কথায় আছে না, শত্রু বুঝে অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়? ঠিক সেই কথারই মান রাখলেন শ্রী রবার্ট বার্নার্ড ফাউলার, আমাদের প্রিয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হেড কোচ। গোয়ার অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ বিভাগকে নাস্তানাবুদ করতে যেভাবে দল সাজিয়েছিলেন ফাউলার, তারই সৌজন্যে আজ তিলক ময়দান থেকে ১ পয়েন্ট ঘরে তুলতে পারলো ইস্টবেঙ্গল। হ্যাঁ, অনেকেই বলবেন দেবজিত সেভজিত না হয়ে উঠলে গোলের বন্যা বইত মাঠে, তবে মাথায় রাখবেন আরেকটা কথা আছে, ভাগ্য সাাহসীদের সাথে থাকে।
অন্য দিকে খেলোয়াড়দের ওপরও নির্ভর করে কোচের ট্যাকটিক্স তারা মাঠে কতটা লাগু করতে পারবে, আর ইস্টবেঙ্গল দলের যা দশা তাতে এটা ভাবা উচিতই না যে ফাউলার সাহেবের বলা সব কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করা হবে। তবে আজ খেলোয়াড়দের অদম্য জেদের সামনে পরাস্ত হলো গোয়ার যাবতীয় পরিকল্পনা। আসুন দেখে নেওয়া যাক আজ কি মন্ত্রে দল সাজিয়েছিলেন ফাউলার।
ফাউলারের মন্ত্র
প্রথমেই বলে রাখী ১ সপ্তাহের মধ্যে মোট ৩ টি ম্যাচ খেলতে হবে লাল হলুদদের, তার মধ্যে প্রথম ম্যাচ লাস্ট বয় ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে ছিল যেখানে পূর্ণশক্তির দল নামিয়ে জেতার লক্ষ্য ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য না রাখাটাই স্বাভাবিক ছিল ম্যানেজমেন্টের জন্যে। দ্বিতীয় ম্যাচ শক্তিশালী গোয়ার বিরুদ্ধে খেললো লাল হলুদ ব্রিগেড, আর সামনের ম্যাচের দিকে যদি তাকান যেটা বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ৯ তারিখ, তাহলে বুঝবেন টানা ৩ ম্যাচ হেরে তলানিতে থাকা বেঙ্গালুরুর আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে আবারও ৩ পয়েন্ট লক্ষ্য করবে ফাউলার, আর তার জন্যই গোয়ার বিরুদ্ধে “রোটেশন” পদ্ধতি কাজে লাগানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। তবে গোয়ার রথ থামানোর জন্যে তো সঠিক পরিকল্পনা আর সেই হিসাবে সঠিক খেলোয়াড়ও দরকার ছিল, কিন্তু কি এমন করলেন ফাউলার যে প্রথম একাদশ না নামিয়েও বাজিমাত করলেন তিনি?
প্রথমেই গোয়ার প্রাণ আংগুলো কে আটকানোর জন্যে ড্যানিয়েল ফক্স আর স্কট নেভিলকে দায়িত্ব দেন তিনি। নেভিলও যেনো আজ নিজের কোচের ভরসা রাখলেন, ফক্সের লাল কার্ড দেখার পর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করে ডিফেন্স লাইনকে একা পরিচালনা করলেন। তবে দুই সেন্টার ব্যাক একজনকে দেখতে গেলে বাকিদের কি হবে? গোয়ার ফ্রি ফ্লোয়িং ফুটবল আটকাতে তাই ৩ সেন্টার ব্যাকের ফর্মশনে চলে যান তিনি, দুই বিদেশির সাথে রাজু কে জুড়ে দেন। কিন্তু গোয়ার মাঝমাঠেও যে তাবড় তাবড় নেতা আছে- এডু বেদিয়া, ব্রান্ডন, জর্গে মেন্ডোজা, এদের কেও আটকাতে ২ মিডফিল্ডারের স্ক্রিনিং ব্যবহার করেন ফাউলার। ফর্মে থাকা স্টেইনম্যানের সাথে মিলন সিংকে জুড়ে ব্যাকলাইনের সামনে একটা স্ক্রিন করে দেন তিনি, আর আক্রমণকে সজাগ রাখতে দুই উইং ব্যাক নারায়ণ দাস আর অঙ্কিত মুখার্জিকে আনা হয়। মূলত কাউন্টার এট্যাক দিয়েই লক্ষ্যভেদ করার পরিকল্পনা ছিল ফাউলারের তাই নাম্বার ১০ পজিশনে ব্রাইট কে ব্যবহার করেন। এই পজিশনটা বেশ মজাদার। নিজেকে ফ্রি রেখে ব্রাইটের লক্ষ্য ছিল মাঝমাঠ আর আক্রমণের সাথে যোগাযোগ রাখা, আর একক দক্ষতায় যেমন চোখ ধাঁধানো স্কিল করলেন, সেরমেই এই মরসুমের সেরা গোলটাও করে গেলেন নাইজেরিয়ান মিডিও। গোয়ার ৩ প্লেয়ারদের কাটিয়ে গোলকিপার নাওয়াজকে ইনসাইড-আউটসাইড ডজ করে বিশ্বমানের একটা গোল করলেন ব্রাইট।
যদিও এক মিনিটের মধ্যেই গোল শোধ দেয় গোয়া, তবে তাদের পারফরম্যান্স নিরিখে কম করে এই ড্র গোয়ার প্রাপ্য ছিল। ৯ টি সেভ করে আবারও নিজের জাত প্রমান করলেন দেবজিত, তবে অনেক জায়গায় খামতি এখনো থেকে গেছে।
ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতা
- রক্ষণ বিভাগ কিছুটা জমাট হলেও সাইড ব্যাকরা এখনো দুর্বল। খুব সহজেই দুই উইংয়ে বল পাচ্ছিলেন গোয়ার খেলোয়াড়রা, আর প্রেস করতে কোনো ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড় ধারে কাছে আসছিলনা, বাধ্য হয়ে স্টেইনম্যান আর মিলন সিং কেই এক্সট্রা ওয়ার্কলোড নিতে হচ্ছিল।
- কাউন্টার আটকের বারবার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ ইস্টবেঙ্গল, মূলত অনভিজ্ঞ ভারতীয় ব্রিগেডই বার বার বল হারাচ্ছিলো। মিলন সিং, অঙ্কিত দের মতো বাকিরাও গুছিয়ে প্রতিআক্রমন করতে ব্যর্থ।
- আমাদী হলোয়ে নিজের শক্ত শরীরের সদ্ব্যবহার করা জানলেও গোলের সামনে থ্রেট হয়ে উঠতে পারেননি। দুবার সহজ হেডের সুযোগও হাতছাড়া হয়।
- নিজেদের বক্সের বাইরে সেকেন্ড বল রিসিভ করার জন্যে খেলোয়াড়দের পাওযাই যাচ্ছেনা। মানছি পুরো ডিফেন্সিভ মেন্টালিটি নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল, তবে বক্সের বাইরে থেকে শট নেওয়া আটকাতে বা পাসিং অপশন কম করতে প্রেস করা খুব জরুরি, আর এই জায়গায় ডাহা ফেল ফাউলার ব্রিগেড।
- সুরচন্দ্র সিং। এই একটা নামই যেনো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে দুঃস্বপ্ন। সত্যি, পরিবর্ত হিসেবে নামার পর একটা ক্রস করা ছাড়া আর কিছুতেই চোখে পড়েনি সুরচন্দ্রকে, আর ডিফেন্সিভ ওয়ার্কলোড নিতেই পারেননি তিনি।
তবে শত বাধা কাটিয়ে টানা ৪ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। দিনের পর দিন ক্রমাগত খেলার উন্নতি ঘটছে। দেখার অপেক্ষায় রইলাম বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে আগামী ৯ তারিখ কি চমক অপেক্ষা করে আছে। জয় ইস্টবেঙ্গল।