এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম মুম্বাই সিটি: অণুবীক্ষণের নীচে কাটাছেঁড়া

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

৭ ম্যাচের অপরাজিত রথ থেমে গেলো এসসি ইস্টবেঙ্গলের, নেপথ্যে টেবিল টপার্স মুম্বাই সিটি এফসি আর গোলের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ। খেলার আগাগোড়া দখলে রাখলেও আবারও ডিফেন্সের মুহূর্তের ভুলের খেসারত দিতে হলো ফাউলার বাহিনী কে, তবে কাউকে দোষ না দিয়েই খেলার যাবতীয় খুঁটিনাটি দেখে নেওয়া যাক।

খাতায় কলমে ১ বনাম ১০ এর লড়াইয়ে আরেকটু হলেই লেটার মার্ক্স নিয়ে পাস করতে পারতো রবি ফাউলার প্রশিক্ষাধীন এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনায় বাধা সাধলো ডিফেন্সের অহেতুক ভুল আর দক্ষ স্ট্রাইকারের অভাব। ম্যাচটির প্রতিটা পদক্ষেপে মুম্বাইকে বাজিমাত করলেও কাজের কাজটি সেই মুম্বাইয়ের ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির মুর্তাডা ফল করে গেলেন। খেলা শেষে রেফারি শ্রী কৃষ্ণা বাঁশি বাজাতেই তাই ডাগ আউটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন লোবেরা, যেনো কোনো ভাবে ৩ টে পয়েন্ট পেয়েছেন। কি এমন করলো ইস্টবেঙ্গল, যে হেরেও চতুর্দিকে প্রশংসিত হচ্ছে তারা?

বল দখল

লোবেরার প্রশিক্ষণে মুম্বাই পাসিং ফুটবল মেলে ধরে খেলার দখল নেয়। সেই একই ভাবে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও খেলা শুরু করেছিল তারা, তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে এক চেটিয়া রাজত্ব করে লাল হলুদ বাহিনী। ৪৫ মিনিট পর ৩ ব্যাক সিস্টেম খেলিয়ে দুই প্রান্তে রফিক আর নারায়ণকে ব্যবহার করে খেলার দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন ফাউলার, আর তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে সফল হন তার ছাত্ররা। বারংবার আক্রমণ শানাতে থাকে লালহলুদ বাহিনী, কিন্তু হারমানপ্রিতের মতো অনভিজ্ঞ স্ট্রাইকার থাকার কারণে কাঙ্খিত গোল আর পাওয়া হয়েনা।

বল দখলের লড়াই। (সূত্র: আইএসএল এপ্লিকেশন)

এর পর ব্রাইট ও আমাদী হলোয়ে কে নামিয়ে নিজের শেষ চাল চালেন ফাউলার, আর ব্রাইটের নামার পর আরোই খেই হারিয়ে ফেলে মুম্বাই। একার হাতে দুই প্রান্ত পরিচালনা করলেন ব্রাইট, যেই কারণে মাঘমা আরো ফ্রি স্পেস পাচ্ছিলেন। বিপক্ষের ডিফেন্সকে চাপে রাখতে নিজের ভারী চেহারার ব্যবহার করে ২ বার গোলের সুযোগও তৈরি করেন আমাদী, কিন্তু আবারো গোলের সামনে সুযোগ নষ্ট করেন হারমান।

পাস

মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে ৫০০ এর উপরে পাস খেলেছে ইস্টবেঙ্গল, তবে আবারও সেই ব্যাক পাস, স্কোয়ার পাস ভর্তি। প্রথমার্ধে সুযোগ তৈরি করতে বার বার উইং চেঞ্জ করতে হচ্ছিলো খেলোয়াড়দের, যেই কারণে বেশির ভাগ পাসই স্কোয়ের পাস দিতে হচ্ছিলো। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ডাইরেক্ট ফুটবল উপহার দেয় ফাউলার বাহিনী, ঠিক যেমন প্রিমিয়ার লীগে দেখা যায়। নিখুঁত লংবল ধরে দুই প্রান্ত থেকেই ক্রস ভেসে এসেছিল কয়েকবার, আর মাঘমা এবং ব্রাইটই প্রাথমিক ভাবে মাঝমাঠ পরিচালনা করছিলেন মাত্তির চলে যাওয়ার পর। এমনকি দুয়েকবার নারায়ণ ও ব্রাইট কে দেখা যায় ওয়ান-টু খেলে আক্রমণ তৈরি করতে, উল্লেখযোগ্য একবার ব্রাইটের অসামান্য থ্রু পাসে গোলকিপার কে একা পেয়েও পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন হারমান।

পাসিং দক্ষতা, লালে ইস্টবেঙ্গল, নীলে মুম্বাই। (সূত্র: আইএসএল এপ্লিকেশন)

লংবল, ক্রস সমেত ৭৭ শতাংশ আকুরেসি রাখা মুখের কথা না, কিন্তু এই দল যে পাসিং দক্ষতা ও ডাইরেক্ট ফুটবলে উন্নতি করছে সেটা কালকের খেলা দেখেই বোঝা গেছে। কিছু ক্ষেত্রে মিলন সিং অযথা মিসপাস দিয়েছিলেন, তবে স্টেইনম্যান আবারও অসাধারণ ছিলেন যতক্ষন মাঠে ছিলেন। যেমন দুপ্রান্তে খেলোয়াড় খুঁজে বের করছিলেন, সেরকমই কয়েকবার পিলকিংটনের দৌড় মেপে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। পাসিং দক্ষতার দিক থেকে লিগে অন্যতম সেরা দল যে ইস্টবেঙ্গল সেটা বলা আর বাকি থাকেনা।

শট

লক্ষ্যে শট। লাল- ইস্টবেঙ্গল, নীল- মুম্বাই। (সূত্র: আইএসএল এপ্লিকেশন)
লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। লাল-ইস্টবেঙ্গল, নীল- মুম্বাই। (সূত্র: আইএসএল এপ্লিকেশন)

ইস্টবেঙ্গল গোলে শট নিয়েছিলো ৮ বার, আর মুম্বাই ১২ বার। এর মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের ৩ টি শট তিন কাঠির মধ্যে ছিলো, আর মুম্বাইয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫। উল্লেখ্য, ইস্টবেঙ্গলের ৩ টি গোলমুখী শটই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া হয় যেটা আবারও বুঝিয়ে দিচ্ছে ফাইনাল থার্ডে কতটা অসহায় লাল হলুদ শিবির, অন্যদিকে ৫ টির মধ্যে ৪ বারই বক্সের ভেতর থেকে শট নেন লে ফন্দ্রে, বুমৌসরা। এ ছাড়াও দুই দলই ৩ বার করে বক্সের ভেতরে শট নিয়েও তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেননি। ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে এই ৩ এর মধ্যে দুবারই শট নিয়েছিলেন পিলকিংটন। পিলকিংটনের থেকে যে এর থেকেও বেশি আশা করা হয় সেটা বলাই বাহুল্য।

টাচ

টাচের লড়াই। লাল- ইস্টবেঙ্গল, নীল- মুম্বাই। (সূত্র: আইএসএল এপ্লিকেশন)

প্রত্যাশা মতোই এই দিকেও ইস্টবেঙ্গলই এগিয়ে। মুম্বাইয়ের থেকে কার্যত দেড় গুণ বেশি টাচ ইস্টবেঙ্গলের, কিন্তু মুম্বাইয়ের অধিকতম টাচই বিপজ্জনক লাগছিলো, বিশেষত ইস্টবেঙ্গলের বক্সের ধারে কাছে যখন পাস খেলছিল মুম্বাই। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মুম্বাইয়ের শুধু ট্যাকল আর ক্লিয়ার করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলোনা। এই সময় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে ইস্টবেঙ্গল, এমনকি সেকেন্ড বলের দখল নেওয়ার চেষ্টাও করেন মাঘমা, পিলকিংটনরা, যদিও সেকেন্ড বল থেকে বিপজ্জনক সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয় লাল হলুদ বাহিনী। উল্লেখ্য, একবার ডিফেন্স থেকে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্স অব্দি চলে যান নেভিল, ভাগ্য সহায় থাকলে কাঙ্খিত গোলের দেখাও পাওয়া যেতো যদিনা নিজের শরীর ডান দিকে ছুঁড়ে নেভিলের গোল মুখী শট বাঁচাতেন অমরিন্দর সিং।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.