অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেষমুহূর্তে আইএসএলে সুযোগ এসেছিলো। করোনা আবহে দিন পনেরোর মধ্যে মোটামুটি একটা টিমও দাঁড় করানো হয়েছিল। সাথে ছিল লিভারপুলের লেজেন্ড রবি ফাউলারকে কোচ করে আনা। ফলে এক লহমায় বিশ্বের ফুটবল মহলে তথা গ্লোবাল মিডিয়াতে বেশ আলোচ্যের বিষয়ও হয়ে উঠেছিলো এসসি ইস্টবেঙ্গল।
কিন্তু এতকিছুর পরেও সমর্থকদের মন ভরলো কি? ১৯ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র ৩টিতে, পরাজয় ৯টিতে। এই ইস্টবেঙ্গলকে দেখতে সমর্থকরা অভ্যস্ত নন। একশো বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলকে শাসন করা লাল-হলুদ যে আজ টপ লেভেলের লীগে হোঁচট খাচ্ছে, সেটা মেনে নিতে সমর্থকদের যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক, ভারতের ফুটবলের ইতিহাসে এইরকম অবস্থা খুব কম এসেছে যেখানে ইস্টবেঙ্গল নবতম টিমেরে রূপে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে নেমেছে। ফলে আইএসএলের মঞ্চে এসসি ইস্টবেঙ্গলের হতশ্রী পারফরমেন্সের জন্য কোনও অজুহাত যথেষ্ট না হলেও একথাও সত্যি, ঠিকঠাক পরিকল্পনা ছাড়া আইএসএলে ভালো ফলাফলের আশা করা বোধহয় বাস্তবসম্মত নয়।
এইখানেই বোধহয় এসসি ইস্টবেঙ্গলের জন্য এবং অসংখ্য লাল-হলুদ সমর্থকদের জন্য অপেক্ষা করে আছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসএলে অভিষেকের বছরে সাফল্য আসলো না, কিন্তু তারপর? পরের বছর কি করা উচিত? রবি ফাউলার, টনি গ্র্যান্টদের উপর ভরসা রেখে তাঁদের হাতে পরের মরশুমের টিম বানাতে দেওয়া উচিত? নাকি অন্য কোচিং টিম খোঁজা উচিত? কোচ পাল্টালে পরের মরশুমের টিম কে বানাবেন? ইনভেস্টরের প্রতিনিধি বা সাবেক কর্মকর্তদের মতো নন-টেকনিক্যাল মানুষজন?
প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা।
যাই হোক, ভবিষ্যতের চিন্তা না হয় ভবিষ্যতের গর্ভেই থাকুক। ফিরে আসা যাক আজকের ম্যাচে। আদতে নিয়মরক্ষার ম্যাচ। পাঁচ গোল বা তার বেশী ব্যবধানে জিতলে এসসি ইস্টবেঙ্গল নয় নম্বর থেকে উঠে আসবে আট নম্বরে। তিন বা তার বেশি গোলে হারলে নেমে আসবে দশ নম্বরে। এছাড়া আর কোনোকিছুই পাল্টাবে না এই ম্যাচ থেকে। ফলে আট, নয় বা দশ – যেই নম্বরই হোক, আদতে কিছুই এসে যায় না লাল-হলুদ সমর্থকদের। তবে তাঁরা শুধু চান, অন্তত জয় দিয়েই প্রিয় টিম শেষ করুক আইএসএল অভিযান।
কিন্তু এই ম্যাচও কি সহজ হবে এসসি ইস্টবেঙ্গলের জন্য? একনজরে দেখে নেওয়া যাক দুই দলের হালহকিকৎ।
ওড়িশা এফসি:
টানা দশ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি নেই ওড়িশা এফসি। নিকষ অন্ধকারের মধ্যে একটু আশার আলো গোলকিপার অর্শদীপ সিং এবং ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দিয়েগো মরিসিও। অর্শদীপ এই মরশুমে ৬৪টা সেভ দিয়ে গোলকিপারদের তালিকায় এক নম্বরে। অপরদিকে মরিসিও এই টিমের হয়ে খেলেও ১৯ ম্যাচে ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তিন নম্বরে। কিন্তু তারপরেও ওড়িশা এফসি নিয়ে আলাদা করে আর কিছু বলার নেই। এমনকি শেষ ম্যাচেও মুম্বাই এফসির বিরুদ্ধে প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়ে গিয়েও ছয় গোল হজম করতে হয়েছে। ফলে আজ ওড়িশা এফসি ভালো ফল করলে সেটাই অবাক ব্যাপার হবে।
এসসি ইস্টবেঙ্গল:
লাল-হলুদ বিগ্রেড আজ কার্ড সমস্যায় পাবে না ডিফেন্সের দুই স্তম্ভ স্কট নেভিল এবং রাজু গায়কোয়াড়কে। ফলে হয়তো ড্যানি ফক্সের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন রানা ঘরামী। রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরে আসছেন হেড কোচ রবি ফাউলার। সাসপেনশন কাটিয়ে ফিরতে চলেছেন জ্যাক মাঘোমা। চোট সারিয়ে ফিরবেন ব্রাইট এনোবাখারেও। তবে আশা করা যায় ওড়িশা এফসির দুর্বল ডিফেন্সের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছকেই দল নামাবেন রবি ফাউলার-টনি গ্র্যান্টরা। তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে গোটা মরশুম ধরেই ভোগালো স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা। যার ফল, ১৮ ম্যাচ পরে সার্থক গলুইয়ের হাত ধরে প্রথমবার কোনও ভারতীয় গোলদাতা পেয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। জেজে, বলবন্ত, সিকে ভিনিথরা গোটা মরশুম জুড়ে লাল হলুদ সমর্থকদের হতাশা ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেননি।
অতীত ঘেঁটে আর লাভ নেই। এই মরশুমের শেষ ম্যাচে সম্মানজনক ফলাফল ছাড়া আর কোনও অতিরিক্ত মোটিভেশনও নেই। লাল-হলুদ জনতা এখন একটা আশা নিয়েই আজ টিভির সামনে বসবেন, ইস্টবেঙ্গলের জার্সির যে আগুনে মেজাজ, মশালের যে উত্তাপ, শেষবারের জন্য সেই তাপে বিপক্ষকে সেঁকে নেওয়ার। শেষবারের মতো কি জ্বলে উঠবেন না এসসি ইস্টবেঙ্গলের এগারোজন? অপেক্ষায় থাকবেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি সমর্থকরা।
প্রবাদ আছে, শেষ ভালো যার সব ভালো।