গোয়ার বিরুদ্ধে আজ ইস্টবেঙ্গলের ছিল আই এস এলের শেষ চারের টিকিট পাবার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার লড়াই। জিততেই হবে এমন একটা ম্যাচে কলকাতার দলটি পেনাল্টি পেলো প্রথম মিনিটেই, ত্রিশ মিনিট বিপক্ষ টিম খেললো দশ জনে। গোয়াকে জেমস দোনাশি এবং ইভান গঞ্জালেজের মতন দুজন গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী সেন্টার-ব্যাক আর ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজের মতন মাঝমাঠের দুরন্ত খেলোয়াড় ছাড়াই নামতে হয়েছিল এই ম্যাচে। আইএসএলে পদার্পণের প্রথম বছরেই শেষ চারের হাতছানি অপ্রত্যাশিত ভাবেই স্পষ্ট। তা সত্ত্বেও সেই সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলোনা লাল-হলুদ।
পেনাল্টি মিসের পরে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ প্রথমার্ধে প্রায় খেলা ধরতেই পারেনি। অজয় ছেত্রী অসংখ্য মিস পাস করেছে, আর তেমনি একটি দুর্বল পাস থেকে গোল করে গেলো সাঁইত্রিশ বছরের ইগর আঙ্গুলো। তা সত্ত্বেও পরিসংখ্যান অনুযায়ী অজয়-ই এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশী ট্যাকেল করেছে। রফিকের চোট ছিল কিনা বোঝা গেলোনা। কিন্তু ওকে বেশ গতিহীন লেগেছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। বক্সের আশেপাশে সিদ্ধান্তহীনতায় রফিকের সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলে যায়। খেলোয়াড় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ গোঁড়া রবি ফাউলার, পানীয়-বিরতির পরেই মহম্মদ রফিককে তুলে অঙ্কিত মুখার্জীকে নামান। গোয়ার খেলোয়াড়রা ভয়ংকর দ্রুততার সাথে জায়গা ছোট করে দিচ্ছিলো, যার ফলে মাঘমাও নিজের খেলাটা সম্পূর্ণরূপে খেলতে পারছিলোনা প্রথমার্ধে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্রাইট বল ধরলেই একাধিক প্লেয়ার তাকে ঘিরে ধরছিলো। স্টেইনম্যানকে খেলানো হচ্ছেনা সেই প্রশ্ন উঠলেও, জার্মান মিডফিল্ডারটি ওর শেষ দুটো ম্যাচে রক্ষণাত্মক ভাবে বেশ দুর্বল ছিল। আর এমনিতেই গোল করার লোকের জন্য হাহাকার যেই টিমে, সেখানে কি কোচ পিলকিংটনকে বসিয়ে আরো একটা বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার খেলবার বিলাসিতা দেখাতে পারেন?
অ্যান্টনি পিলকিংটন পেনাল্টি মিসের পর থেকে মনে হচ্ছিলো শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে দৌড়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ার্ধে এডু বেদিয়ার থেকে দুবার ফাউল জোগাড় করে তাকে মাঠের বাইরে পাঠালো বটে কিন্তু একজন ফরোয়ার্ডের কাজের কাজটা কিছুতেই পিলকিংটন করতে পারছেনা। জেজে এখনো পুরোপুরি ফিট নয়। বক্সে থাকলেও গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারছেনা। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে গোয়াকে চেপে ধরেছিলো ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘের মতন। বহু প্রত্যাশিত তৃতীয় কিটের মান রক্ষা করতে দাপিয়ে খেলতে থাকে লাল-হলুদ। রানাকে বসিয়ে আঙ্গুসানাকে নামিয়ে মাঝমাঠে আরো গতির সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন কোচ। ব্রাইট এনোবাখারে বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে অনবদ্য ফুটবল খেলে। কিন্তু বক্সে গিয়ে পায়ের জঙ্গলে সব তাল-গোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। তার কারণ পিলকিংটনের বক্সের ভিতর টার্ন নিয়ে শট মারার চেষ্টা গোয়া রক্ষণ সামলে নিয়েছে প্রতিবার। জেজের পরিবর্ত হিসেবে তিয়াত্তর মিনিটে নেমে হার্মানপ্রীত দুবার গোল করার খুব কাছাকাছি পৌঁছলেও মাথা ঠান্ডা রেখে জালে বল জড়াবার আনন্দ তার এখনো পাওয়া হলো না। উল্লেখ্য হার্মানপ্রীত আই-লীগেও চোদ্দ ম্যাচে খেলে কোনো গোল করেনি। যেখানে এই ম্যাচটি জিততেই হতো সেখানে আঙ্গুলোকে তুলে নেবার পরেই একজন ডিফেন্ডার বসিয়ে অ্যারন হামাদি হ্যালোওয়েকে কেন নামানো হলোনা সেই প্রশ্ন উঠছেই। সাতাশি মিনিট একটু বেশি দেরি নয় কি!
এবার আসি রক্ষণভাগের কথায়। পেনাল্টি অর্জন করা থেকে, প্রান্ত বরাবর দৌড়, সেন্টার রাখা, কর্নার তোলা এবং রক্ষণ সামলানো সব বিভাগেই নারায়ণ দাস আজ বেশ ভালো খেলেছে। ড্যানি ফক্স এবং স্কট নেভিল নিজেদের কাজটা ধারাবাহিক ভাবে করে চলেছে। কিন্তু রানা ঘরামী বেশ মন্থর। বিশেষ করে ‘থ্রু-বল’গুলোতে। সমস্যা হলো বিভিন্ন কারণে ফাউলারের হাতে উপযুক্ত পরিবৰ্তন নেই। দেবজিৎ যথারীতি দুর্দান্ত।
এফ সি গোয়ার বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই ব্রাইট ‘ম্যান-অব-দ্য -ম্যাচ’। গৌড়দের দেখলেই যেন তেতে ওঠেন এই তরুণ নাইজেরীয় ফুটবলার। যদিও দুটি ম্যাচের একটিতেও খুব কাছাকাছি এসেও তার দলের তিন পয়েন্ট জেতা হলোনা। লিভারপুলের কিংবদন্তী ফুটবলার ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ভাঙাচোরা দল নিয়ে লড়াই করছেন, আশা দেখিয়েছেন, তার স্ট্রাইকাররা নখদন্তহীন, কিন্তু লক্ষ -লক্ষ সমর্থকদের আবেগের উত্তর কিন্তু সাহেবকেই দিতে হবে। যুক্তির ঊর্ধ্বে যে শেষ চারের অঙ্ক আর অঙ্ক না মেলার হতাশা।