এস সি ইস্টবেঙ্গল তাদের হিরো আইএসএলের নবম খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল এফ সি গোয়া-র। গত খেলায় জয় লাভের পর দলের আত্মবিশ্বাস বেশ ভালো জায়গাতেই ছিল। অপরদিকে গোয়া ও তাদের আগের দুটি খেলা জিতে এসে পর পর তৃতীয় জয়টি তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর ছিল। খেলার আগেই ইস্টবেঙ্গল কিছুটা ধাক্কা খায় তাদের আগের খেলার ‘হিরো অফ দা ম্যাচ’ পিলকিংটন চোট পেয়ে যাওয়ায়। আরেক নির্ভরযোগ্য খেলোয়ার মাঘোমার ও সামান্য চোট থাকায় ঝুঁকি না নিয়ে কোচ ফাউলার তাঁর প্রথম একাদশে বেশ কিছু বদল আনেন। দলে এই মরশুমে প্রথম বারের জন্যে অন্তর্ভুক্তি ঘটে হারমানপ্রীত ও অ্যারনের। তার সাথে রাইট ব্যাকে অংকিত মুখার্জি ও প্রথম শুরু করেন। বাঁ দিকে ফিরে আসেন নারায়ণ দাস। ইস্টবেঙ্গল খেলা শুরু করে ৫-২-৩ ছকে যা আক্রমনের সময় হয় ৩-৫-২। উল্টোদিকে গোয়া তাদের আগের মরশুমের ছকই ধরে রেখেছে এই মরশুমেও। তারা শুরু করে ৪-২-৩-১ ছকে কিন্তু তা খেলার মধ্যে হয়ে যায় ৩-৩-১-৩।
খেলার শুরু থেকে গোয়া নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে ছোট ছোট পাসে খেলতে থাকে। তাদের লক্ষ্য ছিল মাঝমাঠে পাস খেলে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের মাঝখানে টেনে দুটো উইং খালি করা যেখান থেকে বক্সে ক্রস রাখা যাবে।এটা আন্দাজ ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ সামলাচ্ছিলো মাঝমাঠে পাঁচজনের একটা ব্লক তৈরি করে।
অ্যারন বিপক্ষের মাঝখানের স্টপারকে মার্ক করছিলেন আর দু-দিকের দুই উইঙ্গার ব্রাইট আর হারমানপ্রীত দুটো হাফ স্পেসকে কভার করছিলেন। অ্যারন নিজের কভার শ্যাডোয় রাখছিলেন প্রিন্সটনকে।
মূল লক্ষ্য ছিল, বল মাঝমাঠ থেকে উইংয়ের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া আর সেখানে দুই সাইডব্যাককে মার্ক করছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দুই সাইডব্যাক।
অ্যারনের মার্কিং এড়াতে এদু খেলার শুরুতেই সরে আসেন বাঁ দিকে। যেহেতু ইস্টবেঙ্গল বিশেষ হাই-প্রেস করছিলো না আর মূলত ব্লকটা ছিল একদম মাঝমাঠে, তাই তিনি অনেকটা জায়গা পাচ্ছিলেন। যদিও তাতে খুব সুবিধে হয়নি কারণ তাঁর পাসিং চ্যানেলগুলো খুব ভালো ভাবে বন্ধ করা হয়ে ছিল।
মাঝখান দিয়ে এগোবার জায়গা না থাকায় গোয়া নিজেদের ছক বদল করে। এবার তারা চেষ্টা শুরু করে দুই উইংয়ে ওভারলোড করে মাঝখানটা ফাঁকা করার।
ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধে মনোনিবেশ করেছিল মূলত রক্ষনেই। আক্রমণে তারা বিশেষ লোক বাড়ায়নি।একমাত্র অ্যারনকে সামনে টার্গেট ম্যান হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন কোচ ফাউলার। অ্যারন এই পর্বে কয়েকটি বল ভালো স্ক্রীন করলেও বাকিদের সাথে তাঁর দূরত্ব অনেকটা বেশি হওয়ায় আক্রমণ এগোয়নি। কিন্তু তিনি বেশ কয়েকটি ফ্রি-কিক জোগাড় করে নেন সুবিধেজনক জায়গায়। যদিও জাইরু না থাকায় সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু তার মধ্যেও নারায়ণ এর একটি ফ্রি-কিক ও রাজুর একটি থ্রো থেকে গোল হওয়ার মতো দুটি সহজ সুযোগ এসে গিয়েছিল।
কোচ ফাউলার হয়তো ভেবেছিলেন প্রথমার্ধে রক্ষণ সামলে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমনে যাবেন। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা বিশাল ধাক্কা খায় ফক্স আচমকা লাল কার্ড দেখে নেওয়ায়। দশজনের ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধের মতোই শেপ ধরে রাখে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
৬৫ মিনিটের মাথায় ফাউলার নিয়ে আসেন মাঘমাকে। গোয়া প্রথম থেকেই ব্রাইটকে কড়া মার্কিং এ রেখেছিলো। তিনি বল ধরলেই প্রিন্সটন ও এদু ট্যাকল করছিলেন বা ফাউল করছিলেন। তাই ব্রাইট প্রথমার্ধে বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি। মাঘমাকে পাশে পেয়ে এতক্ষন ডাবল মার্কিং এ থাকা ব্রাইট হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নিজের জাত চেনাতে শুরু করেন এবং সম্ভবত এই আইএসএলের সেরা গোলটি করেন। দুর্ভাগ্য তার পর পরই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে একটি গোল হজম করতে হয়। সারা খেলাতে বোধহয় এই একবারই ইস্টবেঙ্গলের শেপ নষ্ট হয়েছিল।
এই খেলায় ইস্টবেঙ্গলের সেট পিস রক্ষণেও বেশ উন্নতি দেখা গেছে। একবার ছাড়া কখনোই এফ সি গোয়া সেট পিসে বিশেষ বিপজ্জনক হতে পারেনি।
পরিশেষে বলা যায়, একটি দারুন ট্যাক্টিক্যাল খেলা যা আরো উচ্চতায় পৌছালো না রেফারিং -এর ভুলে। এই খেলা বিশেষ করে ব্রাইটের গোলটি ইস্টবেঙ্গল দলটিকে আরো আত্মবিশ্বাস যোগাবে আগামী দিনে সেটা আশা করাই যায়।