১০ বনাম ১১ – এই মরশুমের আইএসএলের সবচেয়ে নিচের দুটো টিমের লীগ টেবিলে ভেসে থাকার ম্যাচ আজ। এই ম্যাচেও পয়েন্ট খোয়ালে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, আবার তিন পয়েন্ট ঘরে তুলতে পারলে লীগ টেবিলে সাত নম্বরে উঠে আসার হাতছানি। ফলে তিলক ময়দানে আজ সন্ধ্যায় এক উপভোগ্য ম্যাচ আশা করতেই পারেন ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে সফল দুই রাজ্যের ফুটবলপ্রেমীরা।
গত কয়েক বছরে লাল-হলুদ সমর্থকরা ইনভেস্টর-কর্তা কাজিয়া দেখে দেখে ক্লান্ত। ফি বছরই শেষ মুহূর্তে জোড়াতালি দিয়ে বানানো টিমের কাছ থেকে চটজলদি সাফল্যের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। ফলত প্রথম ৩ ম্যাচে ১০ গোল হজম করা দলটা চতুর্থ ম্যাচে চেন্নাইনের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সমর্থকদের একটা বড় অংশ। অবশ্য গোলহজমে পিছিয়ে নেই কলকাতার আরেক দল এটিকে মোহনবাগানও। ৪ ম্যাচে তারাও গোল খেয়েছে ৯ টি।
তবুও গত কয়েক বছরে, বিশেষত কোয়েস-আলেহান্দ্রো জমানায় চোট আঘাত নিয়ে বিশাল কিছু কাবু হয়নি লাল-হলুদ শিবির। সৌজন্যে ছিলেন কার্লোস নোদার। কিন্তু এই মরশুমে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো চার ম্যাচ যেতে না যেতেই চোটের যা তালিকা, তাতে আর কিছুদিন পর একটা চোট একাদশ না তৈরী হয়ে যায়। আপাতত তালিকায় যে নামগুলো আছে -অরিন্দম ভট্টাচার্য্য, ড্যারেন সিডোয়েল, মহঃ রফিক, অঙ্কিত মুখার্জী, বলবন্ত সিং, জ্যাকিচাঁদ সিং প্রমুখ। চার ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরেও ম্যাচ ফিট নন আমিররা। তবে স্বস্তির খবর, ফিট হয়ে গিয়ে গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম দলে ফেরার সম্ভাবনা সৌরভ দাসের।
সিডোয়েল না থাকায় প্রথম একাদশে ঢুকতে পারেন আন্তেনিও পেরোসেভিচ। জামশেদপুর ম্যাচে ভালো খেললেও বাকি ম্যাচগুলোতে তেমন দাঁত ফোটাতে পারেননি তিনি। আজ শুরু করতে পারেন আদিল খান, হাওকিপরাও।
এসসি ইস্টবেঙ্গলে আপাতত ভরসার নাম দুই বঙ্গসন্তান – হীরা মন্ডল এবং শুভম সেন। ওড়িশা ম্যাচে ৬ গোল হজম করলেও শুভমের গ্লাভসে আরও বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। চেন্নাইন ম্যাচেও খান তিনেক নিশ্চিত গোল বাঁচান শুভম। আউটিং দুর্দান্ত, বিশেষত একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে কয়েকবার নিশ্চিত পতন রোধ করেছেন। অপরদিকে হীরার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও মাঠে জান লড়িয়ে দিচ্ছেন। আপাতত লাল-হলুদ জার্সির মর্যাদা বজায় রাখছেন এই দুই বঙ্গতনয়ই।
বাকিদের নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। হীরার দ্যুতি ছড়ালেও বাকিদের বেলায় শুধুই আঁধার। আপফ্রন্টে ভেদশক্তির অভাব। আমিরের মত শ্লথ বিদেশী থাকায় মাঝমাঠে কিছুতেই দাপট দেখতে পারছে না মানোলো দিয়াজের ছেলেরা।
তার উপর দুটো ম্যাচ হারতেই কোচ মানোলো-র গলায় অজুহাত। খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য গোয়ার আদ্রতাকে দায়ী করলেও তাতে চিঁড়ে ভিজছে না, কারণ প্রতিপক্ষও একই আবহাওয়াতে খেলছে। ফলে একমাসের প্রি-সিজনের পরেও কেন টিমের বেশীরভাগ খেলোয়াড় ম্যাচফিট নয়, তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। টানা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে, ফলে প্রথম একাদশে ফুটবলার অদলবদল করে খেলতে হচ্ছে, এটা যেমন ঠিক, তেমনই চার ম্যাচের পরেও কেন একটা ১৮ জনের মূল স্কোয়াড কেন বানানো গেল না, সেই প্রশ্ন কিছু উঠবেই।
অন্যদিকে প্রথম তিনটে ম্যাচ হেরে ধুঁকছে এফসি গোয়াও। টিমের বিদেশী স্কোয়াডে এবারে আমূল পরিবর্তন হয়েছে।দল ছেড়েছেন আক্রমণভাগের দুই স্তম্ভ ইগর অ্যাঙ্গুলো এবং কোরোমিনাস। ডিফেন্ডার ডোনাচি-ও এই মরশুমে টিমে নেই। দেশীয়দের মধ্যে দল ছেড়েছেন ঈশান পন্ডিতা সেমিনোলেন ডঙ্গেল, অমরজিৎ সিং কিয়াম-রা। ফলে ধারেভারে গতবারের চেয়ে অনেকটাই দুর্বল এফসি গোয়া।
তবে এবারেও খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এডু বেদিয়া, অ্যালবার্তো নগুয়েরা-রা। সাথে রয়েছেন নর্থইস্ট ইউনাইটেড থেকে আসা ডিফেন্ডার ডিলান ফক্স। তবে চোটের জন্য এই ম্যাচেও নামার সম্ভাবনা ক্ষীণ জর্জ ওর্টিজের। সব মিলিয়ে গোয়ার মাটিতে গোয়াকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট ঘরে তোলার এর চেয়ে ভালো সুযোগ কিন্তু পাবে না লাল-হলুদ শিবির।
একটা জয়ই পারে ধুঁকতে থাকা এসসি ইস্টবেঙ্গলের মনোবলকে চাঙ্গা করতে। লীগ টেবিলের প্রথম ৫-এ থাকা টিমগুলোর মধ্যে ৪-টের সাথেই ইস্টবেঙ্গলের খেলা শেষ। টেবিলের তলানিতে থাকা টিমগুলোর থেকে যতটা সম্ভব পয়েন্ট যদি জোগাড় করা যায়, তাহলে এখনও আশায় বুক বাঁধতেই পারেন লাল-হলুদ সমর্থকরা।
আজকেই কি তাহলে ভাগ্যের চাকা ঘুরবে? অপেক্ষায় আপামর ইস্টবেঙ্গল জনতা।