভারতীয় ক্লাব থাকবে ” এই আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ও অতঃপর এই আইন বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল তড়িৎ এর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য ই।  সে ঘটনা বিস্তারিত পরে বলব। 

সব মিলিয়ে আজ যে ইষ্টবেঙ্গল ক্লাব শ্রী সিমেন্টের তত্ত্বাবধানে  বিশ্বের সেরা সেরা কোচ ও খেলোয়াড়দের সমন্বয় ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশ নিতে সক্ষম হয়ে তার ভিত স্থাপন হয়েছিল আজ থেকে একশো বছর আগে রায় পরিবারের জন্য৷  প্রথম সচিব সারদারঞ্জন রায়,  প্রথম যুগ্মসচিব তড়িৎ ভূষণ রায়আও প্রথম ফুটবল সচিব বনোয়ারি রায় এই পরিবারের ই সদস্য ।  এদের একরকম জ্ঞাতি ভাই পঙ্কজ ও অম্বর ক্রিকেটেও বাংলার নাম উজ্জ্বল করে।  তাছাড়া সারদারঞ্জনের সুনাম কে আরো বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাই কামদারঞ্জন যাঁকে আমরা উপেন্দ্রকিশোর নামে চিনি,  ভাইপো সুকুমারের কথা কে না জানে৷ আবোল তাবোল বা ” ননসেন্স রাইম ” বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য।  সুকুমার রায়ের কম বয়সে প্রয়াণ না হলে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে সে সময় রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা আরেকটি নোবেল পেতে পারত।  অবশ্য সেই অভাব পূর্ণ করেন সুকুমারের ছেলে সত্য ।  সত্যজিৎ রায় অস্কার জিতে সমগ্র বাঙালির নাম যে সোনায় মুড়ে দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।

অতএব বলাই যায় ভাগ্যকুলের রায় পরিবার বাঙালের গর্ব।  তারা শিক্ষা,  খেলাধুলা, ব্যাবসা   সব বিষয়েই সে সময় ইংরেজ দের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.