আইএসএলের দ্বিতীয় লেগের খেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে আর আগামীকাল তিলক ময়দানে দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল, প্রতিপক্ষ কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি (Kerala Blasters FC)। প্রথম পর্বের ম্যাচে আগাগোড়া আধিপত্য রেখেও সংযুক্ত সময়ের শেষ মিনিটে ডিফেন্সের ভুলে ২ পয়েন্ট মাঠেই ফেলে আসতে হয় লাল হলুদ বাহিনীকে, তবে ইস্টবেঙ্গলের মতো কেরালাও সমস্ত সমীকরণ পাল্টে লীগে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কালকের মহারণের আগে কোন দল ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক:
এসসি ইস্টবেঙ্গল
সমালোচকদের উচিত জবাব দিয়ে স্বপ্নের ফর্মে আছে ইস্টবেঙ্গল, কারণ টেবিল টপার্স মুম্বাই সিটি ছাড়া একমাত্র ইস্টবেঙ্গলই টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত। লীগের প্রথম ৫ ম্যাচ থেকে ফাউলার বাহিনীর সংগ্রহ ছিল মোটে ১ পয়েন্ট, আর শেষ ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট পেয়ে এখন স্বস্তির আবহাওয়া লাল হলুদ শিবিরে। গোয়া ম্যাচে রেফারিংয়ের মান সঠিক হলে পুরো ৩ পয়েন্ট নিয়েই ঘরে ফিরতো ফাউলার বাহিনী, আর শেষ মুহূর্তে গোল হজম না করলে কেরালার বিরুদ্ধেও জয় পাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো না। তবে অতীতকে দূরে রেখে সামনের দিকে এগোনোই মূল মন্ত্র ফাউলারের, কারণ লীগ টেবিলের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে তৃতীয়-চতুর্থ পজিশনে থাকা দলগুলোর থেকে মাত্র ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে ইস্টবেঙ্গল, আর বাকি ১০ ম্যাচে এরকম ফর্ম অব্যাহত থাকলে যে সমস্ত সমীকরণ পাল্টে প্রথম ৪-এ থাকাটা খুব একটা কঠিন কাজ হবেনা।
হঠাৎ এরকম ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে কী? আসলে নাইজেরিয়ান ফরওয়ার্ড ব্রাইট এনোবাখারে এসেই দলের “মোরাল” বা মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওড়িশার বিরুদ্ধে ছোট্ট একটা ক্যামিও খেলে নিজের প্রথম গোল পান ২২ বছরের ব্রাইট। পরের ম্যাচে গোয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকে নামানো হয় তাকে, আর ৮০ মিনিটের মাথায় আইএসএলের ইতিহাসের সম্ভবত সেরা গোলটি উপহার দেন তিনি। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে গোল না পেলেও প্রথম গোলের মুভমেন্ট কিন্তু তাঁর পা থেকেই শুরু হয়। এরই সাথে ফিটনেসের সমস্যা কাটিয়ে উঠছে ইস্টবেঙ্গলের ভারতীয় ব্রিগেড, যেটা শুরুর দিকে কোচ এবং সমর্থক উভয়েরই কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল। সর্বোপরি একটা কথা না বললে বড়ই অন্যায় হবে; দেবজিত মজুমদারও হয়তো নিজের সেরা ফর্মে রয়েছেন। ৩৪টি সেভ করে এই মুহূর্তে গোলকিপারদের তালিকায় শীর্ষে ইস্টবেঙ্গলের দুর্গপ্রহরী।
লাল হলুদ ম্যানেজমেন্ট কিন্তু জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতেও বাজিমাত করছে। রাজু, অঙ্কিতদের মতো ভারতীয়দের সই করানোর পর অনিকেত যাদবদের মতো প্রতিশ্রুতিবান খেলোয়াড়দের নিতেও মরিয়া দেখাচ্ছে তাদের। আসলে কিছুটা হলেও অঙ্কিত-রাজুদের হাত ধরেও উন্নতি হয়েছে খেলায়, কারণ লক্ষ্য করবেন, লীগের দুটো জয়ই এই দুই প্রাক্তন লাল হলুদ জার্সিধারীদের সই করানোর পরেই এসেছে। ফাউলার সাহেবের মূল মন্ত্র থাকবে বেঙ্গালুরু ম্যাচে পাওয়া মোমেন্টামকে কেরালার বিরুদ্ধেও অক্ষুন্ন রাখা।
The 2nd leg of Hero ISL-7 is already underway! 🤩
— SC East Bengal (@sc_eastbengal) January 14, 2021
Tomorrow we host @KeralaBlasters at the Tilak Maidan Stadium from 7.30 PM.
আগামীকাল তিলক ময়দানে আমরা ফিরতি লেগে কেরল ব্লাস্টার্স এফসি-র মুখোমুখি হবো, সন্ধ্যে ৭.৩০টা থেকে। #ChhilamAchiThakbo #JoyEastBengal #SCEBKBFC #ISL pic.twitter.com/k1CRqYFvKe
কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি
কোচির কেরালা ব্লাস্টার্স (Kerala Blasters) দলটির গল্পটাও খুব একটা আলাদা নয়। শুরুটা অনেকটাই খারাপ হয় তাদের, তবে খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে তারাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ৫ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২ পয়েন্ট, তবে শেষের ৫ ম্যাচে ২ টো জয় সহ ৭ পয়েন্ট নিয়ে লীগ টেবিলে ইস্টবেঙ্গলের নীচেই বিরাজ করছে তারা।
যেরকম ব্রাইটের আসার পর ভাগ্য বদলেছে ইস্টবেঙ্গলের, সেরকমই জর্ডান মারের ফর্মে আসাই কিন্তু কেরালার ভাগ্য বদলানোর নেপথ্যে আছে। ১০ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করে গোলস্কোরারদের তালিকায় সপ্তম স্থানে আছেন তিনি। তবে মাথায় এটাও রাখতে হবে যে আলবিনো গোমেসও কেরালার দুর্গপ্রহরী হিসেবে যথেষ্ট বিশ্বস্ত, কারণ ২৭টি সেভ দিয়ে এখন তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন তিনি।
ইস্টবেঙ্গলের মতো শেষ ৫ ম্যাচে কেরালারও সংগ্রহ ২ টি জয়, তবে রেফারির কুনজরে এখনো পরতে হয়নি তাদের, সাথে যেরকম আধিপত্য নিয়ে ইস্টবেঙ্গল খেলেছে, সেরকম আধিপত্য নিয়েও খেলতে দেখা যায়নি তাদের। কিবু ভিকুনা প্রশিক্ষিত কেরালা আবার নিজেদের ১০ টি ম্যাচের মধ্যে ৭টি ক্ষেত্রেই লক্ষ্যভেদ করেছে, তাই ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এত কিছুর পরেও নীচের দিকে থাকা টিম গুলোর বিরুদ্ধে নড়বড়ে দেখিয়েছে কেরালাকে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত ড্রয়ের পর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও প্রথম পর্বে কার্যত পুরো পয়েন্ট মাঠেই রেখে আসার প্রবন্ধ হয়ে গেছিলো। শেষে ওড়িশার বিরুদ্ধে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারতে হয় তাদের। তাই হয়তো মাঠে বাড়তি মনোবল নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নিজেদের নিংড়ে দেবেন সাহাল-হুপাররা, কারণ লীগ টেবিলে সম্মানজনক জায়গায় যেতে হলে যে নীচের দিকে থাকা টিম গুলোর বিরুদ্ধে পুরো ৩ পয়েন্ট তুলে নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এসসি ইস্টবেঙ্গল সম্ভাব্য একাদশ: (৫-৪-১) দেবজিত, রাজু, নেভিল, ফক্স, অঙ্কিত, নারায়ণ, স্টেইনম্যান, মিলন, পিলকিংটন, ব্রাইট, হারমানপ্রিত।
কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি (Kerala Blasters Fc) সম্ভাব্য একাদশ : (৪-৪-১-১) আলবিনো, কোস্তা, কারনেইরো, সন্দীপ সিং, নিশু, ভিসেন্তে গোমেস, জিকসন, সাহাল, ফকুণ্ড পেরেইরা, হুপার, মারে।