FC GoaSC East Bengal
January 29, 2021
1 - 1Full Time |
স্বপ্নের উড়ান শুরুর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকা ফাওলারের ইষ্টবেঙ্গল ঠিকঠাক ডানাই ঝাপটাতে পারলো না। গোয়ার দুই বিদেশী ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতি, সাইড বেঞ্চে হেড কোচের অনুপস্থিতি, চোট সারিয়ে ফেরা নড়বড়ে আদিল খান, ঠিকঠাক গা গরম হওয়ার আগেই পেনাল্টি পাওয়া কোন কিছুই ড্র এর ঘূর্ণিপাক থেকে বার করতে পারলো না ইষ্টবেঙ্গলকে। একের পর এক নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে আর একের পর এক নিশ্চিত গোলের পাস বাড়িয়েও জয়ের সরনীতে সতীর্থদের ফেরাতে পারলেন না দেবজিত মজুমদার ও ব্রাইট এনোবাখারে। উল্টে পিলকিংটনের জীবনের প্রথম পেনাল্টি মিস ও নয় বছরে ফক্সের প্রথম গোলে ভর করে ড্র এর পাঁকে আটকে থাকলো দ্বিতীয়ার্ধের একটা লম্বা সময় দশজনের গোয়াকে পেয়েও। টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে এসে এই ড্র নিশ্চিতভাবে হতাশার চাদরে মুড়ে ফেলতে বাধ্য সমর্থক থেকে খেলোয়াড় সকলকে। সেই সাথে রবার্ট ফাওলারকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠাও ন্যায্য। টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে কিছু সঙ্গত কারনে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় ড্র বা হার নিয়ে সেভাবে সমালোচিত না হলেও জানুয়ারীতে খেলোয়াড় নেওয়া বা অদল-বদলের সুযোগ পেয়েও কেন একজন এমন খেলোয়াড়কে দলের সাথে যুক্ত করা হলো না যে বক্সে দাঁড়িয়ে পা এ বল পেলে বলটা ঠিকঠাক জায়গায় অন্ততঃ ঠেলে দিতে পারে, প্রশ্নটা ওঠার সময় হয়েছে।
প্রথম সাক্ষাতে রেফারীর ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে অধিনায়ক ফক্স লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর দশজনের ইষ্টবেঙ্গল যে পাল্টা লড়াই উপহার দিয়েছিলো তাতে সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন গোয়া ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট ঘরে তোলা সম্ভব। সেই আশাকে উসকে দিয়েছিলো গোয়ার নিয়মিত দুই ডিফেন্ডারের না থাকা, হেড কোচের সাসপেনশন সহ স্ট্রাইকার এঙ্গুলোর সাথে কোচের ঝামেলার গুঞ্জন। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার এক মিনিট পরেই নারায়ন দাস কে বক্সের মধ্যে ফেলে দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে গোয়ার দেশীয় ডিফেন্স। পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনার বদলে পিলকিংটন কল্পনাতীতভাবে নিজের পেশাদার জীবনের প্রথম পেনাল্টি মিসের রেকর্ড করে গোয়াকে বিপদমুক্ত করেন। চাপমুক্ত হয়ে গোয়া ম্যাচে ফিরতে কোন রকম ভুল করেনি।
মাঝমাঠে দুই তরফেই বল দখলের প্রবল প্রচেষ্টার মধ্যে খেলা জমে উঠলেও লক্ষ্যনীয় বিষয় ছিলো ইষ্টবেঙ্গল কীপার দেবজিত মজুমদারকে বেশ কিছু কঠিন বল ধরতে হলেও গোয়া কীপার ধীরজ কে তেমন কোন কঠিন বল ধরতেই হয়নি। অথচ বলের দখল, পাস, বল কেড়ে নেওয়া সব কিছুতেই এই সময়টায় ইষ্টবেঙ্গল গোয়ার চেয়ে এগিয়ে ছিলো। আক্রমনভাগে সঠিক খেলোয়াড়ের অভাব ই এর পেছনে মূল কারন। গোয়ার এঙ্গুলো মাঝমাঠ থেকে আসা বলগুলিকে যখন সঠিক নিশানায় একের পর এক শট নিয়ে দেবজিতের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তখন হরমনপ্রীতের জায়গায় শুরু করা জেজে বলের কাছাকাছিই পৌছাতে পারছিলেন না। এঙ্গুলো এই সময়টায় দেবজিতকে পরাস্ত করতে চলন্ত বলে শট নেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সব দক্ষতা কাজে লাগিয়েও গোলের দরজা খুলতে পারেননি।ম্যাচের উনচল্লিশ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে আসা থ্রু পাস ধরে শেষ পর্যন্ত অনবদ্য দক্ষতায় দেবজিতকে ভূপতিত করে লক্ষ্যপূরণ করতে সফল হন। এই গোলের পেছনে ইষ্টবেঙ্গল ডিফেন্সের ভুল নয় এঙ্গুলোর গোল করার দক্ষতাই ছিলো আসল।
দ্বিতীয়ার্ধে ইষ্টবেঙ্গল মাঝমাঠের দাপট অব্যাহত থাকলেও স্কোরিং জোনে বল পুশ করে জায়গায় রাখার লোকের অভাবের কোন সমাধান ফাওলারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু খেলোয়াড় পরিবর্তন করলেও ফাওলারের কোন স্ট্র্যাটেজিই ঠিকঠাক বোধগম্য হয়নি। এই সময়টায় খেলার পুরো নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন ব্রাইট এনোবাখারে। গোয়ার ডিফেন্সের কাছে ব্রাইটের কোন উত্তর ছিলো না। আদিল-আইবান দের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করতে থাকেন ব্রাইট। বক্সে দাঁড়িয়ে ব্রাইটের বাড়ানো গোলের ঠিকানা লেখা পাসগুলো নষ্ট করার উৎসবে মেতে ওঠেন জেজে, হরমনপ্রীত, পিলকিংটন রা। কিছু ক্ষেত্রে পিলকিংটন ও জেজের নিজেদের পায়ে পা জড়িয়ে সুযোগ নষ্টের বহর দেখে মনে হচ্ছিলো প্রাক্তন খেলোয়াড় হিসাবে কোন ফ্রেন্ডলী ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। বিগত কয়েক ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে হরমনপ্রীত ও দুই সিনিয়রের সাথে পাল্লা দিয়ে গোল নষ্ট করে গেলেন যতক্ষন মাঠে থাকলেন। হরমনপ্রীতের নষ্ট করা সহজতম দুটো সুযোগের একটি ধীরজের তৎপরতায় আটকে গেলেও অপরটির সময় ধীরজ মাটিতে পড়ে ছিলেন তাও গোলের রাস্তা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি এই উদীয়মান ভারতীয় স্ট্রাইকারের পক্ষে।
দ্বিতীয়ার্ধের পঁয়ষট্টি মিনিটের মাথায় সেটপিস থেকে আসা বলে জটলার ভেতর থেকে শট নিয়ে ড্যানিয়েল ফক্স তার ফুটবল জীবনের নয় বছর পর করা গোলে সমতা ফেরান এবং সমতা ফেরার একমিনিটের মাথায় ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে এডু বেডিয়া বেরিয়ে গিয়ে গোয়া দশজন হয়ে গিয়েও ইষ্টবেঙ্গলকে তিন পয়েন্ট দিতে পারলো না স্রেফ হরমনপ্রীতদের গোল নষ্টের প্রতিযোগিতার জন্য। এই প্রতিযোগিতা এতোটাই প্রকট ছিলো যে রেফারীর ইষ্টবেঙ্গলকে ন্যায্য দুটি পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করাটাও আলোচনার বাইরে চলে গেছে। জেজে, হরমনপ্রীত, পিলকিংটন দের মতো স্ট্রাইকার আছে যে দলে সেই দলের আইএসেলের প্রথম চারে জায়গা পাওয়াটা ভারতীয় ফুটবলের জন্য খারাপ বিজ্ঞাপন।
পিলকিংটন দের এই অপদার্থতাই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে ফাওলারের কোচিং দক্ষতা নিয়ে। ফাওলার তার দলের স্ট্রাইকারদের ধারাবাহিক অপদার্থতা সম্পর্কে সম্ভবতঃ জানেন ই না।জেনে থাকলে জানুয়ারী উইন্ডোতে ব্রাইট এনোবাখারের সাথে সাথে একজন গোলের রাস্তা চেনা কাউকে দলে নিতেন, কিন্তু সেটা উনি করেননি। ওনার টিমের মাঝমাঠ ও আক্রমনভাগে যারা খেলছেন তারা যথেষ্ঠ ভালো মানের খেলোয়াড় হলেও কেউই টিপিক্যাল স্ট্রাইকার নন। সবাই খেলা তৈরী করতে দক্ষ। এটা কিভাবে একজন কোচ হয়ে ফাওলার বুঝতে পারেন না সেটা সাধারন বুদ্ধির বাইরে। সেই সাথে ম্যাচ চলাকালীন ওনার খেলোয়াড় পরিবর্তন ও অনেক সময়েই সাধারনের বুদ্ধির বাইরে চলে যায়। এই সাধারনের বুদ্ধির বাইরে চলে যাওয়াটা কোন কোচের অদক্ষতা নয়, অদক্ষতা হিসাবে এগুলি মনে হয় কারন এসবের পরে দল জেতে না, ড্র করে তিন পয়েন্টের জায়গায় এক পয়েন্ট নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসে। যেমন গতকাল পিলকিংটন ম্যাচের শুরুতেই পেনাল্টি মিস করে গোয়াকে চাপমুক্ত করে নিজের ওপর চাপ নিয়ে নেন। ফুটবলে এরকমটা হতেই পারে। কোচ কেন পুরো ম্যাচ পিলকিংটন কে মাঠে রেখে দিলেন যখন বিশেষ করে হাতে এ্যারন আমাদি আছে? আমাদি গোল না করতে পারলেও বড় শরীর ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরী করতে জানে। এই চাপেই ব্রাইট আরো বেশী জায়গা পেতে পারতো। জেজে, হরমনপ্রীত রা যখন পায়ে এসে পড়া বল ও জালে ঠেলতে অপারগ তখন মাঘোমা কেন অত নীচ থেকে অপারেট করে গেল? কেন গোলের স্বাদ পাওয়া স্টেইনম্যানের দলে জায়গাই হলো না? পাওয়া পয়েন্ট মাঠে রেখে এলে এই প্রশ্ন গুলি উঠবে।
প্রসেস মানে কখনোই এক ই ভুল বারবার করে যাওয়া নয়। বরং ভুল শুধরে এগিয়ে যাওয়ার নাম ই প্রসেস। টুর্নামেন্টের তিনভাগের দুভাগ প্রায় শেষ হবার মুখে এসেও যে স্ট্রাইকারেরা গোলের রাস্তা খুঁজে পায়না তাদের এগারো কেন আঠারো জনের দলেও থাকা উচিত নয়। আর রেফারিং নিয়ে অভিযোগ করে পয়েন্ট পাওয়া যায়না। তাই ওটাকে প্রতিকূলতা হিসাবে ধরে নিয়ে নিজেদের তিন পয়েন্টের জন্য তৈরী করা উচিত। আগামী ম্যাচেও বিএফসির প্রথম একাদশের কয়েকজন থাকবে না। সুযোগ আসছে কিন্তু সেই সুযোগ নেওয়ার মতো দক্ষতা ফাওলারের ছেলেদের আদৌ আছে তো? ইষ্টবেঙ্গলের মতো সমর্থকপুষ্ট ক্লাব ভালো খেলেও আট বা দশে শেষ করলেও তার প্রভাব কিন্তু ফাওলারদের ওপর পড়বে। পরের মরশুমে আর গোয়ার ফাঁকা গ্যালারী নয়, কোলকাতার ভরা গ্যালারীর সামনে খেলতে হবে। লিভারপুলের ঘরের ছেলে হিসাবে এসব অঙ্ক ফাওলারের নিশ্চয়ই অজানা নয়।
Related
Results
Club | Goals | Outcome |
---|---|---|
FC Goa | 1 | Draw |
SC East Bengal | 1 | Draw |
Details
Date | Time | League | Season | Full Time |
---|---|---|---|---|
January 29, 2021 | 7:30 pm | Indian Super League | 2020 | 90' |
Ground
Fatorda Stadium |
---|