এস সি ইস্টবেঙ্গল তাদের হিরো আইএসএল অভিযানের অষ্টম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওড়িশা এফ সি-র। যেহেতু দুটি দলই এর আগে কোনো জয় পায়নি, তাই দুপক্ষই তাদের মরশুমের প্রথম জয়টি তুলে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। কোচ রবি ফাউলার যদিও আগের খেলায় ৪-১-৪-১ ছকে দল নামিয়েছিলেন, কিন্তু এই ম্যাচে তিনি তাঁর দলকে সাজান ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। এর মূল কারণ হলো ওড়িশা খেলে মূলতঃ ৪-৩-৩ ছকে। কাজেই মাঝমাঠের দখল পাওয়াটা জরুরি ছিল। ডিফেন্সে রাজু এই মরশুমে প্রথমবার নামলেন রাইট ব্যাকে। পিলকিংটন সামনে টার্গেট ম্যান আর তার একটু পেছনে টোম্বা।
এই খেলায় শুরু থেকেই দুই দলই আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়, যদিও ইস্টবেঙ্গলের ঝাঁঝ ছিল অনেকটাই বেশি। পিলকিংটন আগের ম্যাচে তাঁর নতুন ভূমিকায় বিশেষ সুবিধে করতে না পারলেও এদিন শুরু থেকেই বেশ নড়াচড়া করছিলেন। বিশেষ করে উইংয়ের দিকে সরে যাওয়ায় তাঁকে মার্ক করতে সমস্যা হচ্ছিলো ওড়িশার রক্ষণভাগের। বাঁ দিক থেকে মাঘমার দৌড় আর তার সাথে পিলকিংটনের পাসিং কম্বিনেশন পরস্পর বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলো।
উল্টোদিকে ওড়িশা চেষ্টা করছিলো ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের বাঁ দিকটা আক্রমণ করার। বিশেষ করে জেরি মূলতঃ লেফট ব্যাক আর লেফট স্টপারের মাঝখানের হাফ স্পেস দিয়ে ভিতরে ঢুকে আসছিলেন। যদিও জাইরু আর ফক্স নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কম রাখায় আর জাইরু নিজের গতি দিয়ে ফাঁকফোকড় গুলো ভালোভাবে ভরাট করে দেওয়ায় সেগুলো খুব একটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠেনি প্রথমার্ধে। এই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের মূল সমস্যা হচ্ছিলো মিলনকে নিয়ে। তাঁর স্লথ নড়াচড়া আর খুব সহজেই বিপজ্জনক জায়গায় বিপক্ষের পায়ে বল তুলে দেওয়ার প্রবণতা কোচ ফাউলারের অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
মিলনের এই ভুলগুলো ছাড়া মোটামুটিভাবে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সিভ শৃঙ্খলা ভালোই ছিল, যার ফলস্বরূপ তারা দুই গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে সাজঘরে যায়।
বিরতির পরে ছবিটা আমূল বদলে যায়। ওড়িশা কোচ ব্যাক্সটার দিক পরিবর্তন করে জেরিকে নিয়ে আসেন ডানদিকে আর সেখান থেকে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের কাঁপুনি শুরু হয়। ডানদিকে রাজু জেরির গতির সাথে পাল্লা দিতে হিমশিম খেতে থাকেন। তার সাথে ওড়িশা লেফট ব্যাক বার বার ওভারল্যাপে উঠে আসায় প্রায়ই রাজুকে ২ বনাম ১ সিচুয়েশনে পরে যেতে হয়।
এই সময় ভাগ্য ইস্টবেঙ্গলের সহায় না হলে ওড়িশা ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনতেই পারতো। মিলন এই সময়ে প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলেন। বিরতিতে ফাউলার টোম্বার বদলে সুরচন্দ্রাকে নামিয়েছিলেন উইংয়ে আক্রমণ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। উল্টে, তোম্বা উঠে যাওয়ায় মাঝমাঠটা পুরোপুরি ভাবে ওড়িশার দখলে চলে আসে। মৌরিসিও এই লগ্নে প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। মৌরিসিও, জেরি, কোল আর অনুর কম্বিনেশন খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলো মাঝে মাঝেই। মৌরিসিও বিটুইন টি লাইন নেমে আসছিলেন আর রাজু এবং নেভিলের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলেন জেরি।
উপায় না দেখে কোচ ফাউলার মিলনকে তুলে হর্মোনপ্রীতকে নামান। তাকে নিয়ে যান পিলকিংটনের জায়গায় আর পিলকিংটন কে নামিয়ে আনেন মাঝখানে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে। পিলকিংটন শুরুতে একটু সমস্যায় পড়ছিলেন জেরির গতি কে সামাল দিতে। তাঁকে দুবার ফাউলও করতে হয়. কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি মানিয়ে নেন। এর সাথে তাঁর ছোট ছোট পাস খেলে বল নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা, খেলার রাশ আবার কিছুটা হলেও ইস্টবেঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে আনে। যদিও ওড়িশা নিরন্তর আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে।
এই সময়েই ফাউলার বের করেন তাঁর তুরুপের তাসটি। আগমন ঘটে ব্রাইট এনোবাখরের। ব্রাইট এসে খেলার গতিটি শ্লথ করে দেন যেটা এতক্ষন হচ্ছিলো না। এর ফলে ওড়িশা ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যায়। শেষ লগ্নে ব্রাইটের গোলটি ম্যাচের ভাগ্য পুরোপুরি ভাবে নির্ধারণ করে দেয়।
শেষে বলা যায়, এই জয়টি খুবই জরুরি ছিল এস সি ইস্টবেঙ্গলের জন্য। ব্রাইটের খেলা যেমন আশা জাগাবে, তেমনি মাঝমাঠে ব্লকিং-এর অভাব আর সেটপিস রক্ষণের দুর্বলতা চিন্তাও বাড়াবে কোচ রবি ফাউলারের। এর পরের ম্যাচে এগুলোর কি সমাধান বেরোয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে লাল হলুদ জনতা।