ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের (Shree Cement) চুক্তিজট মেটার কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। গত ২রা আগস্ট, সোমবার রাজ্য সরকারের “খেলা হবে” অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Chief Minister Mamata Banerjee)। নেতাজি ইন্ডোর (Netaji Indoor Stadium) থেকে ফেসবুক লাইভে সরাসরি সম্প্রচারিত সেই অনুষ্ঠানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ক্লিপিংস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের মুখ থেকে চুক্তি নিয়ে সমস্যা মেটার আশ্বাসবাণী শোনার পর কিছুটা হলেও স্বস্তির আবহ ছিল লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে।
কিন্তু ২৪ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই কাহানিতে নতুন টুইস্ট। ২১শে জুলাই লেসলি ক্লডিয়াস সরণীতে চুক্তি জট মেটানোর দাবিতে হাজার হাজার লাল হলুদ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের পর ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, চুক্তি নিয়ে এই সমস্যাটি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী অবগত এবং তিনি বিষয়টি দেখছেন। তারপর পেরিয়ে গেছে দুই সপ্তাহ।
এরমধ্যে উপায়ান্তর না দেখে ক্লাবের প্রাক্তন সচিব তথা বিরোধী শিবিরের বিশিষ্ট আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্তের (Lawyer Parthasarathi Sengupta) শরণাপন্ন হয় বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। দায়িত্ব দেওয়া হয় মধ্যস্থতাকারীর। তিনি জানিয়েও দিয়েছেন, টার্মশিট এবং মূল চুক্তিপত্রের কোনও মৌলিক পার্থক্য নেই। ফলে গত কয়েকমাস ধরে চুক্তিপত্রের পার্থক্যের যে দাবী বারংবার কর্তারা করে এসেছেন, তাতেও কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন পার্থসারথিবাবু। ফলে ইতিমধ্যেই একদফা মুখ পুড়েছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের (East Bengal) বর্তমান এক্সিকিউটিভ কমিটির।
তবে গতকাল নেতাজী ইন্ডোর থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঝামেলা মেটানোর স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার পর কর্তাদের টনক নড়লেও রণে ভঙ্গ দেওয়ার কোনও লক্ষণ নেই লাল-হলুদ কর্তাদের। সমর্থকদের ইস্টবেঙ্গল কর্তারা এতদিন ধরে বলে এসেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তি বিতর্কের বিষয়টি দেখছেন। অথচ গতকালের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তড়িঘড়ি কার্যকরী কমিটির সভা ডেকেছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। সভা শেষে কর্তাদের নতুন শর্ত, তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তিকে স্বাগত জানালেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর ব্যস্ত সময়সূচীর মধ্যেও সময় চাইলেন তাঁরা।
একথা বলাই বাহুল্য, চারপাশের সাঁড়াশি চাপে বেশ হাঁসফাঁস করছেন কর্তারা। এতদিন জলঘোলা করার পর, ব্রাইট, স্টেইনম্যান, দেবজিৎ মজুমদার সহ একের পর এক ফুটবলার অন্য দলে চলে যাওয়ার পর, এমনকি কলকাতা লীগের সূচীও প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে আরও কত মিটিং, আরও কত নতুন নতুন মানুষের দ্বারস্থ হয়ে, আরও কত মানুষের কাছে দরবার করার পর, চুক্তি নাটকে আরও কত নতুন চরিত্রের অন্তর্ভুক্তির পর রণে ভঙ্গ দেবেন কর্তারা, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে এখন সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সামনে একের পর এক দরজা ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেষ ভরসা মুখ্যমন্ত্রী।
এখন দেখার, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়। ততদিন অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য।